বাজেট বাস্তবায়নের পথরেখা অস্পষ্ট, বলছেন অর্থনীতিবিদরা

করোনাভাইরাস মহামারীর প্রথম বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে সরকার মানুষের ‘জীবন-জীবিকা রক্ষার’ স্লোগান নিয়ে আসছে বছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করেছে, আকারে বিশাল হলেও সুনির্দিষ্ট পথরেখা না থাকায় তার বাস্তবায়ন নিয়ে জোর সংশয় প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2021, 08:45 PM
Updated : 4 June 2021, 07:29 AM

তারা বলছেন, বাজেট বাস্তবায়নের গতানুগতিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেই অভূতপূর্ব মহামারী মোকাবেলা সামনে রেখে গত বছর যে বাজেট দেওয়া হয়েছিল, তার একটা বড় অংশ বাস্তবায়ন হয়নি। এর মধ্যে জীবনরক্ষার স্বাস্থ্য খাত বড় অংকের অর্থ ব্যবহার করতে পারেনি। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য যেমন বাজেট প্রত্যাশিত ছিল, তার প্রতিফলন ঘটেনি।

২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

অর্থের সঠিক ব্যবহারই সমস্যা: মির্জ্জা আজিজ

বাজেটে মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষার যে কথা আছে, সেটিকে ইতিবাচকভাবে দেখলেও বাজেট বাস্তবায়নকে মূল সমস্যা হিসেবে দেখছেন জরুরি অবস্থার সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

তিনি বলেন, “বাজেটে টার্গেট যেগুলো ধরা হয়েছে, সেগুলোকে আমি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করি। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা কম।

“আমার মনে হয়, আমাদের প্রশাসনিক যন্ত্রে বাজেট বাস্তবায়নের যে দক্ষতা রয়েছে, সেটাকে পরিপূর্ণভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এটা রাজস্ব আহরণ এবং ব্যয়- দুই ক্ষেত্রেই সত্য।”

মির্জ্জা আজিজ বলেন, বাজেটের মোট রাজস্বের মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা থাকে ৮০ শতাংশের বেশি। সেটা আদায়ে চলতি অর্থবছরে বড় রকমের ঘাটতি রয়েছে। ব্যয়ের ক্ষেত্রেও গত এক দশকে দেখা যায়, ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ ব্যয় হয়। এবারও তার চেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা নাই।

“ঘাটতির মাত্রাও যেটা ধরা হয়, সেটা কমে যায়। কেননা রাজস্ব আহরণও কমে আবার ব্যয়ও কমে। বছরের শেষে গিয়ে দেখা যায়, মূল বাজেটে যে ঘাটতি ছিল, তার চেয়ে ঘাটতি কিছু কম হয়।”

তবে অর্থায়নকে ‘খুব একটা সমস্যা’ সমস্যা হিসেবে দেখছেন না এই অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, “সমস্যা হচ্ছে অর্থটা যথাসময়ে সঠিক জায়গায় ব্যবহার করা।"

“কেননা বৈদেশিক সাহায্যের ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট সহায়তা পাচ্ছি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। আর অভ্যন্তরীণ ব্যাংকগুলোও সরকারকে ঋণ দিতে আগ্রহী।”

নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৬৪ শতাংশ।

এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৮ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন কামাল। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ৯.৭ শতাংশ। টাকার ওই অংক মোট বাজেটের ৫৫ শতাংশের মত।

ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে মূল্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪১ শতাংশ আদায় হয়েছে, যেখানে ব্যয় হয়েছে আরও কম; সাড়ে ৩৫ শতাংশ। ফলে বরাবরের মতো একটা বড় অংক ছেটে আয়-ব্যয় সংশোধন করতে হয়েছে।

মহামারী মোকাবেলার নির্দেশনা নেই: আহসান মনসুর

সরকার আগে ঘোষণা দিলেও বাজেটে মহামারী মোকাবেলায় সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিতে পারেনি বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষক ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

