২০২১-২২ অর্থবছরে ৭.২% জিডিপি প্রবৃদ্ধির আশা

করোনাভাইরাস মহামারী হানা দেওয়ার পরও গত বছর বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮ দশমিক ২ শতাংশ ধরেছিল সরকার। তা অর্জিত না হওয়ায় মহামারীর বাস্তবতায় এবার সেই লক্ষ্যে রাশ টেনেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2021, 09:32 AM
Updated : 3 June 2021, 10:12 AM

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য উত্থাপিত ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার এই বাজেট প্রস্তাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশ ধরেছেন তিনি।

সার্বিক অর্থনীতিতে মহামারীর প্রভাবে যে তাতে এই লক্ষ্য কমিয়ে ধরতে হয়েছে, তা বাজেট বক্তৃতায় স্পষ্ট করেছেন তিনি।

অর্থনীতির জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রপঞ্চটি বাংলাদেশের রাজনীতিতেও বারবার আসছে আলোচনায়। যদিও সমকালীন অর্থনীতিকদের অনেকে প্রবৃদ্ধির এই অঙ্ককে অর্থনীতির গতিশীলতা হিসেবে মানলেও টেকসই উন্নয়নের সূচক হিসেবে মানতে নারাজ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। মহামারী শুরুর পর ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য যখন ধরেছিলেন অর্থমন্ত্রী, তা উচ্চাভিলাষী বলেই মত দিয়েছিলেন অনেকে।

প্রবৃদ্ধি অর্জন লক্ষ্যের কাছাকাছি না গেলেও মহামারীর মধ্যেও যেটুকু অর্জিত হয়েছে, সেটাও কম নয় বলে মনে করছেন মুস্তফা কামাল।

বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারীর প্রকোপ অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনার দক্ষতা ও উৎকর্ষ সাধন এবং প্রাজ্ঞ রাজস্ব নীতি ও সহায়ক মুদ্রা নীতি অনুসরণের মাধ্যমে সরকার সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।

“বিগত এক দশকে বাংলাদেশের উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন কোভিড মহামারীর প্রভাবে সাময়িক বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেকর্ড ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হলেও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে তা হ্রাস পেয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়ায়।”

“গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ৫ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে, যা ছিল এশিয়ার মধ্যে সবার উপরে,” বলেন তিনি।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, “কোভিড পরবর্তী উত্তরণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়েছে।”

অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে দেশের অর্থনীতির পরিসর ৭ দশমিক ২ শতাংশের মতো বাড়বে বলে সরকার আশা করছে।

কী কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থ বছর কম হয়েছে এবং আগামী অর্থবছর কমিয়ে ধরতে হয়েছে, তার ব্যাখ্যাও আসে মুস্তফা কামালের কথায়।

তিনি বলেন, “মহামারীর প্রভাব দীর্ঘতর হওয়া, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউিএবং পুনরায় লকডাউন ঘোষণার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে শ্লথ অবস্থা বিরাজমান। রপ্তানি ও আমদানির ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত গতি ফিরে আসেনি।”

তবে প্রবাসী আয়ে গতিশীলতা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নকে হিসাবে ধরে বিদায়ী অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমলেও ৬ দশমিক ১ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

মুস্তফা কামাল বলেন, “আশার কথা, আইএমএফ  ও বিশ্ব ব্যাংক উভয়ই বাংলাদেশের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়িয়েছে।”  

অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামী বছর বাংলাদেশ ৫ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেতে পারে। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি আগামী বছর হতে পারে সাড়ে ৭ শতাংশ।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপন দিয়েছে, যা সরকারেরও লক্ষ্য।