বৃহস্পতিবার
জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকার এই বাজেট প্রস্তাব
উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী কামাল।
এর
মধ্যে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা তিনি রাজস্ব খাত থেকে যোগান দেওয়ার পরিকল্পনা
সাজিয়েছেন, যা বাস্তবায়ন করা হবে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
তারপরও
তার আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার মত, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
মোট
দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় ঘাটতির এই পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৬.২ শতাংশের মত।
গত এক যুগে সরকার ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে
রেখে বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা করলেও মহামারীর সঙ্কটে প্রণোদনার টাকা যোগানোর চাপ
থাকায় গতবার তা ৬.১ শতাংশে পৌঁছায়। এবার তা আরও বড় হল।
আয়ের
চেয়ে ব্যয় বেশি হলে ধার করে সেই ঘাটতি পূরণ করতে হয়। সরকার বিদেশি সাহায্য ও বিদেশি ঋণ
নিয়ে, দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে ধরা করে, জনগণের কাছে সঞ্চয়পত্র
বিক্রি করে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেই ঘাটতি
পূরণ করতে পারে।
এবারের
বাজেটের ছয় লাখ কোটি টাকা খরচ করতে হলে অর্থমন্ত্রীকে এক এক তৃতীয়াংশই ঋণ করতে
হবে।
সেজন্য
বিদেশ থেকে ১ লাখ ১ হাজার ২২৮
কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ
উৎস থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩
কোটি টাকা ঋণ করার পরিকল্পনা জানিয়েছেন কামাল।
অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত
থেকে ৭৬ হাজার ৪২৫
কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি
টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরও ৫ হাজার কোটি
টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য
ধরা হয়েছে বাজেটে। এছাড়া বাজেটে সম্ভাব্য বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার পরিমাণ
ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কারওয়ান বাজারে একটি টেলিভিশনের শো রুমে সরাসরি প্রচারিত হওয়া বাজেট দেখছে মানুষ । ছবি: মাহমুদ জামান অভি
ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেলে অর্থনীতিতে বাইরে
থেকে আসা তারল্য যোগ হয়। তাতে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি বাড়ে। তাছাড়া সেই ঋণের
জন্য সরকারকে সুদও গুণতে হয়।
আবার মন্দার মধ্যে ওই বাড়তি টাকার যোগান সরকারের উন্নয়ন
কর্মকাণ্ডে গতি আনতে পারে, তাতে স্থবির অর্থনীতিতে গতি আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
পলিসি
রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, “বাজটের ঘাটতি আমি মনে করি কোনো সমস্যা না। কর
থেকে সরকারের আয় কমবে। সেক্ষেত্রে বাজেটের ঘাটতি এমনিতেই বেড়ে যাবে। বর্তমান
অবস্থায় সরকারকে বেশি ব্যয় করতেই হবে।”
বাংলাদেশ
উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক এবং অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান
জায়েদ বখতের পরামর্শ হল, আগে বিদেশি
উৎস থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতির বড় অংশ পূরণের চেষ্টা করা এবং পরে প্রয়োজন বুঝে দেশের
ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া।
বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমাদের পাইপ লাইনে অনেক বিদেশি সাহায্য আছে, সেটা কাজে
লাগাতে হবে।সরকারকে খুঁজে দেখতে হবে কীভাবে কম খরচে টাকা নেওয়া যায়।”
সঞ্চয়পত্র থেকে
ঘাটতি অর্থায়ন কমানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বেশি, আর কেন্দ্রীয়
ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সেটা মূল্যস্ফীতির উপরে চাপ বাড়ায়। যেহেতু
ব্যাংকে এখন তারল্য আছে, ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিলে সটা সমষ্টিক
অর্থনীতির উপর চাপ কম ফেলবে।”
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হানের
মতে, ঘাটতির চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল বাজেট বাস্তবায়ন।
“গত বাজেটেও স্বাস্থ্যখাতসহ
অন্যান্য অনেক খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দের কথা বলা হয়েছিল। সরকার এগুলো খরচ করতে পারেনি।”
গেল
অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে ৭৯ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা হয়।
আর
২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে বিদেশি ঋণের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৮৮ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা ৮০ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
গেল
অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। মহামারীর সঙ্কটে সেই
গতিপথ ঠিক থাকেনি। সংশোধনে তা ৫ লাখ ৩৯ হাজার কোটিতে নামিয়ে আনতে হয়েছে।