বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধি
বাগেরহাট, ডিসেম্বর ২৫ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ঘূর্ণিঝড় দুর্গত বাগেরহাটে জাল, নৌকা কিংবা কৃষি সরঞ্জাম হারিয়ে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষের একটি বড় অংশ এখন ত্রাণের আশায় ছুটছে। ফলে উপদ্রুত বাগেরহাটের অনেক এলাকাতেই শ্রমিক সঙ্কট প্রকট হয়ে উঠছে।
বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ ও ত্রাণ কাজে সম্পৃক্ত বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘরবাড়ি ও সম্পদ হারিয়ে অথবা প্রয়োজনীয় উপকরণ ও সুযোগের অভাবে কর্মবিমুখ হয়ে পড়েছেন অনেকে। আবার সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণের আগে নিজেদের পেশায় ফিরতে চাচ্ছে না কেউ কেউ। দুর্গত এলাকাগুলোতে ত্রাণের লাইনে এমন অনেক মানুষকে দেখা যাচ্ছে যারা ঝড়ের আগে অন্য এলাকায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ঘূর্ণিঝড়ের পর ত্রাণের আশায় বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তারা ত্রাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছেন।
শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নের উত্তর সাউথখালী গ্রামের হারুন হাওলাদার আগে সাগরে মাছ ধরতেন। গত ১৫ নভেম্বর জলোচ্ছ্বাসে তার মাছ ধরার নৌকাটি ভেসে যওয়ার পর থেকে ঘরে বসেই দিন কাটছে তার।
হারুন বলেন, "অন্য কাজ পারি না। তাই রোজগার বন্ধ। সরকারী ত্রাণ যা পাচ্ছি তাই দিয়েই পরিবার পরিজন নিয়ে দিন কাটাচ্ছি।"
একই গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক জানান, তার ২৫টি মাছ ধরা নৌকায় প্রায় দেড়শ জেলে কাজ করত। ঝড়ে তার সবগুলো নৌকাই ভেসে গেছে। নৌকার অভাবে জেলেদের সাগরে পাঠাতে না পারায় নিজের ও তার ওপর নির্ভরশীল জেলেদের রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
অন্যের মাঠের কাজে সাহায্য করে সংসার চালাতেন একই ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামের আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, "এলাকার অধিকাংশ জমির ধান ঝড়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। জমির মালিকরা কাজে ডাকে না। সাহায্য যা পাওয়া যাচ্ছে তাই বসে খাচ্ছি।"
সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, তার ইউনিয়নে ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। ঝড়ে তার এলাকার প্রায় সবাই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারত সরকার এ ইউনিয়নে সাড়ে ছয় হাজার ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণ করে দেয়ার প্রতিশ্র"তি দিয়েছে। স্থানীয় অনেক মানুষ আশায় আছে, তার ঘরটিও ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
আনোয়ার হোসেন মনে করেন, স্থানীয়দের যত দ্রুত সম্ভব কাজে ফেরানো দরকার।
তিনি বলেন, কৃষির পাশাপাশি এই এলাকার মানুষ বনজীবী ও মৎস্যজীবী। সিডর এদের অধিকাংশকেই নিঃস্ব করে গেছে। এখন তাদের কাজে ফিরিয়ে আনতে হলে হালের বলদ, জাল, নৌকাসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ দিতে হবে। সুন্দরবনে প্রবেশের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করায় বনজীবীদের বিকল্প পেশায় সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।
শরণখোলার ধানসাগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজাহান দুলাল জানান, ঝড়ে অধিকাংশ জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু সিডরের কবল থেকে বেঁচে যাওয়া শত শত হেক্টর জমির রোপা আমন এখন পেকে মাঠে পড়ে নষ্ট হচ্ছে লোকের অভাবে। এখনই এসব ফসল কেটে ঘরে তুলতে না পারলে কৃষকরা দারুণ ক্ষতির মুখে পড়বে।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহ নেওয়াজ তালুকদার মনে করেন, বেসরকারি সংগঠন ও দাতা সংস্থাগুলো কাজের বিনিময়ে বিভিন্ন কর্মসূচি শুরু করলে পরিস্থিতি বদলাতে পারে। ঝড়ে পড়ে থাকা গৃহস্থ বাড়ির গাছ কেটে সংরক্ষণের উপযোগী করার মতো বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়ারও প্রস্তাব করেন তিনি।
মোরেলগঞ্জের পৌর চেয়ারম্যান মনিরুল হক তালুকদার বলেন, "ত্রাণের অপেক্ষায় অলস সময় কাটানো মানুষকে কাজে সম্পৃক্ত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ত্রাণের বিনিময়ে গ্রহিতার নিজের বাড়ি পরিষ্কার করাতেও আমি প্রস্তুত। কিন্তু সরকারি কোনো নির্দেশ না পাওয়ায় আমি কিছু করতে পারছি না।"
এদিকে কাজ না থাকায় এবং শ্রমজীবী মানুষ কর্মবিমুখ হয়ে পড়ায় এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে জেলার অর্থনীতির ওপর। কৃষক মাঠের ধান ঘরে তুলতে শ্রমিক পাচ্ছে না। রিক্সাচালক ও দিনমজুর মিলছে না বাগেরহাট শহরে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভেঙে যাওয়া ঘর মেরামতের জন্য বেশি টাকা দিয়েও ঘরামী ও মিস্ত্রি পাচ্ছে না অনেক পরিবার। শ্রমিকের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও।
সাউথখালী এলাকায় রাস্তায় মাটি ভরাটের কাজ পেয়েছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লাভলু এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী আজমল হোসেন মুক্তা। এ কাজে ৬৫ জন শ্রমিকও নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু কোথাও ত্রাণ দেয়ার খবর পেলেই কাজ ফেলে ত্রাণের জন্য ছুটতে শুরু করে তারা। এ কারণে পরে সাতক্ষীরা থেকে শ্রমিক এনে কাজ শুরু করেন বলে জানান মুক্তা।
বাগেরহাট সদর উপজেলার গোটাপাড়া ও বেমরতা ইউনিয়ন এবং কচুয়া উপজেলার মঘিয়া ও ধোপাখালী ইউনিয়নের কয়েকজন জমি মালিক জানান, শ্রমিকের অভাবে তারা জমির ধান কাটতে পারছেন না।
আমন ধান কাটা বা বোরো চাষের ক্ষেত্রে শ্রমিক সঙ্কট প্রসঙ্গে বাগেরহাট কৃষি স