মহামারীর খাঁড়া কাটিয়ে বাজেটের আয়োজন

করোনাভাইরাস মহামারীর খাঁড়ায় গেল দুই বছরের অনাড়ম্বর আয়োজনের পর এবার কিছুটা পুরনো রঙ ফিরছে বাজেট উপস্থাপনায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2022, 04:46 AM
Updated : 9 June 2022, 08:13 AM

অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন। এটি হবে বাংলাদেশের ৫১তম এবং মুস্তফা কামালের চতুর্থ বাজেট।

কোভিড মহামারীর ধাক্কা সামলে ওঠার সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ বিশ্ব বাজারকে অস্থির করে তুলেছে। খাদ্য আর জ্বালানির দামে ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে ক্রমশ তেজী হতে থাকা ডলার অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। মূল্যস্ফীতি যেভাবে বাড়ছে, তাতে অনেক দেশ মন্দার কবলে পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ার করছে বিশ্ব ব্যাংক।

নানামুখী চাপের মধ্যেও দেশকে মহামারীপূর্ব উন্নয়নের ধারায় ফিরিয়ে নিতে এবারের বাজেট পরিকল্পনা সাজিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

বাজেটের আগের দিন বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সঙ্গত কারণেই এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষি খাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বাজেটে প্রাধিকার পাবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।

‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামের এবারের বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে।”

সাধারণত বাজেট পেশের দিনটি সংসদ ভবন জুড়ে থাকে উৎসবের আমেজ। কিন্তু গত দুই বছরের চিত্র ছিল ভিন্ন। সংসদ ভবন এলাকায় প্রবেশে ছিল কড়াকড়ি। আর মূল ভবনে স্বল্প সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করেছেন।

অধিবেশনেও চিরচেনা সেই উৎসবের আমেজ দেখা যায়নি দুই বছর। সর্বত্র ছিলো কঠোর সতর্কতা। সংক্রমণ এড়াতে জনসমাগম ছিল নিয়ন্ত্রিত।

Also Read: মহামারীর পৃষ্ঠা উল্টে মুস্তফা কামাল আসছেন ‘উন্নয়ন অধ্যায়ে’ ফেরার বাজেট নিয়ে

এমনিতে বাজেট উপস্থাপনের সময় সংসদ অধিবেশন কক্ষ পূর্ণ থাকে। তবে গত বছর সংসদে ছিলেন ১৭০ জনের মত আইনপ্রণেতা। তার আগের বছর উপস্থিতি ছিল আরও কম, ৭৮ জন।

তবে এবার অধিবেশন কক্ষে সংসদ সদস্যদের সংখ্যা বেশি থাকবে। গত দুই বছর তালিকা করে আইনসভার সদস্যদের সংসদের বৈঠকে বসানো হয়েছিল। এবার করোনাভাইরাস পরীক্ষায় নেগেটিভ সনদ পাওয়া সব সংসদ সদস্যই অধিবেশন কক্ষে থাকবেন।

তবে কোভিড-১৯ নিয়ে সতর্কতা একেবারে উঠে যায়নি। গত ৫ জুন শুরু হওয়া বাজেট অধিবেশনে প্রবেশের ক্ষেত্রে ‘কোভিড নেগেটিভ’ সনদ বাধ্যতামূলক।

গত দুই বছর বাজেট অধিবেশনের সময় অধিবেশন কক্ষে সংবাদর্মীদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। গত বছর সংসদ ভবনে ঢোকার অনুমতি মিলেছিল। এবার সেই বিধিনিষেধ নেই।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় শুরু হবে সংসদের বৈঠক। অধিবেশন শুরুর পরেই অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করবেন।

অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল ২০২০ সালে বাজেট বক্তৃতা দিতে সময় নিয়েছিলেন ৪৭ মিনিট। গত বছর এক ঘণ্টার বেশি সময় বাজেট উপস্থাপন করা হলেও নিজে পাঠ করেছেন সব মিলিয়ে ১৫ মিনিটের মত। বাকি সময় পাওয়ার পয়েন্ট এবং অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনায় তার বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।  

এবার অর্থমন্ত্রী গতবারের চেয়ে বেশি সময় নেবেন বলে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে অধিবেশন দুই ঘণ্টার কম সময় মত চলতে পারে তারা জানিয়েছেন।

গত দুই বছরের মত এবারও বাজেট উপস্থাপনে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আগে বাজেট পেশের সময় কূটনীতিক, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকতেন। গত দুই বছরের মত এবারও কাউকে ডাকা হয়নি।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বরাবরের মতই সংসদে উপস্থিত থেকে বাজেট উপাস্থাপনা দেখবেন বলে বঙ্গভবন থেকে জানানো হয়েছে। অধিবেশন শুরুর আগে প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাক্ষর করবেন তিনি।

এর আগে দুপুরজাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে ওই বাজেট অনুমোদন দেওয়া হবে। বাজেট পেশের আগের সব আনুষ্ঠানিকতা সারতে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বেলা সাড়ে ১১টায় লাল ব্রিফকেস হাতে সংসদ ভবনে উপস্থিত হন।

সংসদ ভবন (ফাইল ছবি )

সংসদে কার্যউপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাজেট পেশের পর ১২ জুন ২০২১-২২ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা হবে। ১৩ জুন পাস হবে সম্পূরক বাজেট। এরপর নতুন অর্থবছরের বাজেটের ওপর আলোচনা করবেন সংসদ সদস্যরা।

২৯ জুন নতুন অর্থবছরের অর্থবিল পাস হবে। ৩০ জুন পাস করা হবে বাজেট, তা কার্যকর হবে জুলাইয়ের প্রথম দিন। 

গত দুই বছর বাজেট অধিবেশন সংক্ষিপ্ত হলেও এবার শুক্র ও শনিবার বাদে সব দিন সংসদের বৈঠক বসবে। গত বছর সব মিলিয়ে ১২ কার্য দিবস চলে সংসদ অধিবেশন। তার আগের বছর ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম অধিবেশন ছিল নয় কার্যদিবসের।

প্রতিবছর সংসদ ভবনের সাত তলায় গণসংযোগ শাখা থেকে গণমাধ্যম কর্মীদের বাজেটের নথিপত্র বিতরণ করা হয়। গত বছর সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় নিচের টানেলে বাজেটের নথি বিতরণ করা হয়েছিল। ২০২০ সালের মত এবছর নথি দেওয়া হবে সংসদ ভবনের বাইরে মিডিয়া সেন্টার থেকে।

অর্থমন্ত্রী সংসদে বাজেট উপস্থাপন শুরু করলে সংসদ সচিবালয়ের গণসংযোগ বিভাগ গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে বাজেটের নথি বিতরণ শুরু করবে।

জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের পর অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে (www.mof.gov.bd) বাজেটের সব তথ্য ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল প্রকাশ করা হবে।

সেখান থেকে বাজেট ডকুমেন্ট ডাউনলোড করে পড়া যাবে এবং ‘ফিডব্যাক ফরম’ পূরণ করে বাজেট সম্পর্কে মতামত ও সুপারিশ দেওয়া যাবে।

বাজেট উপস্থাপনের পরের দিন শুক্রবার বেলা ৩টায় ওসমানী মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থমন্ত্রী।