সকালে ভোটার উপস্থিতি নগণ্য

সংসদ নির্বাচনে ৮৭ শতাংশ ভোট পড়লেও উপজেলা নির্বাচনে সকালে ভোটার উপস্থিতি কম চোখে পড়ছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন উপজেলার ভোট কেন্দ্রে ভোট পড়েছে খুবই সামান্য। সাভার, চট্টগ্রাম ও গাজীপুরের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র ঘুরে বিস্তারিত জানাচ্ছেন সায়াদুল ইসলাম তালাত, রুহুল আমিন রানা এবং রিয়াজুল বাশার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2009, 11:25 PM
Updated : 21 Jan 2009, 11:25 PM
ঢাকা, জানুয়ারি ২২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সংসদ নির্বাচনে ৮৭ শতাংশ ভোট পড়লেও উপজেলা নির্বাচনে সকালে ভোটার উপস্থিতি কম চোখে পড়ছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন উপজেলার ভোট কেন্দ্রে ভোট পড়েছে খুবই সামান্য।
সাভার, চট্টগ্রাম ও গাজীপুরের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র ঘুরে বিস্তারিত জানাচ্ছেন সায়াদুল ইসলাম তালাত, রুহুল আমিন রানা এবং রিয়াজুল বাশার।
সাভার উপজেলার হেমায়েতপুরের আল নাসির ল্যাবরেটরি স্কুল কেন্দ্রে প্রথম এক ঘন্টায় ভোট পড়েছে ৫০ টিরও কম।
এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ডা. কাজী রকিবুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সংসদ নির্বাচনের তুলনায় এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির হার অনেক কম। কেন্দ্রে ভোটার নেই বললেই চলে। তবে আশা করছি, রোদ উঠলেই ভোটার সংখ্যা বাড়বে।"
সিংগাইল হরিণধরা সরকারি প্রথমমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটারের চেয়ে সেখানে নিরাপত্তা রক্ষীর সংখ্যাই বেশি।
এ কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার সিদ্দিকুর রহমান বলেন, "শীত ও কুয়াশার কারণে হয়ত সকালে ভোটার কম। দুপুরের পরে ভোটার সংখ্যা বাড়বে বলে আমরা আশা করছি।"
এ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বাজার করতে এসেছিলোম। তাই ভোট দিলাম। তবে আমার পরিবার ভোট দিতে আসবে কিনা তা জানিনা।"
ভোট দেওয়ার বিষয়ে এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, কয়েকদিন আগেই তো ভোট দিলাম। আবার কিসের ভোট।
অনেকে জানিয়েছেন, তারা প্রার্থীদের চেনেন না।
রসুল মিয়া নামের এক ভোটার জানান, বাজার সদাই করে দুপুরের দিকে ভোট দিতে যেতে পারি।
একই দৃশ্য দেখা গেছে সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ কেন্দ্রেও। শহরের থানারোডে অবিস্থত এ কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি নেই বললেই চলে।
এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার হাসানুজ্জামান বলেন, "এ কেন্দ্রে ভোটার আছেন ৩৩ শ ৫৬ জন। তবে প্রথম ২ ঘন্টায় ভোট পড়েছে ২০০ এরও কম। সংসদ নির্বাচনের সময় প্রথম দু ঘন্টায় এ কেন্দ্রে সাড়ে আটশর মত ভোট পড়েছিল।"
উপজেলা নির্বাচনে কেন এত কম ভোট পড়ছে জানতে চাইলে তিনি জানান, কিছুদিন আগে একটি বড় নির্বাচন হওয়ায় ভোটাররা সম্ভবত এ নির্বাচনের বিষয়ে আগ্রহ পাচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, "শীতের জন্য ভোটার সংখ্যা কম বলে আমার মনে হচ্ছে না। আবার কেউ ভয় ভীতি দেখানোই ভোটাররা কেন্দ্রে আসছে না বলেও মনে হয় না।"
এ কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষারত এক ভোটার ইমতিয়াজ বুলবুল বলেন, "এখনও ভোট দেইনি। তবে পরে দিতে পারি।"
তার পরিবারের অন্য কোন সদস্য ভোট দিতে আসবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "না।"
