৫০ পেরোনো বাংলাদেশে তরুণদের আগামীর ভাবনা

বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসে তরুণ-যুবার দ্রোহ আর আত্মত্যাগই গড়ে দিয়েছিল স্বাধীনতার পথ; স্বাধীন বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে আগামীর দিকে তাকিয়ে কী ভাবছে আজকের তরুণরা?  

সাবিকুন্নাহার লিপিসাবিকুন্নাহার লিপিরাসেল সরকার, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2021, 06:28 PM
Updated : 26 March 2021, 11:26 AM

স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ জনগোষ্ঠীর হাত ধরেই ‘উন্নত-সমৃদ্ধ’ নতুন আগামীর স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। এই নবীনেরা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আর জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন, অর্থনৈতিক মুক্তি আর মাথা উঁচু করে বাঁচার প্রতিশ্রুতি তাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দেয়

তাদের বিচারে, স্বাধীন দেশ হিসেবে অভ্যুদয়ের ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন কম নয়। আগামী দিনে দুর্নীতি, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বৈষম্য, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্ষণ, অপরাজনীতি আর মত প্রকাশে বাধার মত সঙ্কটকে পেছনে ফেলে আরও এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্রে তারা উজ্জীবিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র আদনান তুর্য বললেন, “মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, কিন্তু রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ইতিহাস পড়েছি। শুনেছি যুদ্ধের গৌরবগাঁথা আর হানাদার-রাজাকারদের নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা। রুমী, আজাদ, বদি- ক্র্যাক প্ল্যাটুনের সেই তরুণ গেরিলারা আজও অনুপ্রাণিত করে।

“স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করছি… আমরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে জাতিকে একমত দেখতে চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে চাই।”

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনকে একটি বড় প্রাপ্তি হিসেবে দেখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাসমিন জাহান অর্পিতা।

তার ভাষায়, “সামরিক শাসন আর স্বৈরাচারের চরম দুঃসময় পেরিয়ে দেশ আজ অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার কাজ এখনও শেষ হয়নি।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিদ্দিক ফারুকের কাছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের নিশ্চয়তায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ সমান গুরুত্বপূর্ণ।

ফারুক বলেন, “সামাজিক অবক্ষয়, নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ দিন দিন লোপ পাচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশকে এই অবচয় থেকে উদ্ধার করা জরুরি।”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নূর ইসলাম টিপু মনে করেন, অব্যবস্থাপনা আর দুর্নীতি দেশের অগ্রগতির বড় বাধা।

তিনি বলেন, “এই বাধা দূর করতে সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সৎভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে পাশের জনও যাতে একই মূল্যবোধ বজায় রাখে।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দীন মহির মতে, বাংলাদেশ ৫০ বছর পূর্ণ করলেও ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বেড়েই চলছে। তার চাওয়া একটি ‘সাম্যের বাংলাদেশ’।

আগামী দিনের বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব ও পরিকল্পিত নগর চান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী কাজী সামিয়া রহমান।

তার মতে, একটি সুন্দর সমাজ গড়তে প্রত্যেককে নিজের জায়গায় সৎ থাকার পাশপাশি অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। 

অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়ার প্রতিজ্ঞা নিয়ে যে দেশটি স্বাধীন হয়েছিল, সেখানে আজও সাম্প্রদায়িকতার আস্ফালন দেখে কিছুটা হতাশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর হাসান।

তার প্রশ্ন- “কেন আজও সমাজে এতো বৈষম্য, অনাচার, নিপীড়ন, দুর্নীতি, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব? মানুষ কেন আজও স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারবে না?”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নবাব আব্দুল রহিম জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার ওপর জোর দিচ্ছেন। পাশাপাশি বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস চর্চায় ভূমিকা রাখতে চান তিনি।

আর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহিবুল্লাহ সাকিব বলেছেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে পরমত সহিষ্ণু, মানুষের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধানকারী একটি দেশ, এটাই তার প্রত্যাশা।

একটি বৈষম্যহীন, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কাজ করতে চান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর প্রথমবর্ষের ছাত্র রাশেদুজ্জামান হৃদয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয়বর্ষের ছাত্রী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরুলেও নারীর জন্য একটি নিরাপদ সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি।

“এদেশে ধর্ষণ রোধে কড়া আইন থাকলেও সমাজের বড় অংশের মনোভাব এখনও নমনীয়। শিক্ষাঙ্গনে দুর্নীতি আর তরুণদের বেকারত্ব এখনও বড় সমস্যা।”

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী পল্লব সিয়াম বলেন, “স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের একজন তরুণ হিসেবে আমি চাই বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে একটি স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত এবং জবাবদিহিতা সম্পন্ন রাষ্ট্রের প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা দিক।”

ইডেন মহিলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী লুৎফুন্নাহার ফুরকান বিচার বিভাগসহ সবস্তরে বাংলার প্রচলন দেখতে চান। ভাষার বিকৃতি এবং ইতিহাসের বিকৃতি রোধে কাজ করতে চান। এদেশের পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীর জন্যও কাজ করতে চান এ শিক্ষার্থী।

ঢাকার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আরিফুল ইসলাম আকাশ চান কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার।

ঢাকার মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মালিহা চৌধুরী অর্নি এমন দেশ চায় যেখানে কোনো অপরাধ থাকবে না; নারীর নিরাপদ চলাফেরার অধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে।

আর গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা শিশু নিকেতন অ্যান্ড মডেল হাই স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহামুদুল হসান নূর বাংলাদেশের হয়ে নেতৃত্ব দিতে চায় বিশ্বমঞ্চে।