'সুরটা কেটে দিলো তিস্তা'

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে মতৈক্য না হওয়ায়ই প্রাধান্য পেয়েছে সে দেশের সংবাদ মাধ্যমে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2011, 10:56 PM
Updated : 6 Sept 2011, 10:56 PM
ঢাকা, সেপ্টেম্বর ০৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- মনমোহন সিং আসবেন, দেখবেন, জয় করবেন- ভাবনাটা এমন থাকলেও তিস্তা সুরটাই কেটে দিয়েছে- ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর নিয়ে মূল প্রতিবেদনে এ কথা লিখেছে কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা।
ভারতে সর্বাধিক পঠিত এ বাংলা দৈনিকের মতোই ছিলো অন্য খবরের কাগজগুলোর শিরোনাম। ঘুরেফিরে সবাই মনমোহনের সফরে তিস্তার ছায়াপাতের কথাই তুলে ধরেছে।
বহুপ্রতীক্ষিত সফরে মঙ্গলবার ঢাকায় পা রাখেন মনমোহন, সঙ্গে চারটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কথা ছিলো এ সফরে তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি বণ্টন চুক্তি হবে। হবে ট্রানজিট নিয়ে সম্মতিপত্র বিনিময়ও। প্রথমটিতে আগ্রহ ছিলো ঢাকার, আর দ্বিতীয়টিতে দিল্লির।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আপত্তিতে পানি বণ্টন চুক্তি আটকে যায়, এরপর হয়নি ট্রানজিটের সম্মতিপত্র বিনিময়ও। শুধু পারস্পরিক সহযোগিতার একটি রূপরেখা চুক্তি হয়েছে।
আনন্দবাজার তাদের বুধবারের সংস্করণে আট কলামে মূল শিরোনাম করেছে- 'তিস্তা বিতর্কেই বন্দি সফর'। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- "এত দিনের আলোচনার পরও তিস্তা চুক্তি কেন হচ্ছে না, সেটা জানতে ভারতীয় হাইকমিশনার রাজীত মিত্রকে ডেকে পাঠান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস।
"তাই দীপু মনি যখন সোনারগাঁও হোটেলে মনমোহনের সঙ্গে দেখা করতে এলেন অথবা মনমোহন যখন শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গেলেন, তখন বড় দাদার ছোট ভাইকে ঔদার্য দেখানোর বদলে তিস্তা চুক্তি করতে না পারার ব্যাখ্যা দিতে হলো ভারতকে।"
'তিস্তা চুক্তি না হওয়াটা বাংলাদেশের মননে ভারতবিরোধী অনুভূতি উস্কে দিয়েছে'- এটাও বলেছে আনন্দবাজার। তারা আরো লিখেছে- আগামী দিনে তিস্তা চুক্তি হবে না, এমনটা নয়। তবে এ সফরে হলে ঢাকায় বিজয় উৎসব হতো।
'সংবাদ প্রতিদিন'র শিরোনামেও ছিলো তিস্তা। তবে ছিটমহল বিনিময় চুক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে তারা মূল প্রতিবেদনের প্রথম লাইন হচ্ছে- 'তিস্তার দুঃখ ঘুচিয়ে বাংলাদেশের হৃদয় জয় করলেন মনমোহন'।
তিস্তা নিয়ে আরেকটি প্রতিবেদনও ছাপিয়েছে তারা। তাতে রাজ্যের বিরোধী দল সিপিএম নেতা বিমান বসু চুক্তির বিরোধিতা করে মমতার অবস্থানকেই সমর্থন করেছেন। তিনি বলেছেন, চুক্তির আগে তা নিয়ে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা দরকার ছিলো।
কলকাতার 'বর্তমান' পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- "শুরুতেই তিস্তার জল বণ্টনের চুক্তি বাতিলের ছায়া পড়েছিলো মনমোহনের সফরে। তবে সে মেঘ সরিয়ে ঐতিহাসিক সীমান্ত চুক্তি হয়েছে।"
"তবে তিস্তার জল বণ্টন চুক্তি না হওয়ার মূল্য দিতে হয়েছে নয়াদিল্লিকে। তার জেরেই হয়নি ট্রানজিট চুক্তি", লিখেছে বিজেপি ঘেঁষা পত্রিকা বর্তমান।
অবশ্য এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেছেন, "আমাদের সম্পর্ক বিশ্বাসের ওপর। এটা না পেলে ওইটা দেবো না আমাদের সম্পর্ক সে রকম না।"
ত্রিপুরা রাজ্যের সর্বাধিক পঠিত দৈনিক 'সংবাদ' আট কলামে মূল প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছে- 'প্রত্যাশার ধারে কাছেও নেই প্রাপ্তি'। পানি বণ্টন ও ট্রানজিট চুক্তি না হওয়ায়ই তাদের এ প্রতিবেদনের মূল সুর। মনমোহনের সফরসঙ্গী রয়েছেন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার।
ভারতের সর্বাধিক পঠিত ইংরেজি দৈনিক টাইমস অফ ইন্ডিয়ার শিরোনামেও উঠে এসেছে তিস্তা। তারা লিখেছে, তিস্তা বাদ রেখে শুধু সীমান্ত সমঝোতা হলো মনমোহন-হাসিনার। তিস্তা চুক্তির জন্য বাংলাদেশ সরকারের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হাল না ছাড়ার বিষয়টিও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।
প্রভাবশালী দৈনিক 'দি হিন্দু' শিরোনাম করেছে- 'সীমান্ত সমস্যার সমাধান এলেও রয়ে গেলো পানি সমস্যা'। তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় বাংলাদেশের সরকারি পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলের অসন্তোষের কথাও তুলে ধরেছে তারা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমআই/১০৪৮ ঘ.