তিনি বলেন, “আশা করেছিলাম, সরকার আউটলাইন দেবে। কীভাবে ১২ কোটি মানুষকে টিকা দেবে? বিশাল কর্মযজ্ঞ। সেই প্ল্যান না থাকলে হবে না। টাকা নিয়ে বসে থাকলে হবে না।”

মহামারীকালে জরুরি প্রয়োজন মেটাতে গতবারের মতো এবারও ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব রয়েছে বাজেটে।

আহসান এইচ মনসুর

আহসান এইচ মনসুর বলেন, “সরকার বলছে বাজেট কোভিড ফোকাস। বলছে যে, বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে এবং ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে ভ্যাকসিনের জন্য।

“গতবছরও (বরাদ্দ) বাড়ানো হয়েছিল। রেজাল্ট কী? শুধু টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন কেনা যাবে না, তাই না? এক্সিকিউশন প্ল্যান থাকতে হবে।”

মহামারী রুখতে একমাত্র ভরসা টিকা প্রয়োগের বিশাল কর্মযজ্ঞের জন্য জাতীয় পর্যায়ে সমন্বিত পরিকল্পনা করার কথা বলেন এই অর্থনীতিবিদ।

বাজেটে সেটা অনুপস্থিত থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “কত লোককে ভ্যাকসিনেট করতে হবে? আমি জানি? সরকার কিছু বলেছে? মাসে ২৫ লাখ করে দিলে সাত বছর লাগবে।

“তাহলে ২৪ কোটি ডোজ দিতে হবে। লাগবে দিনে ১৫-২০ লাখ। এখন দিনে এক লাখের মত হচ্ছে। এখানে বিশাল গণ্ডগোল।”

কর আহরণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই বলেই মন্তব্য করে আহসান মনসুর বলেন, “আমরা কর আহরণে এফিশিয়েন্সি বাড়াতে পারি। (এটা) কমতে কমতে পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।

“আমরা ধার করা বাজেট দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। সরকারের কোনো সেভিংস হচ্ছে না। এক পয়সাও সেভিংস নাই। ধার করে আমরা বিনিয়োগ করছি।”

ব্যবসাবান্ধব, তবে …: জাহিদ হোসেন

বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “সংক্ষেপে বলতে গেলে এটা একটা ব্যবসাবান্ধব বাজেট। তবে সব ব্যবসা না, বিশেষ কিছু ব্যবসা। বিশেষ করে বিশ্ববাজারের ব্যবসা।”

জাহিদ হোসেন

ব্যবসাবান্ধব বললেও কিছু কিছু ব্যবসা যে সুবিধা বঞ্চিত হয়েছে সেই কথাও উল্লেখ করেন জাহিদ হোসেন।

“অনেক ব্যবসা সুবিধা পেলেও কেউ কেউ আবার পায়নি। তাই বলা যায় সব ব্যবসাবান্ধব না। যেমন রপ্তানি ব্যবসাবান্ধব না। ডিজিটাল ব্যবসাবান্ধব না। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবসাবান্ধব না।”

এবারের বাজেটে করপোরেট কর, অগ্রিম করসহ আরও কিছু কর কমানো হয়েছে। আবার মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ওপর করপোরেট করের খাড়া বেড়েছে।

করনীতি মূল্যায়ন করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “নতুনত্বের দিক থেকে দেখা গেছে করনীতি। করনীতিতে যে ধরনের সংস্কার করা হয়েছে সেটা অনেক দিনের দাবি ছিল। করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স রেট কমানোর বিষয়ে অনেকদিন ধরেই সবাই একমত ছিল। বাংলাদেশের রেটটা আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক ছিল না। এই যে আড়াই শতাংশ কমানো হল, সেটা ঠিক পথেই আছে।

“কিন্তু এটা কাদের উপকারে আসবে? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে আপনি পাবেন যে এটা সব ব্যবসা বান্ধব না। যারা বড় ব্যবসায়ী তাদের উপকার হবে। বিশ্বাবাজারে যারা ব্যবসা করে। আইসিটি পণ্য, কিছুটা আছে ছোটখাটোভাবে কৃষি।”

