রোববারের সংঘাতে এই জেলায় ২২ জনের মৃত্যুর তথ্য মিলেছে। তাদের মধ্যে ১৩ জন পুলিশ সদস্য, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের আছে ৩ জন।
Published : 04 Aug 2024, 09:41 PM
সিরাজগঞ্জে একটি থানায় হামলা করে পুলিশের ১৩ জন সদস্যকে হত্যার দিন আওয়ামী লীগের একটি কার্যালয়ে ঢুকে হামলা করে আরও ছয় জনকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
জেলার রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে একটি মতবিনিময় সভা চলাকালে এই হামলা হয় বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান।
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সরকার পতনের ‘এক দফা’ আন্দোলনের প্রথম দিন অসহযোগ কর্মসূচিতে দেশজুড়েই সংঘাত সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় সিরাজগঞ্জে।
জেলার এনায়েতপুর থানায় আক্রমণ করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর বের হতে থাকা পুলিশ সদস্যদের অন্তত ১৩ জনকে পিটিয়ে হত্যার কথা নিশ্চিত করেছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
জেলায় সব মিলিয়ে ২২ জনের মৃত্যুর তথ্য মিলেছে। পুলিশ সদস্য ছাড়া বাকি ৯ জনের মধ্যে একজন যুবদল নেতা, একজন সাংবাদিক, ছয় জন আছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
ইউএনও নাহিদ হাসান খান জানান, সকালে রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা মতবিনিময় সভা করছিলেন। একই সময়ে কার্যালয়ের সামনের মোড়ে বিক্ষোভকারীরা জমায়েত হয়।
এক পর্যায়ে এই বিক্ষোভকারীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও রায়গঞ্জ প্রেস ক্লাবে হামলা চালায়। তারা পিটিয়ে ও দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে ৪০ থেকে ৫০ জন নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করে।
নাহিদ বলেন, “আওয়ামী লীগ অফিসের হামলার ঘটনায় নিহত ৬ জনের মরদেহ কয়েকটি হাসপাতালে রয়েছে। আরও অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।“
সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের সুপারিন্টেনডেন্ট চিকিৎসক রতন কুমার বলেন, “হাসপাতালে ১৪ জন ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৭ জন গুলিবিদ্ধ।”
নিহতরা হলেন রায়গঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইলিয়াছ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আল আমিন, বহ্মগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার রিপন, একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসনাত টিটু ও দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি প্রদীপ কুমার ভৌমিক।
সিরাজগঞ্জ জেলা, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়েও হামলা হয়েছে। সেগুলো ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের চয়ন ইসলাম ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার, সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত মুন্নার বাসভবনেও হামলা হয়েছে।
বেলা একটার দিকে একটি মিছিল থেকে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালানো হয়। পুলিশ সদস্যরা তাদের প্রতিহত চেষ্টা করেও পারেননি। এক পর্যায়ে থানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই আগুন ছড়িয়ে যাওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা একে একে বের হয়ে আসেন।
তখনই তাদেরকে ধরে ধরে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
পুলিশ সদরদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, বাহিনীর প্রাণ হারানো সদস্যের সংখ্যাটি ১৩ জন।
পুলিশের রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) বিজয় বসাক বলেন, “নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।”
একই দিন হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা, সিরাজগঞ্জ শহরের বাজার স্টেশনের পুলিশ বক্সেও ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়।
এদিন জেলা শহরের বাজার স্টেশন, রেলগেট, মাড়োয়ারীপট্টি, ইলিয়ট ব্রিজ, এস এস রোড এলাকায় বিএনপি, নিষিদ্ধ জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
এসব সংঘাতে শহর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রঞ্জু খান, যুবদল কর্মী আব্দুল লতিফ ও ছাত্রদল কর্মী সুমন শেখের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু।
এদিন ডিসি কার্যালয়ে অবস্থিত ত্রাণ অফিসের গোডাউন ভাঙচুর করে মালামাল লুটপাট করা হয়েছে। আদালত চত্বর, সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় ও বাজার স্টেশনের রেলওয়ে অফিসেও ব্যাপক ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ শহরের সয়াধানগড়ায় দুইটি তেলের পাম্প ও একটি ওষুধ কারখানাসহ কয়েকটি দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়।
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে ১৩ পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা
প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় ১৩ পুলিশ হত্যা, ফাঁস দিয়ে মরদেহ ঝোলানো হয়