ত্রাণ কিংবা ঋণ নয়, সৈকতের শুটকি ব্যবসায়ীরা চান স্থায়ী অবকাঠামো

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতের সবগুলো শুটকি কারখানা উড়িয়ে নিয়েছে ঘূর্ণিঝড়। ঝড়ের পর ধার-দেনা করে নতুন করে অনেকে আবার কারখানা চালু করছেন। তবে আবার যদি ঝড় আসে- সে ভয়ে বেশি বিনিয়োগেও সাহস পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। তাই ঝড় এলেও ক্ষয়ক্ষতি যেন কম হয় সে জন্য স্থায়ী অবকাঠামো চায় তারা। ঝড়ের পর বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম এর আবু নোমান সজীব ওই এলাকায় গেলে শুটকি ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে এ অনুরোধ টুকুই পৌঁছে দিতে বলেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2007, 02:59 AM
Updated : 14 Dec 2007, 02:59 AM
আবু নোমান সজীব
বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক
কুয়াকাটা থেকে ফিরে
ঢাকা, ডিসেম্বর ১৪ (বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম)- পটুয়াখালীর খেপুপাড়া উপজেলার মহীপুরের জেলে সিদ্দিক মৃধা সচ্ছল জীবনের স্বপ্নে সারা জীবনের জমানো সঞ্চয় এক লাখ টাকা এবং কয়েকজনের কাছ থেকে সুদে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে শুটকি তৈরির কারখানা দিয়েছিলেন। তিন মাস আগেই আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে কারখানাটি চালু করেন। দিনরাত পরিশ্রম করে চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে শুটকি বিক্রি করে চলতি মৌসুমেই পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করে দেবেন বলে আশা ছিল সিদ্দিকের। কিন্তু প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় তার সব স্বপ্ন তছনছ করে দিয়েছে।
কুয়াকাটা বেড়িবাঁধের বাইরে সমুদ্রের গা ঘেঁষা সিদ্দিকের কারখানাটি ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। জলোচ্ছ্বাস ভাসিয়ে নিয়েছে ক্যাশবাক্সে থাকা মাছ বিক্রির ৬০ হাজার টাকাও। সিদ্দিক ও তার কর্মচারীরা ওই রাতে কোনরকমে সাঁতরে বেড়িবাঁধের ওপরে আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে ঠাঁই নেন। পরদিন সকালে ফিরে এসে কাঠ ও টিনের তৈরী কারাখানা ভবনের একটি কাঠের টুকরাও খুঁজে পায়নি।
গত ২৮ নভেম্বর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের শুটকি পল্লীতে গিয়ে দেখা গেল, তিন কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে বাঁশ-কাঠ জোগাড় করে কারখানাটিকে আবার দাঁড় করানোর সংগ্রামে নেমেছেন সিদ্দিক। ঝড়ের ১৩ দিনের মাথায় একটি ছোট্ট ঘর আর কয়েকটি বাঁশ দিয়ে মাছ শুকানোর মাচা বানিয়ে কারাখানাটি প্রায় চালুও করেছেন তিনি। তবে ঝড়ের আগে কারখানায় প্রতিদিন গড়ে ২০ জন কর্মচারী কাজ করলেও এখন সেই সংখ্যা নেমে এসেছে তিনে। আর আগে শুটকী তৈরীর জন্য প্রতিদিন ২০ মনের বেশি মাছ কেনা হলেও এখন তার পরিমাণ এক থেকে দুই মন।
সিদ্দিক বললেন, "মোর আশা ছেলো পুলা দুইডার যেন আমার মতন জীবন বাজী রাইখা সমুদ্রে মাছ ধইরা না খাইতে হয়। তাই খাইয়া, না খাইয়াও পুলা দুইডারে লেখাপড়া শিখাইতাছিলাম। মাসে তিনশ টাকা খরচ কইরা বাড়িতে মাস্টার রাখছি। অহন মাস্টারের টেকা দেওন তো দূরের কথা, দুই বেলা ভাত জোটানই মুশকিল হইয়া পড়বো।"
সিদ্দিকের দুই ছেলের মধ্যে বড় পিয়ারুল (১৬)। সে নবম শ্রেণীতে এবং ছোট ছেলে কামাল (১২) পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে।
সিদ্দিক জানান, ঝড়ে সব ভেসে গেলেও পাওনাদাররা তো আর ছেড়ে দেবে না। যে করেই হোক সে টাকা পরিশোধ করতে হবে। তাই এলাকার পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে স্থানীয় কৃষি ব্যাংক থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে নতুন করে ব্যবসা চালুর চেষ্টা করছেন তিনি। তবে কখন আবার জলোচ্ছ্বাস আসে