তিনি বলেন, “তাদেরকে দুই দিক থেকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। তারা যেসব উৎপাদন ব্যবহার করে সেগুলোতে ভ্যাট অব্যাহত দিয়ে, শিল্পকর কমিয়ে উৎপাদন খরচে ‍সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে তারা যেটা বিক্রি করে বাজারে সেগুলোর প্রতিযোগী পণ্যের আমদানির ওপর শুল্ক বসানো হয়েছে। যেমন মোবাইল হ্যান্ডসেট।”

দেশীয় আইসিটি খাতকে তেমন কোনো সুবিধা না দেওয়াটা এবারের বাজেটের বড় দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, “আইসিটি অবকাঠামোতে বিনিয়োগের কোনো কর্মসূচি দেখিনি। এটাই এই বাজেটের একটা বড় ঘাটতি। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে ট্যাক্স বাড়ানোটার যৌক্তিকতাও বোঝা গেলনা।

“মোবাইল ফিন্যান্সিয়ালের ওপরে বাড়ানোটা উল্টো হয়ে গেল। এটা অলরেডি ৩২ এর ওপরে ছিল। প্রয়োজন ছিল ৩০ এর নিচে নামিয়ে আনা। যখন এমএফএস করোনা মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, পেইমেন্ট সিস্টেম চালু রাখছে, ই-কমার্সের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে, মানুষ লেনদেন করছে। সেখানে হঠাৎ করে এটার পেছনে অর্থনৈতিক যুক্তিটা কী?”

বাজেটে অনুমিতি দুর্বল: সিপিডি

প্রস্তাবিত বাজেটে করোনাভাইরাস মহামারীর বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, দুর্বল অনুমিতি ও বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতা বাজেট বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।

“জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে আগামী অর্থবছরে অনেক বেশি বিনিয়োগ হতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ না বাড়লে প্রবৃদ্ধি কোথা থেকে হবে, তা বাজেটে স্পষ্ট নয়।

ফাহমিদা খাতুন

“রাজস্ব আহরণের বিষয়টিও স্পষ্ট নয়। কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা গত অর্থবছরের সমান রাখা হয়েছে। কিন্তু এই লক্ষ্যমাত্রাও কীভাবে পুরণ হবে, তা স্পষ্ট নয়। তাছাড়া রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান সক্ষমতা দিয়ে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়।”

বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা, আদায় সন্তোষজনক না হওয়ায় তা সংশোধন করে ৩ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

বিগত বছরগুলোর তুলনায় চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের দুর্বলতা তুলে ধরে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ফাহমিদা বলেন,  “বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকারকে বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করতে হবে বেশি। তাই ঋণের বোঝা যাতে না বাড়ে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।”

সাধারণত ঘাটতির পরিমাণ ৫ শতাংশের মধ্যে রেখে বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা হয়। তবে মহামারীর সঙ্কটে প্রণোদনার টাকা যোগানোর চাপ থাকায় গতবারের মত এবারও তা সম্ভব হয়নি। বরাবরের মতই বাজেট ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীকে নির্ভর করতে হবে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণের ওপর।

তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ১ লাখ ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি তিনি মেটাবেন।

অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে ৭৬ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে বাজেটে।

ফাহমিদা বলেন, চলতি অর্থবছরের চেয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে টাকার অংকে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়লেও জিডিপির হিসাবে তা ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ০ দশমিক ৯৫ শতাংশই আছে। যখন আমাদের স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ দেওয়া সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তখন তাতে বরাদ্দ বাড়ছে না।

“করোনা থেকে মুক্তি না পেলে অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য ফিরে আসবে না। সেজন্য যারা যোগ্য তাদের প্রত্যেককে টিকা দিতে হবে। বাজেটে এজন্য দশ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে কিন্তু এটা পর্যাপ্ত নয়।”

