'ট্রানজিটে সাশ্রয়ের অর্থ চাওয়া ঠিক হবে না'

ট্রানজিটের জন্য ফি নেওয়ার পক্ষে হলেও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী আবারো বললেন, ট্রানজিট ব্যবহার করে ভারতের যে অর্থ সাশ্রয় হবে, তার ভাগ চাওয়া ঠিক হবে না।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2011, 03:49 AM
Updated : 12 Sept 2011, 03:49 AM
ঢাকা, সেপ্টেম্বর ১২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ট্রানজিটের জন্য ফি নেওয়ার পক্ষে হলেও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী আবারো বললেন, ট্রানজিট ব্যবহার করে ভারতের যে অর্থ সাশ্রয় হবে, তার ভাগ চাওয়া ঠিক হবে না।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সোমবার ওয়েস্টিন হোটেলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। রিজভী বাংলাদেশ জার্মান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ আয়োজিত আলোচনায় বক্তব্য দেন।
ট্রানজিট ব্যবহার করে ভারতের যে সাশ্রয় হবে, তার ভাগ চাওয়ার দাবি বাংলাদেশের অনেকেই করছেন। এ দাবির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে গওহর রিজভী বলেন, "তা হলে তো সুয়েজ খাল ব্যবহারের কারণে আফ্রিকা ঘুরে না যাওয়া সব জাহাজকে বেঁচে যাওয়া খরচের অর্থ মিসরকে দিতে হবে।"
"আমরা দেখতে চাই, তারা আমাদের এ স্থাপনা ব্যবহার করছে এবং তার জন্য ট্রানজিট ফি দিচ্ছে", বলেন তিনি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরে ট্রানজিট নিয়ে সম্মতিপত্র বিনিময়ের কথা ছিলো। কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়ায় ট্রানজিটের আলোচনাও আর এগোয়নি।
ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, এ দুদেশের সম্পর্ক পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতার ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
"গত ৪০ বছরে আমরা তাদের ওপর আস্থা রাখতে পারিনি। কিন্তু আস্থা ফিরে পেতে শুরু করায় এ সরকারের আমলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে।"
প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে শত্র"তার নীতিতে সুফল আসে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, এক্ষেত্রে আস্থা রাখা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
তিস্তা চুক্তি
গওহর রিজভী বলেন, ভারতের কারণে তিস্তা চুক্তি সই হয়নি। কিন্তু স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম এজন্য সরকারকে দায়ী করছে।
মনমোহন সিংয়ের সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির প্রস্তুতি থাকলেও শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে তা হয়নি।
"তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় আমরা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ব্যর্থ বলতে পারি না", বলেন তিনি।
তিস্তা চুক্তি না হওয়ার জন্য সরকারি দলের নেতারাও প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা রিজভী ও মশিউর রহমানকে দায়ী করছেন।
রিজভী বলেন, সাম্য ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে তিস্তার পানি বণ্টনের কথা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন। ওই চুক্তি সই হওয়ার বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এখন রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে।
বিদ্যুৎ
মনমোহনের এ সফরে ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ চুক্তিতে উভয় দেশ সম্মত হয়েছে বলে রিজভী জানান।
তিনি বলেন, কাঠমাণ্ডু বা থিম্পুকে নিয়ে ঢাকা ও দিল্লির ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ বিনিময় চুক্তিতে রাজি হয়েছে ভারত।
ভুটান অতিরিক্ত ২৫ হাজার এবং নেপাল অতিরিক্ত ৮০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে এমন ভাবনা অতিরঞ্জিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
"বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকা কোনো দেশ থেকে অন্য যে কোনো দেশ বিদ্যুৎ কিনতে পারবে।"
বাণিজ্য
রিজভী বলেন, ভারতে তৈরি পোশাকের ৪৬টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের ঘোষণা ১১০ কোটি মানুষের বাজারে নিজেদের অবস্থান করার একটা সুযোগ দেবে।
"এতে ভারতের বাজারে ঢুকতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে বিদেশিরা আকৃষ্ট হবে।"
ভারতের বাজারে ৬১টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়েছিলো বাংলাদেশ। তার মধ্যে ৪৬টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের অনুমোদন দেয় ভারত। ৪৪০টি বাংলাদেশি পণ্য এখনো ভারতের কালো তালিকাভুক্ত।
স্থল সীমান্ত
প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ছিটমহল বিনিময় এবং অপদখলীয় ভূমি সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধান হতে যাওয়ায় দুদেশের সীমান্ত বিরোধের অবসান হতে চলেছে।
"দুই দেশ এতদিন ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার এলাকার সীমান্ত রেখা চিহ্নিত করতে পারেনি। কিন্তু এখন তার সমাধান হয়েছে।"
দ্রুততার সঙ্গে সীমান্তবিরোধ নিরসনে গত ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ সালের স্থল সীমান্ত চুক্তির ওপর একটি প্রটোকলে সই করে বাংলাদেশ ও ভারত।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএসজেড/এএইচ/এমআই/১৯৩৪ ঘ.