স্বাস্থ্যে, টিকায় টাকা ‘কোনো সমস্যা নয়’

বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ যাই থাক, প্রয়োজনে অর্থের যোগান দিতে কোনো ‘সমস্যা হবে না’ বলে আশ্বাস এসেছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2021, 10:19 AM
Updated : 4 June 2021, 11:36 AM

অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, এক বছরে সরকার যত মানুষকে টিকা দিতে পারবে, সেই টাকার বরাদ্দ বাজেটে আছে।

আর কৃষি মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, প্রয়োজনে অন্য খাত থেকেও টাকা নিয়ে স্বাস্থ্য খাতে দেওয়া যাবে, এ নিয়ে কোনো ‘সমস্যা নেই’।

অর্থমন্ত্রী  আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন।

মহামারীর মধ্যে তার এ বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। পাশাপাশি ‘মহামারীকালে জরুরি প্রয়োজন মেটাতে’ ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহমারীর বাস্তবতায় স্বাস্থ্যের এই বরাদ্দ প্রত্যাশা কিংবা প্রয়োজন, কোনোটার সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারের জন্যও কোনো দিক নির্দেশনা তারা বাজেটে পাননি। 

বাজেটের পরদিন অর্থমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক। অর্থমন্ত্রী অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবকে এ বিষয়ে উত্তর দিতে অনুরোধ করেন।

আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, স্বাস্থ্য খাতে গত বছরের মূল বাজেটে যে বরাদ্দ ছিল, এবার তা ১৩ শতাংশের মত বেড়েছে।

“বরাদ্দ নিয়ে কোনো সমস্যা নাই। এক বছরে যে টিকা আমরা দিতে পারব, তার চেয়ে বেশি টাকা বরাদ্দ আছে। সব মিলিয়ে ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। প্রয়োজনে অন্য খাত থেকেও নেওয়া যাবে।

আর স্বাস্থ্যখাতে কেনাকাটায় স্বাচ্ছ্বতা আনার জন্য উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব।

এ সময় কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “আজকে আমি সকল মিডিয়াতে দেখেছি যে, স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ কম, স্বাস্থ্য খাতকে সেইভাবে অ্যাড্রেস করা হয়নি। আমি সকল পত্রিকা পড়েছি।”

মহামারীর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের কাছে স্বাস্থ্যই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, “সারা পৃথিবীতে এটা যেভাবে মোকাবেলা করছে, আমি মনে করি সরকার সেইভাবেই এটা মোকাবেলা করবে। অর্থ কোনো সমস্যা এখানে হবে না।”

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি ‘মজবুত’ এবং প্রয়োজনীয় মুহূর্তে সরকার অর্থের ব্যবস্থা করতে ‘সক্ষম’।

“আমাদের ফরেইন এক্সচেঞ্জের কোনো ঘাটতি নেই। বরং এটা অনেক বেশি হয়েছে। এমনিতেই অর্থের কোনো সমস্যা নেই। বৈদেশিক ঋণও আমরা ঠিকভাবে পরিশোধ করছি। সেখানেও কোথাও আমরা পিছিয়ে নেই।

“এ প্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে বার বার একটা কথা অর্থমন্ত্রী বলছেন যে, করোনা মোকাবেলা করার জন্য অর্থের কোনো সমস্যা হবে না, বরাদ্দ কোনো বিষয় না। যখনই অর্থের প্রয়োজন হবে… দরকার হলে কৃষি এবং স্বাস্থ্য বাদ দিয়ে অন্য যে কোনো খাত থেকে টাকা এনে এখানে দেওয়া যাবে।”

মহামারী শুরুর পর সরকার অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং মানুষের জীবন নিয়ে ‘সবচেয়ে গুরুত্ব’ দিয়ে আসছে মন্তব্য করে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “বার বার আমাদের প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে বলেছেন যে, জীবন এবং জীবিকার মধ্যে আমরা সমন্বয় করছি। যদি আমরা জীবিকার বিষয়টা না দেখি তাহলে তাতেও মানুষ মারা যাবে, মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

বাজেটে প্রতি মাসে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার যে লক্ষ্যের কথা অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তাতে দেশের বেশিরভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে চার বছর লাগবে বলে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক।

অর্থমন্ত্রী  আ হ ম মুস্তফা কামাল উত্তরে বলেন, “সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে, সেই কাজটা আমরা করব, সেজন্য আমরা প্রস্তুত। কোনো সময় বেঁধে দিয়ে সেটা নয়।”

গতবছরের মত এবারও বাজেটের পরদিন অর্থমন্ত্রীর এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় অনলাইনে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন দপ্তরের সচিবরাও তাতে যুক্ত ছিলেন।