‘সে গেছে সেই দেশে, যেখানে ধর্ষণ নেই’

বিডিনিউজ২৪
Published : 30 Dec 2012, 06:09 AM
Updated : 30 Dec 2012, 06:09 AM

ঢাকা, ডিসেম্বর ৩০ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- দিল্লির বাসে গণধর্ষণের শিকার সেই মেয়েটির শেষকৃত্য যখন চলছে, তখন পূব আকাশে উঁকি দিচ্ছে নতুন দিনের সূর্য।

এই নতুন দিনে মেয়েটির পরিবারের মতো ক্ষোভ আর শোকে স্তব্ধ পুরো ভারতবাসীর বুঝি একটিই প্রার্থনা- আর কারো যেন এমন পরিণতি না হয়।

বিবিসির খবরে বলা হয়, রোববার ভোর সোয়া ৪টায় একটি বিশেষ বিমানে করে সিঙ্গাপুর থেকে নয়াদিল্লির ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দরে পৌঁছায় সেই তরুণীর মরদেহ। হাজারো মানুষের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও কংগ্রেস প্রধান সোনিয়া গান্ধীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এর ঘন্টাখানেকের মধ্যেই মেয়েটির শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সিনেমা দেখে ফেরার পথে দিল্লির একটি বাসে গণধর্ষণের শিকার হয় ২৩ বছর বয়সী সেই মেডিকেল ছাত্রী। এ সময় তার সঙ্গে থাকা এক বন্ধুকেও ব্যাপক মারধর করে ধর্ষণকারীরা। গণধর্ষণের পর মেয়েটিকেও ব্যাপক মারধর করা হয়।

এরই এক পর্যায়ে চলন্ত বাস থেকে তাদের দুজনকেই ছুড়ে ফেলা হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়ে থাকা দুজনকে পরে ভর্তি করা হয় দিল্লির সফদরজঙ্গ হাসপাতালে।

তিনটি বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের পরও অবস্থা ক্রমেই সঙ্কটাপন্ন হয়ে ওঠায় মেয়েটিকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ২৭ ডিসেম্বর। এর তিন দিনের মাথায় শনিবার ভোরে মারা যায় মেয়েটি।

ধর্ষণের ঘটনার পর ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল পুরো ভারত। লড়াকু মেয়েটির মৃত্যুর খবর যখন পৌঁছায়, পুরো ভারতজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া।

দিল্লি হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সর্বাঙ্গে ব্যথা নিয়েও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দুইবার জবানবন্দি দিয়েছিল মেয়েটি। ধর্ষণের ওই ঘটনা এবং ধর্ষণকারীদের বিস্তারিত বর্ণনাও দিয়ে যান তিনি।

ধর্ষণকারীদের যে বিচার চান, তাও ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেছিলেন ওই তরুণী।

ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী মারা গেলেও তার পরিবার চায়, তার এই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হলেও ভারতের ভূমি যেন নারীদের জন্য নিরাপদ হয়। যেন আর কারো জন্য এই ধরনের পরিণতি না আসে।

চলন্ত বাসে সেই গণধর্ষণের ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় পুলিশ। মেয়েটির মৃত্যুর ফলে হত্যা মামলার আসামি হিসাবে এখন তাদের মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, একটি সোনালি রঙা কফিনে বন্দি মেয়েটির লাশ নিয়ে একটি গাড়িবহর বিমানবন্দর থেকে দিল্লির জানকপুরি এলাকায় চলে যায়। ওই এলাকাতেই মেয়েটির পরিবারের বসবাস, কিছুদিন আগে পরিবারের সবার সঙ্গে মেয়েটিও সেখানেই ছিল।

এই নৃশংস ঘটনা প্রবল নাড়া দিয়েছে ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে।

মেয়েটির এই মৃত্যুকে 'বীরের মৃত্যু' অভিহিত করেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। ধর্ষকদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর অঙ্গীকারও তিনি ব্যক্ত করেছেন।

ক্ষমতাসীন জোট সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চার (ইউপিএ) সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার।

সোনিয়া বলেন, "আমাদের দেশের সব নারীকে সুরক্ষা দিতে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমাদের পূর্ণ শক্তি এবং আইন ও প্রশাসনের শক্তি দিয়ে লড়াই চালানোর সিদ্ধান্ত আমাদের।"

"ওই তরুণীর লড়াই বৃথা যাবে না", বলেন তিনি।

সংগ্রামী এ তরুণীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শনিবার রাতে ইন্ডিয়া গেটসহ পুরো ভারতজুড়ে প্রদীপ জ্বালায় ভারতবাসী। সেই মোমের শিখায় মিশে ছিল ক্ষোভ, ধর্ষকদের প্রতি ঘৃণা।

মোমবাতি হাতে ইন্ডিয়া গেইটের কাছে দাঁড়ানো এত তরুণীর অন্য হাতে দেখা যায় একটি পোস্টার, যাতে লেখা- 'সে মরেনি, শুধু চলে গেছে সেই দেশে, যেখানে ধর্ষণ বলে কিছু নেই।'

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এবি/জেকে/১০৪৯ ঘ.