বাজেটে জীবন ও জীবিকার বাস্তব চিত্রের প্রতিফলন নেই: সানেম

আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশে জীবন ও জীবিকার বাস্তব চিত্রের প্রতিফলন ঘটেনি উল্লেখ করে সানেম বলেছে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতেও বরাদ্দ অনেক কম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 June 2021, 01:15 PM
Updated : 5 June 2021, 01:15 PM

শনিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেছে।

ভার্চুয়াল আলোচনায় সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন,“প্রস্তাবিত বাজেটের শিরোনামে জীবন ও জীবিকার কথা বলা থাকলেও বাস্তবতার সঙ্গে এর সংযোগ নেই।

“বর্তমান জীবন ও জীবিকার বাস্তবতার সঠিক কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি। আমরা যদি সমস্যাকে সঠিকভাবে তুলে আনতে না পারি, তবে এর সমাধান করব কিভাবে। সমস্যা যদি সঠিকভাবে না পাই, এর সমাধান সঠিক হবে না।”

গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২১- ২০২২ অর্থবছরের যে বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেন সেটির শিরোনাম হচ্ছে ‘জীবন ও জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে’।

তিনি ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন ৭ দশমিক ২ শতাংশ।

প্রস্তাবিত এই বাজেটে করোনাভাইরাসের অবস্থার যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে সেটি ‘সঠিক নয়’ ও ‘অপরিপূর্ণ’ মন্তব্য করে সানেমের নির্বাহী পরিচালকে বলেন, “বাজেটে দারিদ্র নিয়ে, কর্মসংস্থান নিয়ে, শ্রমবাজার নিয়ে, এসএমই নিয়ে এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধার নিয়ে যে আলোচনা করা হয়েছে সেটা অপরিপূর্ণ আলোচনা।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

“আর এই ধরনের অপরিপূর্ণ আলোচনার বিপদ যেটা হচ্ছে, নীতি নির্ধারণের মধ্যে এক ধরনের শৈথিল্য কাজ করে। নীতি নির্ধারকরা যদি কমফোর্ট জোনে থাকেন এরকম একটা সংকটের সময় তাহলে কিন্তু যথার্থ নীতি প্রণয়ন করা এবং সে নীতি বাস্তবায়ন করার যে একটা তাগিদ কাজ করা উচিৎ, সেটা তারা কিন্তু অনুভব করবেন না।”

তিনি বলেন, “আর যেহেতু সব বিষয়ের সঠিক চিত্র বাজেটে ছিল না, তাই করোনাভাইরাস পরিস্থিতি থেকে মুক্তির সমাধান আমরা এই বাজেটে পাইনি। যদিও সরকারের সদিচ্ছার কোনো অভাব ছিল না।

“আর বাজেটে সমাধানের যে চেষ্টাগুলো করা হয়েছে, সেগুলো হয়েছে এডহক বিসিসে। সমস্যা সমাধানের সামগ্রিক কোনো পরিকল্পনা আমরা দেখিনি।”

বাংলাদেশে যে বাজেট ঘোষণা করা হয় শেষ পর্যন্ত সেটির ৭৫ শতাংশের মত বাস্তবায়ন হয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “বাজেট বাস্তবায়ন কিভাবে বাড়ানো যায়, তার কোনো পরিকল্পনা আমরা দেখিনি।

“এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক নিরাপত্তায় খরচ আরো বাড়ানো উচিত ছিল।“

এই তিন খাতে জিডিপির ৪ শতাংশ ব্যয় ধরার কথা উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “শুধু শিক্ষাতেই ২ থেকে ৪ শতাংশ খরচ করা দরকার। অর্থাৎ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তায় জিডিপির ৮ থেকে ১২ শতাংশ বরাদ্দ রাখা উচিত।”    

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৯৪ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং জিডিপির ২ দিশমিক ৭৫ শতাংশ।

স্বাস্থ্যে প্রস্তাবিত মোট বরাদ্দ ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং জিডিপির দশমিক ৯৫ শতাংশ।    

ভার্চুয়াল আলোচনায় সানেমের গবেষণা পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশাও বক্তব্য দেন।