গরিব মারার বাজেট কেউ বলেনি: অর্থমন্ত্রী

মহামারীকালে চতুর্মুখী চাপের মধ্যে সরকার যে বাজেট দিয়েছে তা নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক শিবির থেকে ‘খুব একটা নেতিবাচক’ মন্তব্য আসেনি বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2020, 01:18 PM
Updated : 12 June 2020, 02:56 PM

বাটেজের পরদিন শুক্রবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “সাধারণত বাজেট দেওয়া হলে গরিব মারা বাজেট, এই বাজেট, সেই বাজেট- বিভিন্ন রকম কথাবার্তা হত।

“এবার আমরা শুনি নাই যে, গরিব মারার বাজেট বলা হয়েছে, কাউকে মারার জন্য বাজেট দেওয়া হয়েছে।”

বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি নেতা আবদুল মঈন খান বলেছেন, প্রায় এক তৃতীয়াংশ ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি নিয়ে দেওয়া এই বাজেট দেখে তার আশির দশকে এরশাদ সরকারের ‘দেউলিয়া বাজেটের’ কথা মনে পড়ছে।

আর বাম দলগুলো বলেছে, বাজেটে পরোক্ষা কর বাড়ানো হয়েছে যাতে গরিব মানুষের ওপর চাপ তৈরি হবে। অপরদিকে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ ও কর রেয়াতসহ নানাভাবে ধনীদের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। 

‘অর্থনেতিক উত্তরণ ও ভতিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’ শিরোনামে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।

মহামারীর মধ্যে ঘোষিত বাজেটে সঙ্কট সামাল দিতে সরকারের পকেট কিছুটা চওড়া হলেও সেই অর্থের সংস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখছেন অর্থনীতিবিদরা; অর্থমন্ত্রী নিজেও তা স্বীকার করছেন।

সাধারণ মানুষের যেখানে ইন্টারেস্ট রয়েছে সে সব খাতকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এবারের বাজেটটি মানুষকে রক্ষার জন্য তৈরি করতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও চিন্তা করেননি টাকা কোথা থেকে আসবে।”

মুস্তফা কামাল বলেন, “আগে আমরা টাকা আয় করে খরচ করতাম। এবার আমরা উল্টাটায় গিয়েছি, আগে মানুষ বাঁচাতে হবে। মানুষ বাঁচাতে হবে সেজন্য টাকা কোথায় আছে, কোথা থেকে আসবে সেটা বড় কথা নয়।

“মানুষকে খারাব দিতে হবে, যে কর্মসংস্থান হারিয়েছে তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রত্যেকটা গ্রামীণ অবকাঠামো ঠিক করতে হবে, গ্রামীণ অর্থনীতি যে খারাপ অবস্থায় চলে গেছে সেটাকে ঠিক করতে হবে। সেজন্য অর্থ যা-ই লাগবে সেই অর্থের ব্যবস্থা করতে হবে।”

অর্থমন্ত্রী বলেন, “এজন্য এবার প্রথমে খরচ করব, পরে আয় করব, আমাদের আয় করতে হবেই। আয়ের জন্য অপেক্ষা না করে মানুষ বাঁচানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এই যাত্রায় দেশের সকল মানুষের সহায়তা চাই।”

প্রথম ‘ভার্চুয়াল’ বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এবার অর্থমন্ত্রীর এই বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন হয়েছে ইন্টারনেটে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। সেজন্য ব্যবহার করা হয় কনফারেন্সিং অ্যাপ জুম।

কিন্তু শুরুতে সবাই একসাথে কথা বলায় কেউ কারও কথা শুনতে পারছিলেন না, যা নিয়ে এক পর্যায়ে বিরক্ত প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন “আপনারা সবাই কথা বললে আমার কথা কে শুনবে?”

এর পরও অংশগ্রহরকারীরা সবাই অ্যাপে যার যার মাইক্রোফোন মিউট না করায় কনফারেন্স অ্যাপ পরিচালনাকারী সবাইকে মিউট করে দেন। তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আছে।   

শুক্রবার নিজ বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন অর্থমন্ত্রী। এ সময় তার হাতে গ্লাভস থাকলেও মুখে মাস্ক ছিল না। 

প্রতিবার বাজেট ঘোষণার পরদিন এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। অর্থমন্ত্রী বাজেটের বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি সাংবাদিকদের প্রশ্নেরও উত্তর দেন।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় গতবার নিজের প্রথম বাজেট দেওয়ার পর এই সংবাদ সম্মেলনে আসতে পারেননি মুস্তফা কামাল। তার হয়ে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।   

এবারের ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন চলে প্রায় ২ ঘণ্টা। অর্থমন্ত্রী ছাড়াও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম যার যার বাসা থেকে ভার্চুয়াল এই সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত ছিলেন। তারা ১৫ জন সাংবাদিকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।