মোবাইল ফোন ব্যবহারে খরচ আরও বাড়বে

নতুন অর্থবছরে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ আরও বাড়তে যাচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2019, 12:40 PM
Updated : 13 June 2019, 03:17 PM

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, তাতে মোবাইল সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছেন।

ফলে মোবাইল ফোনে কথা বলা, এসএমএস পাঠানো এবং ডেটা ব্যবহারের খরচও বেড়ে যাবে।

প্রথমবার মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপর সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয় ২০১৫-১৬ সালের বাজেটে। তখন ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব হলেও পরে তা ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছিল।

এই শুল্ক ৫ শতাংশ করে দেওয়া হয় দুই বছরের মধ্যে।

মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছে, এর ফলে মোট বর্তমানে সেবায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ১ শতাংশ সারচার্জ, ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং অন্যান্য মিলে মোট কর দাঁড়াবে ২৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়ালে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কেউ যদি ১০০ টাকার সেবা নিতে চান, তাহলে ৭৮ দশমিক ২৭ টাকার সেবা নিতে পারবেন। ২২ দশমিক ৭২ টাকা যাবে সরকারের পকেটে।

জাতীয় সংসদে চলছে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন। ছবি: পিআইডি

প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট এ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, গ্রাহকদের ‘স্বার্থ রক্ষায়’ যে বিষয়গুলো উত্থাপন করে আসছিলেন তারা, তার প্রতিফলিন না দেখে তারা ‘আশাহত’।

মোবাইল ফোন সিম কার্ডে সেবায় সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ এবং সিমের উপর কর দ্বিগুণ বাড়িয়ে ২০০ টাকা করার প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, এতে ডিজিটাল সেবার প্রসার ‘ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত’ হবে।

“এর পাশাপাশি স্মার্টফোনকে উচ্চবিত্তদের ব্যবহারযোগ্য পণ্য হিসেবে বিবেচনা করে এর উপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ফোরজি সেবা চালু হবার পর থেকে দেশের জনসাধারণের মধ্যে স্মার্টফোনের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ সকল শ্রেণির মানুষ বিভিন্ন ডিজিটাল সুবিধা ব্যবহারের মাধ্যম হিসেবে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে শুরু করেছেন।”

এছাড়া বাজেটে মোবাইল কোম্পানির আয়ের উপর সর্বনিম্ন শুল্ক ০.৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ শতাংশ করার নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে তাইমুর বলেন, “এর ফলে যেসব মোবাইল কোম্পানি এখনও লাভজনক নয়, সেগুলোর করের বোঝা আরও বেড়ে যাবে এবং শেয়ার হোল্ডাররা বিনিয়োগ করতে নিরুৎসাহিত হবে।”

মোবাইল টেলিযোগাযোগ শিল্প সংশ্লিষ্ট খাতে কর আরোপের প্রস্তাবকে ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছে রবি।

তারা বলেছেন, প্রস্তাবিত কর ব্যবস্থার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য বাস্তবায়নে মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাতের গুরুত্ব একটি বড় হোঁচট খাবে।

“ইতোমধ্যে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাত উচ্চ করের বোঝায় জর্জরিত, যা বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ। বিদ্যমান কর কাঠামোতেই বাজারে টিকে থাকা চারটি অপারেটরের মধ্যে তিনটিকেই বছরের পরে বছর লোকসানের বোঝা টেনে যেতে হচ্ছে। লোকসান গুনলেও এতদিন তিন অপারেটরের বিনিয়োগকারীদের অনেকটা বাধ্য হয়েই দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে নূন্যতম কর দিয়ে আসতে হচ্ছিল। এবারের তা বাড়িয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে, যা আমাদের যারপরনাই হতাশ করেছে।”

সব ধরনের মোবাইল পরিষেবা গ্রহণে সম্পূরক শুল্ক হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত ডিজিটাল সেবা গ্রহণে আগ্রহী সব গ্রাহককে বাড়তি চাপে ফেলবে বলে মনে করছে রবি।

“এখন নতুন মোবাইল সংযোগ যারা কিনছেন, তাদের বেশিরভাগই সমাজের সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে প্রতিনিধিত্ব করেন। তাদের ওপর ১০০ টাকার বাড়তি সিম কর ও বাড়তি ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বোঝা হয়ে দাঁড়াবে । এমন পদক্ষেপ জাতিসংঘ ঘোষিত এবং সরকার অনুমোদিত এসডিজি অর্জনের পথকে রুদ্ধ করবে।”

প্রস্তাবিত কর হার পুনঃবিবেচনার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে বাংলালিংক ও রবি।