বাস্তবায়নে ‘সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ’ নেই: সানেম

প্রস্তাবিত বাজেটে দেশীয় শিল্প, স্বাস্থ্য সেবাখাত, কৃষিসহ অগ্রাধিকারমূলক খাতগুলোকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হলেও তাতে যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে মহামারী উত্তরণের পদক্ষেপ নেই বলে মনে করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান।

বাজেট নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনাকালীন প্রত্যাশার সঙ্গে বাজেটের বড় ‘ডিসকানেক্ট’ দেখা গেছে। বিশেষ করে বর্তমান যে কঠিন সময় যাচ্ছে তার একটা মূল্যায়ন বাজেটে থাকার প্রয়োজন ছিল।

“কারণ মূল্যায়ন ছাড়া কিভাবে রেমেডি মেজারগুলো হতে পারে? সেখানে বড় ধরনের গ্যাপ আছে।”

সেলিম রায়হান

স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানো হলেও বাস্তবায়নের সরকারি তৎপরতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, মহামারীর সময়ে স্বাস্থ্যখাতে যে ভঙ্গুরতার চিত্র ফুটে উঠেছে, সেগুলো দূর করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা বাজেটে নেই।

“তাহলে কী এবার স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ বাস্তবায়নে আগের অবস্থা দেখতে হবে?”

ড. সেলিম বলেন, বাজেটে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে যেসব প্রস্তাব এসেছে সেগুলো সঠিকই আছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে গত বছরও এসব খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছিল, কিন্তু খরচ করা যায়নি।

কর ছাড়, কিছু প্রণোদনা দেওয়াকে বাজেটের ইতিবাচক দিক হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, “আগামী অর্থ বছরে কর জিডিপি অনুপাত প্রাক্কলন করা হচ্ছে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ, যেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনও হয়নি।

“অতীতের পর্যালোচনার আলোকে এটা আমার কাছে অনেক বেশি এবং অবাস্তব মনে হয়েছে।”

মহামারীর মধ্যে ব্যাপক কর্মহীনতার সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাজেটে কর্মসংস্থান নিয়ে আরও আরও বিশদ পরিকল্পনা ও আলোচনার প্রয়োজন ছিল। কর্মসংস্থানের ৮৫ শতাংশই যেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাত, সেটা নিযে কোনো উদ্যোগ নেই।

এমএফএসের বাড়তি কর গ্রাহকের কাঁধে: নাজনীন

বাজেটের বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ।

নাজনীন সুলতানা

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতি বছর বাজেটের সময় এসে দেখি ৫০ ভাগের মত বাস্তবায়ন হয়। এর পরে হয়ত তাড়াহুড়ো করে ৮০-৯০-৯৫ ভাগে নিয়ে যাওয়া হয়।

“যেমন গত বছর কিন্তু স্বাস্থ্য খাতের জন্য বলা হয়েছিল যে প্রত্যন্ত এলাকায় জেলা শহরগুলোতে আইসিইউ সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। বিভিন্ন জেলা শহরে আইসিইউ সামগ্রী গেলেও আইসিইউ সামগ্রী সংযোজন এবং স্থাপনের বাজেটটা যায়নি।”

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রণোদনা নিয়ে ড. নাজনীন আহমেদ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য যে ২০ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা গত বছর ছিল, সেটির পুরোটা বাস্তবায়ন হয়নি এখনও।”

কোম্পানি করহারকে স্বাগত জানালেও মোবাইল ফাইন্সিসিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) কোম্পানির করহার বাড়ানোকে ভালো চোখে দেখছেন না তিনি।

নাজনীন বলেন, “সরকার যেখানে ই-কমার্সকে উৎসাহিত করছে সেখানে এমএফএসের ক্ষেত্রে লিস্টেড হোক, আনলিস্টেড হোক দুটো ক্ষেত্রেই বাড়ানো হয়েছে। করোনাকালে কিন্তু এমএফএসের ব্যবহারটা অনেক বেশি।

“যদিও এটা করপোরেট পর্যায়ে, কিন্তু আলটিমেটলি করের বোঝাটা গ্রাহকের কাঁধেই আসবে।”