সুদ আর বেতনই বাজেটের এক-চতুর্থাংশ

শেখ হাসিনার সরকারের এ মেয়াদের প্রথম বাজেটের চার ভাগের এক ভাগই ঋণের সুদ এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা মেটাতে খরচ হবে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 June 2014, 02:57 PM
Updated : 8 June 2014, 05:24 PM

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ৫ জুন সংসদে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মোট বাজেটের ৩১ হাজার ৪৭ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ৪ শতাংশই খরচ হবে সরকারের নেয়া ঋণের সুদ পরিশোধে।

আর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ২৯ হাজার ৯৭৫  কোটি টাকা খরচ হবে, যা মোট ব্যয়ের ১২ শতাংশ।

এ দুই খাতে মোট খরচ হবে ৬০ হাজার ২২ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় ২৫ শতাংশ।

গত অর্থবছরের আগে পর্যন্ত বাজেটের সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ হতো বাজেটের সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ হতো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়।

কিন্তু ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে সুদ পরিশোধেই সবচেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।

বিদায়ী অর্থবছরে মূল বাজেটে সুদ পরিশোধ বাবদ খরচের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৭ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে বরাদ্দ ৩১ হাজার ৪৭ কোটি টাকার মধ্যে মেয়াদী ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ১২ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা।

চলতি ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে পাঁচ হাজার ১০ কোটি টাকা। জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদে যাবে নয় হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। ভবিষ্যৎ তহবিলের সুদ শোধে ব্যয় হবে এক হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এছাড়া ডাক জীবন বীমা ও অন্যান্য সুদে খরচ হবে চার কোটি টাকা।

এক হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা চলে যাবে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে।

সরকারের এই ঋণনির্ভরতার সমালোচনা করে তা থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সরকারের রাজস্ব আদায় আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এরপরও আমরা ঋণ নির্ভরতা থেকে বের হয়ে আসতে পারছি না। ঋণ নিয়ে কোথায় কীভাবে খরচ করা হচ্ছে তার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকা উচিৎ।”

ঋণের টাকায় আসলেই কোনো উন্নয়ন হচ্ছে কি না, নাকি ওই অর্থ অপচয় হচ্ছে- তা ‘দেখার সময় এসেছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, “বাজেটের চার ভাগের এক ভাগই যদি সুদ পরিশোধ এবং বেতন-ভাতায় চলে যায়, তাহলে  সরকার অন্য খাতের খরচ মেটাবে কি দিয়ে?”

প্রস্তাবিত বাজেটের সংক্ষিপ্তসারে রাজস্ব ব্যয়ের বিশ্লেষণে দেখা যায়, অর্থমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা খাতে তিন হাজার ২৭৩ কোটি এবং কর্মচারীদের বেতনের জন্য ১০ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছেন।

এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাতার জন্য রাখা হয়েছে ১৫ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা।

বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে কর্মকর্তাদের বেতন বাবদ তিন হাজার ৬৪ কোটি, কর্মচারীদের বেতনের দশ হাজার ৭৪১ কোটি এবং ভাতার জন্য বরাদ্দ ছিল ১২ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা।

জায়েদ বখত বলেন, অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকেই নতুন বেতন কাঠামোয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

“সে কারণেই এ খাতে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।”

বছর বছর সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে কেন জানতে চাইলে জায়েদ বখত বলেন, “অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি উভয় উৎস থেকে আগের নেয়া ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। তার সঙ্গে নতুন নতুন ঋণের সুদও যোগ হচ্ছে।

“ঘাটতি মেটাতে ঋণনির্ভরতা কমাতে না পারলে সুদ পরিশোধের এই মাশুল দিয়ে যেতেই হবে।”

অন্যান্য ব্যয়

সরবরাহ ও সেবা খাতের খরচের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৩ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। মেরামত ও সংরক্ষণ বাবদ রাখা হয়েছে পাঁচ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা।

ভর্তুকি ও প্রণোদনায় বরাদ্দ বেড়েছে এক হাজার দু’শ কোটি টাকার মতো।

এ খাতে নতুন বাজেটে ১৬ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। বিদায়ী বাজেটে যা ছিল ১৫ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা।

অবসর ভাতা এবং আনুতোষিক খাতে ব্যয় বেশ খানিকটা বেড়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ছয় হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে তা আট হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা রাখা হয়েছে।

ঋণের চিত্র

এবারের ৬৭ হাজার ৫৫২ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৪৩ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

ব্যাংক থেকে নেয়া হবে ৩১ হাজার ২২১ কোটি টাকা। আর ব্যাংক বহির্ভূত উৎস অর্থাৎ সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হবে ১২ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে বৈদেশিক উৎস থেকে ২৬ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২৫ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ২৯ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা করা হয়েছে।