তার মতে, সরকার গঠন তো হয়েই গেছে। এখন ভোট দিয়ে আর কি লাভ।
এ কেন্দ্রের সাতটা বুথের কোন কোনটাতে একজন ভোটারও নেই। পোলিং অফিসার রুবাবা পারভীন বলেন, "ভোটার নেই তারপরও আমাদের বসে থাকতে হয়। গত আধ ঘণ্টায় একজনও ভোটার আসেনি।"
সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রের বাইরে দলের নেতা কর্মীদের উপস্থিতি থাকলেও এবার তাদেও দেখা নেই।
এবার সাভার উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ১৪ জন এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২০জন (১০ জন পুরুষ ও ১০ জন মহিলা) প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চট্টগ্রাম জেলার ১৪টি উপজেলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ভোটগ্রহণ চলছে। তবে বেশ কিছু কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুবই কম।
পটিয়া উপজেলার পটিয়া এ জে চৌধুরী কলেজ ও তালিমুল হক মাদ্রাসা কেন্দ্র, আনোয়ারা উপজেলার আনোয়ারা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও বশিরুজ্জামান স্মৃতি শিক্ষা কেন্দ্র, বাঁশখালী উপজেলার পূর্ব বৈলগাঁও কেন্দ্র এবং সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাট কে এম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে প্রথম দুই ঘণ্টায় ভোটার উপস্থিতি খুবই কম।
কেন্দ্রগুলোর প্রিজাইডিং অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম দুই ঘণ্টায় ভোটারদের উপস্থিতি ৭ শতাংশেরও কম।
গত সংসদ নির্বাচনে প্রথম ঘণ্টাতেই ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ভোট পড়েছিল।
সকাল সাড়ে নয়টার সময় দেখা গেছে, আনোয়ারা উপজেলার আনোয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ১০টি বুথের মধ্যে ৪টিই ফাঁকা। এছাড়া অন্য বুথের লাইনে দাাঁড়িয়ে ছিলেন মাত্র ৩৮ জন ভোটার এবং এদের মধ্যে ১১ জন নারী।
এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আখতারুজ্জামান জানান, কেন্দ্রের মোট ভোটার ৩৪২৩ জন এবং প্রথম ঘণ্টায় মাত্র ১৭২ টি ভোট পড়েছে।
তিনি আশঙ্কা করছেন, দুপুর পর থেকে একসঙ্গে সব ভোটার আসতে শুরু করলে তারা চাপের মুখে পড়বেন।
এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, একজন ভেটারকে একসঙ্গে তিনটি ভোট দিতে হবে। এতে সময় বেশি লাগবে।
সহকারি রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাস জানান, সকাল থেকে তিনি ১৫টি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। কোনো কেন্দ্রেই প্রথম দুই ঘণ্টায় ৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি।
তিনি আরো বলেন, "এখনও বলা যাচ্ছে না। তবে দিন শেষে যদি ৪০ শতাংশ ভোট না পড়ে তাহলে আবার ভোটগ্রহণ করা হবে।"
জেলার মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ লাখ ১১ হাজার।
গাজীপুর শহরের মুন্সীপাড়া এলাকায় অবস্থিত মদিনাতুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা খুবই কম। এ কেন্দ্রের পোলিং অফিসারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা অলসভাবে বসে আছেন।
এ কেন্দ্রে দায়িত্বপালনরত গাজীপুর সদর থানার এ এস আই মিঠু শেখ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ভোটারের উপস্থিতি খুবই কম। সহিংসতার কোন ঘটনাও ঘটেনি।"
এ কেন্দ্র ভোট দিয়ে বেরিয়ে রিপন দেবনাথ নামের এক ভোটার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "উপজেলা নির্বাচন তো তাই গুরুত্ব কম, জনগণ ভোট দিতে আসছে না।"
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসআইটি/আরএআর/আরবি/এমডি/এফএফ/জিএনএ/১১২৩ ঘ.