বাজেট উচ্চাভিলাষী, তবে বাস্তবায়নযোগ্য: বিশ্বব্যাংক

আগামী অর্থবছরে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি শিল্প ও কৃষিখাতে প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখতে হবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2011, 05:25 AM
Updated : 23 June 2011, 05:25 AM
ঢাকা, জুন ২৩ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উচ্চাভিলাষী হলেও তা বাস্তবায়নযোগ্য বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক।
এই সংস্থার জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হুসাইন মনে করেন, আগামী অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি শিল্প ও কৃষিখাতে ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে 'অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও অর্থবছরের বাজেট' শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, "এ বছর রপ্তানি খাতে ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কৃষিতে হয়েছে বাম্পার ফলন। এই ধারা অব্যাহত থাকলে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।"
এ জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও জরুরি বলে মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ৯ জুন জাতীয় সংসদে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকার এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন, যার আকার চলতি অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি।
চলতি অর্থবছরে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী অর্থবছরে এই হার ৭ শতাংশে পৌঁছাবে।
বাজেট প্রস্তাবে ২০১১-১২ অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতির হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। যদিও, চলতি অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি ইতোমধ্যে ৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
এই বাজেটে সার্বিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক উৎস থেকে ১৭ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ২৭ হাজার ২০৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ১৮ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে।
মুহিতের এই বাজেট প্রস্তাবকে 'দরিদ্রবান্ধব' বলে উল্লেখ করলেও বাজেটে ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ব ব্যাংকের জাহিদ হুসাইন।
তার মতে, এই ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে সরকার অতিরিক্ত টাকা ধার করলে বেসরকারি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
মুহিত বাজেট প্রস্তাবে যে ঘাটতি ধরেছেন তা জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ উল্লেখ করে জাহিদ বলেন, "এই টাকা কোথা থেকে আসবে তা গুরুত্বপূর্ণ।"
তিনি মনে করেন, বিদেশি সহায়তা ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাত ক্রমশ সঙ্কুচিত হতে থাকায় সরকারকে ব্যাংকের টাকার ওপরই নির্ভর করতে হবে। আর প্রস্তাবিত বাজেটে চলতি অর্থবছরের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি ব্যয় ধরা হলেও সার্বিক ঘাটতি দেখানো হয়েছে ওই ৫ শতাংশই।
অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্ব ব্যাংকের এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, "অর্থ সরবরাহে প্রবৃদ্ধি এখন ২৮ শতাংশ, যা খুবই বেশি। আসন্ন মুদ্রানীতিতে এ বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত।"
বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী ২৪ শতাংশ রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে কর প্রশাসনে সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন জাহিদ। একইসঙ্গে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্র বাড়ানোরও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
প্রস্তাবিত ৯৩০০ কোটি টাকা ভর্তুকির সুফল পেতে হলে ওই অর্থ সঠিক খাতে খরচ করার বিষয়েও গুরুত্ব দিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ।
তিনি বলছেন, সরকারের নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) উচ্চাভিলাষী। খাতওয়ারি বরাদ্দ ও বাস্তবায়নও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এবার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আগের তুলনায় অনেক বেশি সুনির্দিষ্ট হয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ সঞ্জয় কাঠুরিয়া বলেন, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাজারের চাপে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।
সরকার খাদ্যমজুদ ঠিক রাখতে শাস্য আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "এই মুহূর্তে পণ্যমূল্য কিছুটা কমছে বলে মনে হলেও তা কখনোই তিন বছর আগের অবস্থায় ফিরে যাবে না।"
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএসজেড/এএইচ/জেকে/১৯৩৪ ঘ.