বাজেট লক্ষ্যবিলাসী: সিপিডি

২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে খাত ভিত্তিক উদ্যোগকে ইতিবাচক বললেও লক্ষ্য অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ(সিপিডি)।

শেখ আবদুল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2014, 12:09 PM
Updated : 6 June 2014, 12:11 PM

সংস্থাটি বলছে, বাজেটে সরকারি অর্থায়ন কাঠামো যেভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে তা অত্যন্ত দুর্বল। তবে আর্থিক উদ্যোগগুলো (কর, ভ্যাট ইত্যাদি) সময়োপযোগী।  

তারা বলছে, সব মিলিয়ে গুণগত মানে এটি একটি ‘গড়পড়তা’ বাজেট। আর লক্ষ্যগুলোর বিষয়ে তাদের মন্তব্য, ‘লক্ষ্যবিলাসী’ বাজেট।

শুক্রবার ‘জাতীয় বাজেট ২০১৪-১৫, সিপিডির পর্যালোচনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়।

রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই পর্যালোচনা তুলে ধরেন সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, “বাজেটে জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। এই প্রবৃদ্ধির যৌক্তিক ভিত্তি কি?

“কারণ বিনিয়োগ লক্ষ্য অর্জন ছাড়া এই প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে না। বাজেটে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আগামী অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২৪ থেকে ২৫ শতাংশ হবে, যা বর্তমানে ২১ শতাংশ আছে।

“অর্থাৎ বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ৪ থেকে ৫ শতাংশ বাড়ানো হবে। কিন্তু এটা সম্ভব নয়। কারণ এই পরিমাণ বিনিয়োগ হতে গেলে ৭৫ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত বিনিয়োগ হতে হবে। সেজন্য যে আনুষঙ্গিক সুবিধা দরকার তা নেই।”

এর আগে এক অর্থবছরে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ দেড় থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কখনোই তা ৪ শতাংশ বাড়েনি।

এছাড়া বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে  তার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন রাখেন দেবপ্রিয়।  

এদিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৪১ শতাংশ বেড়েছে। বাজেট অর্থমন্ত্রী ৮২ হাজার কোটি টাকার এডিপি বরাদ্দ প্রস্তাব করেছেন। এডিপিতে এক হাজার ৩৪টি প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব আছে, আর ৬৪৮টি প্রকল্প আছে বরাদ্দ ছাড়া। এই বিশাল এডিপি বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে সিপিডি।

তারা বলছে, সরকারের প্রসাশনিক কাঠামোতে এমন কোনো সংস্কার করা হয়নি, যাতে এই বিশাল এডিপি বাস্তবায়ন হবে।

অন্যদিকে ঘাটতি পূরণের জন্য ৪০০ কোটি ডলারের বিদেশি অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বলে মনে করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

“কারণ বর্তমানে বিদেশি যেসব অর্থ পাইপলাইনে আছে সরকার সেগুলোই ব্যবহার করতে পারছে না।”

প্রবৃদ্ধির হারের ক্ষেত্রে ২০০৪-০৫ অর্থবছরকে ভিত্তিবছর এবং অন্যান্য হিসাবের ক্ষেত্রে 0১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরকে ভিত্তিবছর ধরায় পরিসংখ্যানের ‘দ্বৈত’ ব্যবহার হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এতে একধরনের ধ্রুমজাল তৈরি করবে।”

দেবপ্রিয় বলেন, “যেসব আর্থিক কাঠামো ধরে প্রাক্কলন করা হয়েছে তা অত্যন্ত দুর্বল। বিশেষ করে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা, বৈদেশিক অর্থায়ন ও ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা অত্যন্ত দুর্বল। একারণে এই বাজেটকে লক্ষ্যবিলাসী বাজেট বলা যেতে পারে।”

তিনি বলেন, এবারের বাজেটে সুদ ব্যয় বেড়েছে। মোট বাজেটের ১২ দশমিক ৪ শতাংশ সুদ ব্যয় ধরা হয়েছে। অপরদিকে থোক বরাদ্দও বাড়ানো হয়েছে। অপর দিকে ভর্তুকি কমানোর চেষ্টা রয়ছে বাজেটে।  

প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের আর্থিক সঙ্গতি ফিরিয়ে আনা, জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গতি সৃষ্টি, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়ানো ও মূল্যষ্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

বাজেটে কর ও ভ্যাট নিয়ে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবের প্রশংসা করেন দেবপ্রিয়।

তবে ব্যক্তি খাতের কর মুক্ত আয় সীমা বাড়িয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছে সিপিডি।

সংস্থাটি বলছে, মূল্যষ্ফীতির ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবং অন্যান্য খাতে যতটা বাড়ানো হয়েছে তাতে ব্যক্তি খাতের করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা যৌক্তিক নয়।

তবে বেশি আয়ের লোকদের আয়ের ওপর যে করারোপ করা হয়েছে তা যৌক্তিক বলে মনে করে তারা।

সামগ্রিক বাজেট বাস্তবায়ন ও আর্থিক খাতে গতি আনতে চারটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে সিপিডি।

এগুলো হলো-পরিসংখ্যান কমিশন, কৃষি মূল্য কমিশন, স্থানীয় সরকার অর্থায়ন কমিশন ও সরকারি ব্যয় নিরীক্ষা কমিশন।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “সরকারকে রাজনৈতিক পরিবেশ উন্নত করতে হবে। পাশাপাশি বড় বড় অবকাঠামো বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। নতুবা আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জিত হবে না।”

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, গবেষক গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।