স্তর অপরিবর্তিত রেখেই বিড়ি-সিগারেটের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব

বিশ্বব্যাপী ধূমপান বিরোধী রাষ্ট্রীয়নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান, স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে এর ব্যবহার কমানো এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধি- এই তিন বিষয়কে প্রধান্য দিয়ে নতুন অর্থবছরের বাজেটে বিড়ি-সিগারেট ও তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2019, 04:11 PM
Updated : 13 June 2019, 04:11 PM

তবে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর দাবির পরও বৃহস্পতিবার সংসদে উত্থাপিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে বিড়ি-সিগারেটের মূল্যস্তর আগের মতো তিনটিই রাখা হয়েছে।   

প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্নস্তরের সিগারেটের দশ শলাকার দাম ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৭ আর সম্পূরক শুল্ক গত বছরের মতো এবারও ৫৫ শতাংশ রাখা হয়েছে।

মধ্যম স্তরে দশ শলাকার দাম ৬৩ টাকা করা হয়েছে, যা বর্তমানে ৪৮ টাকা। এই স্তরে সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ রাখা হয়েছে।

আর সিগারেটের উচ্চস্তরে দশ শলাকার দাম ৯৩ টাকা এবং ১২৩ টাকা করা হয়েছে। গত বাজেটে যা ছিল যথাক্রমে ৭৫ টাকা ও ১০৫ টাকা। সম্পূরক শুল্ক গত বছরের মতোই ৬৫ শতাংশ রয়েছে।

ফিল্টারবিহীন হাতে তৈরি বিড়ি ২৫ শলাকার দাম ১৪ টাকা করা হয়েছে, যা বর্তমানে সাড়ে ১২ টাকা।এখানে  সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে।

অন্যদিকে ফিল্টারযুক্ত বিড়ি ২০ শলাকা ১৫ টাকা থেকে ১৭ টাকা করা হয়েছে, সেই সাথে সম্পূরক শুল্ক ৩৫ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিড়ি-সিগারেটের মতোই ক্ষতিকর জর্দার ১০ গ্রামের দাম ধরা হয়েছে ৩০ টাকা আর ১০ গ্রাম গুলের দাম ১৫ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। দুটোরই ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

অপ্রক্রিয়াজাত তামাকের ওপর যে ১০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক বহাল আছে তা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে।

অন্যদিকে সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সব ধরনের তামাকজাত পণ্য প্রস্তুকারী করদাতার ব্যবসা থেকে অর্জিত আয়ের ওপর বিদ্যমান দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ সারচার্জ অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।

হতাশ তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো

প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধির যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা শুধু তামাক কোম্পানিগুলোকেই লাভবান করবে বলে মনে করে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা)।

বাজেট ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এক বিবৃতিতে সংগঠন দুইটি জানায়, ৭২ শতাংশ ভোক্তার নিম্নস্তরে সিগারেটের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে শলাকা প্রতি মাত্র ২০ পয়সা বা ৫.৭ শতাংশ। অথচ এসময়ে জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ।  

প্রস্তাবিত বাজেট কার্যকর হলে এই স্তরের সিগারেটের প্রকৃতমূল্য হ্রাস পাবে এবং ব্যবহার বাড়বে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, বাজেট প্রস্তাবনায় মূল্যস্তর ভেদে সিগারেট কোম্পানিগুলোকে ৩১ শতাংশ পর্যন্ত আয় বৃদ্ধির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। আর বিড়ির শলাকা প্রতি ৬ পয়সা দাম বৃদ্ধি যে করা হয়েছে তা এর ব্যবহার কমাতে কোনো ভূমিকাই পালন করবেনা।

প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পূরক শুল্ক অপরিবর্তিত রাখায় প্রতি শলাকা সিগারেটের দাম বৃদ্ধি পাবে মাত্র ২০ পয়সা যা খুবই হতাশাজনক। সরকারের এই পদক্ষেপে বিগত বছরের তুলনায় মূল্যস্তর ভেদে তামাক কোম্পানিগুলোর আয় ৩১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। ফলে বিশেষত বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো এবারের বাজেটে ব্যাপকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির মূল্য দুই বছর পর মাত্র ১.৫ টাকা বৃদ্ধি করে ১৪ টাকা নির্ধারণ করায় প্রতি শলাকা বিড়ির দাম বাড়বে মাত্র ৬ পয়সা। এই বৃদ্ধি খুবই নগণ্য। যাতে বিড়ি কারখানার মালিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

তবে জর্দা-গুলের ওপর থেকে প্রচলিত ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বাতিল করায় অর্থমন্ত্রীর প্রশংসা করে বলা হয়েছে এসব পণ্য থেকে কর আদায়ের জটিলতা কিছুটা হলেও সহজ হবে এবং আদায়কৃত করের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। তবে অপ্রক্রিয়াজাত তামাকের রপ্তানি শুল্ক তুলে দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত নিন্দনীয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রী করেছেন, তা বাস্তবায়নের কোনো নমুনা প্রস্তাবিত বজেটে নেই।

তামাক কোম্পানিগুলোকে ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ দিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা কখনই সম্ভব নয় জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, এবার প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে তামাক কোম্পানিগুলো সবচেয়ে বেশী লাভবান হবে।