সব শেষ মঙ্গলবার রাজধানীর নদ্দা এলাকায় বাস চাপায় বেসরকারি ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহত হন।
রাজধানীতে আলোচিত বেশিরভাগ দুর্ঘটনায় বাসের জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।
গত বছরের ৩ এপ্রিল কারওয়ান বাজারে দুই বাসের রেষারেষিতে পড়ে হাত বিচ্ছিন্ন হয় তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজিব হোসেনের। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ এপ্রিল মারা যান রাজিব।
২০ এপ্রিল রাতে বনানীতে রাস্তা পার হওয়ার সময় বিআরটিসির একটি বাসের চাপায় ২১ বছর বয়সী ওই তরুণী রোজিনার ডান পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ এপ্রিল মারা যান রোজিনা।
গত বছর বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল দেশের বিভিন্ন স্থানে।
ওই সময় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রেখে তড়িঘড়ি করে সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় সরকার। তবে তাতেও সড়কে থামেনি মৃত্যুর মিছিল।
গত বছর ডিসেম্বরে গুলশানের শাহজাদপুরে বাসচাপায় স্কুলছাত্রী, বিজয় সরণীতে বাসের ধাক্কায় অটোরিকশা আরোহী এক তরুণ, অক্টোবরে দুই বাসের মধ্যে চাপা পড়ে এক তরুণ, এরও আগে সেপ্টেম্বরে বাসের চাপায় একাত্তর টেলিভিশনের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের মৃত্যু হয়।
বুয়েটের এআরআই জানাচ্ছে, ২০১৬ সালের মার্চ থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৬৬টি দুর্ঘটনায় ৬৯৯ জন নিহত এবং এক হাজার ২২৭ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫৪টি দুর্ঘটনাই বাসের কারণে ঘটেছে।
এছাড়া ১৩০টি মোটরসাইকেল, ১১৩টি ট্রাক, ৭৩টি পিকআপ এবং ৫৬টি ব্যক্তিগত গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে বলে এআরআইর তথ্য।
গত বছর বাসের চাপায় পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর বাঁচানো যায়নি রোজিনাকেও
২০১৬ সালের মার্চ থেকে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ১২৩টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৩৭ জন, আহত হয়েছেন ৩৩৭ জন।
২০১৭ সালে ঢাকায় ২৬৩টি দুর্ঘটনা ঘটার তথ্য দিচ্ছে এআরই। তাতে ২৭৬ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি ৩৫৮ জন আহত হয়েছিল। সে বছর ১৪৫টি দুর্ঘটনায় বাসের সম্পৃক্ততা ছিল।
২০১৮ সালে ঢাকায় ২৮০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৮৬ জন নিহত হয়। আহত হয়েছিল ৫৩২ জন। সে বছর ১৩৪টি দুর্ঘটনার কারণ বাস।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্ঘটনার সংবাদ পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ।
ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলার কারণেই বেশিরভাগ দুর্ঘটনায় বাস জড়িয়ে যাচ্ছে জানান তিনি।
মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, এসব যানের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
“ঢাকা শহরে বাসের সিস্টেমটা একটু বিশৃঙ্খল। বাসের চালকরা অনিয়ন্ত্রিত, বেপরোয়া চলাচল করে বেশি। যাত্রীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস চালায়। তাদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণগুলো বেশি হয়।”
তিনি বলেন, ঢাকায় দুর্ঘটনা ঘটানোর ক্ষেত্রে বাসের পরই রয়েছে ট্রাক ও মোটর সাইকেল।
গতবছর দুই বাসের চাপায় হাত হারিয়ে না ফেরার দেশে তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেন
“ঢাকার নানা কোম্পানির নামে চলাচলকারী বাসগুলো বিভিন্ন মালিকের। এজন্য তারা প্রতিযোগিতা করে। তারা একটি কোম্পানির নাম নিয়ে চলে। দৈনিক চুক্তিতে চলাচলের কারণে এগুলো প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। যে কারণে দুর্ঘটনা বেশি হয়।
“আমাদের কাউন্টার সিস্টেম নাই, ফলে দিন শেষে চালক যে টাকা দিত মালিককে তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হতো। ফলে মালিকরা চালকদের সঙ্গে চুক্তিতে চলে গেছে। এ কারণে চালকরা বেশি আয়ের আশায় প্রতিযোগিতা করে।”
দুর্ঘটনার দ্বিতীয় কারণ হিসেবে চালকের অদক্ষতার কথা বলেন তিনি।
“ঢাকা শহরে বেশিরভাগ চালকই পাকা লাইসেন্সধারী না, অনভিজ্ঞ। তারা লেগুনা, পিকআপসহ হালকা যানবাহনের চালক। ভারী লাইসেন্সধারী চালকরা ঢাকায় গাড়ি চালাতে আসে না। ফলে দক্ষ চালকের অভাবে মালিকরা তাদের (অদক্ষ) হাতে গাড়ি তুলে দিচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে।”
নানা চেষ্টা করেও এই প্রবণতা রোধ করা যায়নি বলে স্বীকার করেন এই পরিবহন ব্যবসায়ী।
“এ কারণে আমরা চুক্তিভিত্তিক চলাচল বন্ধের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কাউন্টার না থাকায় সেটি করা যায়নি। না পারায় আবার চুক্তিতে চলে গেছে। এখন বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি চালু হলে এ সমস্যার সমাধান হবে।”
আরও খবর-