ঢাকা, নভেম্বর ০৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- জেল হত্যাকাণ্ডের পুনর্বিচারের জন্য সর্বোচ্চ আদালতে সরকারের আবেদনের ওপর শুনানি ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করেছে আদালত।
মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে আদালত মুলতবি করা হয়।
প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের আপিলের আবেদনের ওপর দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি শুরু হয়।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জেল হত্যা মামলার নতুন বিচার দাবি করে বলেন, "এ মামলার ঘটনা বিকৃত করা হয়েছে।"
আদালত বলেন, "নতুন বিচার করতে হলে মামলা নিু আদালতে পাঠাতে হবে। হাইকোর্ট ও নিু আদালতের রায় বাতিল করতে হবে। সেক্ষেত্রে যারা সাজা পেয়েছে তাদের সাজাও বাতিল হয়ে যাবে।"
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আনিসুল হক শুনানিতে বলেন, "জেল হত্যার আগে বঙ্গভবনে ষড়যন্ত্র হয়েছে। এর ফলে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। খন্দকার মোশতাক আহমেদ অন্যান্য সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে এই ষড়যন্ত্র করেছেন।"
তিনি শুনানিতে আরো বলেন, "এ মামলার বিচারে নিু আদালতে বাধা বিপত্তি এসেছে। বিচার প্রভাবিত করা হয়েছে। এজন্য ন্যায়বিচার পাইনি।"
আদালত তাকে এ বিষয়টি মামলার নথিপত্র থেকে দেখাতে বলেন।
আনিসুল হক জবাবে বলেন, "আমি রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলির পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলাম। পদত্যাগপত্রে এ বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করেছি।
আদালত আনিসুল হককে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাতে বলেন।
আদালত বলেন, "সন্তুষ্ট না হয়ে কোনো বিশেষ আদেশ দেওয়া যায় না।"
আদালত শুনানি ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করেন এবং বিচার প্রভাবিত করার অভিযোগের পক্ষে নথিপত্র হাজির করার জন্য মৌখিক নির্দেশ দেন।
এর আগে রোববার প্রথম দিনের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল, আনিসুল হক ও আসামি পক্ষের কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আল মামুন বক্তব্য রাখেন।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি শেষে বহু প্রতীক্ষিত জেল হত্যামামলারও চূড়ান্ত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হলো।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর তার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়।
জাতীয় চার নেতা হত্যামামলার অধিকাংশ আসামি আদালতের রায়ে খালাস পাওয়ায় এর পুনর্বিচারের বিষয়টি উঠে এসেছে। চার নেতার সন্তান আওয়ামী লীগ নেতারা সে দাবি করে আসছেন।
এ মামলার আসামিদের মধ্যে কয়েকজনকে বঙ্গবন্ধু হত্যামামলায় ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। তবে তাতেও মামলার গুরুত্ব কমেনি বলে মনে করেন আনিসুল হক।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "জেলহত্যা মামলার আদর্শ ও গুরুত্ব ভিন্ন। কারণ রাষ্ট্রের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া জাতীয় চার নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এজন্য এ মামলার গুরুত্ব রয়েছে।"
জেল হত্যাকাণ্ডের পর মামলা দায়েরের ২৩ বছর পর আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় গেলে ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. মতিউর রহমান রায় দেন।
রায়ে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন (পলাতক), দফাদার মারফত আলী শাহ (পলাতক) ও এল.ডি. (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধাকে (পলাতক) মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু হত্যামামলার ফাঁসির আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদাসহ ১৫ জনকে। খালাস পান বিএনপি নেতা কেএম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুর।
এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাইকোর্ট ২০০৮ সালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি মারফত আলী ও হাশেম মৃধাকে অব্যাহতি দেয়। রায়ে মোসলেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারুক, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকেও খালাস দেয় হাইকোর্ট।
হাইকোর্ট বহাল রাখে আট সেনা কমকর্তার সাজা। তারা হলেন- খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এমএইচএম বি নূর চৌধুরী, এএম রাশেদ চৌধুরী, আহমদ শরিফুল হোসেন, আবদুল মাজেদ, মো. কিসমত হোসেন ও নাজমুল হোসেন আনসর।
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আপিলের আবেদন (লিভ টু আপিল) করে সরকার।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এটি/কেএমএস/১২৩৮ ঘ.