ব্যবসাবান্ধব বাজেট, তবে সব ব্যবসার জন্য নয়: জাহিদ হোসেন

সংক্ষেপে প্রস্তাবিত বাজেটকে ব্যবসাবান্ধব বললেও কিছু কিছু ব্যবসা সুবিধাবঞ্চিতও হবে বলে মনে করেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2021, 06:50 PM
Updated : 3 June 2021, 06:58 PM

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উত্থাপিত নতুন অর্ধবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “সংক্ষেপে বলতে গেলে এটা একটা ব্যবসাবান্ধব বাজেট। তবে সব ব্যবসা না, বিশেষ কিছু ব্যবসা। বিশেষ করে বিশ্ববাজারের ব্যবসা।”

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাজেটে করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে। দেশে ভারী শিল্পের বিকাশে প্রস্তাবিত বাজেটে শর্ত সাপেক্ষে ১০ বছর মেয়াদে কর অব্যাহতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কৃষিপণ্যের ছয় খাতে ১০ বছরের কর অবকাশ দেওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটকে ব্যবসা বান্ধব বললেও কিছু কিছু ব্যবসা যে সুবিধা বঞ্চিত হয়েছে সেই কথাও উল্লেখ করেন জাহিদ হোসেন।

“অনেক ব্যবসা সুবিধা পেলেও কেউ কেউ আবার পায়নি। তাই বলা যায় সব ব্যবসাবান্ধব না। যেমন রপ্তানি ব্যবসাবান্ধব না। ডিজিটাল ব্যবসাবান্ধব না। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবসাবান্ধব না।”

এবারের বাজেটে করপোরেট কর, অগ্রিম করসহ আরও কিছু কর কমানো হয়েছে। আবার মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ওপর করপোরেট করের খাড়া বেড়েছে।

করনীতি মূল্যায়ন করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “নতুনত্বের দিক থেকে দেখা গেছে করনীতি। করনীতিতে যে ধরনের সংস্কার করা হয়েছে সেটা অনেক দিনের দাবি ছিল। করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স রেট কমানোর বিষয়ে অনেকদিন ধরেই সবাই একমত ছিল। বাংলাদেশের রেটটা আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক ছিল না। এই যে আড়াই শতাংশ কমানো হল, সেটা ঠিক পথেই আছে।

“কিন্তু এটা কাদের উপকারে আসবে? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে আপনি পাবেন যে এটা সব ব্যবসা বান্ধব না। যারা বড় ব্যবসায়ী তাদের উপকার হবে। বিশ্বাবাজারে যারা ব্যবসা করে। আইসিটি পণ্য, কিছুটা আছে ছোটখাটোভাবে কৃষি।”

তিনি বলেন, “তাদেরকে দুই দিক থেকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। তারা যেসব উৎপাদন ব্যবহার করে সেগুলোতে ভ্যাট অব্যাহত দিয়ে, শিল্পকর কমিয়ে উৎপাদন খরচে ‍সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে তারা যেটা বিক্রি করে বাজারে সেগুলোর প্রতিযোগী পণ্যের আমদানির ওপর শুল্ক বসানো হয়েছে। যেমন মোবাইল হ্যান্ডসেট।”

দেশীয় আইসিটি খাতকে তেমন কোনো সুবিধা না দেওয়াটা এবারের বাজেটের বড় দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, “আইসিটি অবকাঠামোতে বিনিয়োগের কোনো কর্মসূচি দেখিনি। এটাই এই বাজেটের একটা বড় ঘাটতি। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে ট্যাক্স বাড়ানোটার যৌক্তিকতাও বোঝা গেলনা।

“মোবাইল ফিন্যান্সিয়ালের ওপরে বাড়ানোটা উল্টো হয়ে গেল। এটা অলরেডি ৩২ এর ওপরে ছিল। প্রয়োজন ছিল ৩০ এর নিচে নামিয়ে আনা। যখন এমএফএস করোনা মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, পেইমেন্ট সিস্টেম চালু রাখছে, ই-কমার্সের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে, মানুষ লেনদেন করছে। সেখানে হঠাৎ করে এটার পেছনে অর্থনৈতিক যুক্তিটা কী?”