মহামারীর বছরে অর্থমন্ত্রী ৬ লাখ কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, তাতে অনেক অসঙ্গতি দেখার কথা জানিয়েছেন সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের।
Published : 03 Jun 2021, 09:01 PM
তিনি বলেছেন, বিশাল অঙ্কের এই ঘাটতি বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গিয়ে সরকার ঠেকে যাবে।
করোনাভাইরাস সঙ্কটকালে সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ নিয়েও সন্তষ্ট নন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কাদের।
২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট বৃহস্পতিবার সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল উত্থাপনের পর সংসদ ভবনে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে তা নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান বিরোধীদলীয় উপনেতা।
জি এম কাদের বলেন, “যে বাজেট পেশ করা হয়েছে, তা কল্পনাপ্রসূত, মনগড়া এবং অবাস্তব। আন্দাজে করা এই বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয়।”
আগামী অর্থবছরে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা ব্যয়ের যে ফর্দ অর্থমন্ত্রী করেছেন, তাতে ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার মতো, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
জি এম কাদের বলেন, বিশাল ঘাটতি পূরণে যে ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। এই বাজেট ব্যাপকভাবে সংশোধন বা রদবদল করতে হবে।
“ধারণার বশবর্তী হয়ে অর্থমন্ত্রী বাজেট তৈরি করেছেন। এই বাজেট এতটাই পরিবর্তন করতে হবে যে, তাতে প্রণীত বাজেটের প্রকৃত রূপ থাকবে না। বাজেটে খরচ বাড়িয়েছেন, বাড়ানো দরকারও আছে, কিন্তু অর্থ আহরণের বিষয়ে তারা হোঁচট খেয়েছেন। গেল বাজেটের লক্ষ্য অনুযায়ী ৬০ ভাগও রাজস্ব আদায় করতে পারেনি ১০ মাসে। সামনের দুই মাসে কতটা আদায় করতে পারবেন, তাও জানেন না। যেটা প্রাক্কলন করেছেন তাতে যথেষ্ট পরিমাণে ঘাটতি রয়েছে।”
এবারের বাজেটের ছয় লাখ কোটি টাকা খরচ করতে হলে অর্থমন্ত্রীকে এক-তৃতীয়াংশই ঋণ করতে হবে। সেজন্য বিদেশ থেকে ১ লাখ ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা ঋণ করার পরিকল্পনা জানিয়েছেন তিনি।
জি এম কাদের বলেন, “বাজেটের ঘাটতি পূরণে বিদেশি ঋণ, স্বল্প সুদে ঋণ এবং বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ প্রাপ্তির যে কথা বলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। আগামী দিনের অর্থনৈতিক যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তাতে এটা আদৌ অর্জন করা সম্ভব হবে কি না, তা বলা যাচ্ছে না। তাই রাজস্ব প্রাপ্তিতে যেমন বিশাল সমস্যা হতে পারে, তেমনিভাবে বাজেট অনুযায়ী অর্থায়নেও সমস্যা হতে পারে।”
“জিডিপির ৬ দশমিক ২ ভাগ ঘাটতির বাজেট এর আগে আর হয়নি। ঘাটতির এই বাজেটে যত সুন্দরভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে তা ডিটেইলে দেখা গেছে অনেক কিছুই ফাঁক আছে,” বলেন তিনি।
এই সঙ্কটকালে যে সব বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন, তাও অর্থমন্ত্রীর নজর পায়নি বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
“যেসব বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে তা মুখে বলেছেন কিন্তু কাগজে মোটেই নেই। এছাড়া স্বাস্থ্যখাতে নামমাত্র বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে, সামাজিক বেষ্টনি খাতে যা দেওয়া হয়েছে, তা বাজেটের তুলনায় অত্যন্ত কম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে অনেক কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।”
জি এম কাদের বলেন, “যারা করোনাকালে কর্মহীন হয়েছে এবং দারিদ্রসীমার নিচে চলে গেছেন, তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি বা তাদের জন্য আর্থিক সহায়তার সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা নেই এই বাজেটে।
“স্বাস্থ্য খাতের জন্য সাধারণ মানুষের বিপুল আকাঙ্ক্ষা ছিল, এবার স্বাস্থ্যখাতে বড় ধরনের একটা বরাদ্দ হবে, এমন আশা ছিল সাধারণ মানুষের। কিন্তু বাজেটে অত্যন্ত সামান্য বৃদ্ধি দেখানো হয়েছে। এটা সাধারণভাবে বলা যায় রুটিনবৃদ্ধি, কোন ক্রাইসিসের জন্য এই বৃদ্ধি সামান্য এবং অপ্রতুল।”