নিহত রিকশাচালক আবদুল হাকিম বাবা-মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে থাকতেন মধুবাগের একটি গলির টিনশেডের ঘরে। পাঁচ বছর আগে বগুড়ায় এক লাখ টাকায় বসতভিটা বেঁচে বোনকে বিয়ে দিয়ে, পরিবার নিয়ে নতুন জীবনের স্বপ্নে, ঢাকায় এসেছিলেন এই যুবক।
হাকিমের (২৫) বাবা ষাটোর্ধ্ব দুদু মিয়াও রিকশা চালাতেন। শারীরিক অসুস্থতায় এখন অক্ষম তিনি। ১০ বছর বয়সী আরেক ছেলে মঞ্জুরুলসহ মধুবাগের ওই বাসায় আছেন হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম (৬০)।
গত ঈদে হাকিম বাড়ির বাজার করে দিয়েছিলেন। মাকে দিয়েছিলেন নতুন শাড়ি। বাবা ও ভাইকেও কিনে দিয়েছিলেন নতুন জামা।
“এই ঈদে কিছু কিনি নাই। রান্নাও করি নাই। হাকিমের কথা ভাবি বুকটা খালি লাগিছে বাবা,” শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন মনোয়ারা।
বিরূপ আবহাওয়া আর শারীরিক অসুস্থতায় হাকিমের কবর জিয়ারত করতে যেতে পারেননি বাবা দুদু মিয়া।
ছেলের মৃত্যুর আগে এক বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন মনোয়ারা। সংসার চালাতে এখন কাজ করেন তিন বাসায়।
তাতে সংসার না চলায় ছোট ছেলে মঞ্জুরুলকে মধুবাগের একটি রিকশা গ্যারেজে কাজে দিয়েছেন মাসে দেড় হাজার টাকায়।
গত ১৩ এপ্রিল রাত ২টার দিকে নিউ ইস্কাটনে হাকিমের সঙ্গে দৈনিক জনকণ্ঠের অটোরিকশা চালক ইয়াকুব আলীও (৪০) নিহত হন। সাংসদ পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনির ছোড়া গুলিতেই তাদের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ।
এ ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছিলেন মা মনোয়ারা বেগম।
সে মামলার তদন্তে গিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনিকে (৪২) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ওই রাতে যানজটে আটকে ‘নেশাগ্রস্ত’ রনির বেপরোয়া গুলিতে দুজন নিহত হন বলে তদন্তের ভিত্তিতে দাবি করছে পুলিশ।
ছেলে হত্যার বিচার নিয়ে মনোয়ারা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি বাবা মামলা সম্পর্কে তেমন বুঝি না। মামলা এখন কোর্টে চলি গেছে শুনিছি।”
ওই রাতের ঘটনায় নিহত অটোচালক ইয়াকুবের বাড়িতেও নেই ঈদের ছোঁয়া।
বাসাবোর নন্দীপাড়ার বটতলা এলাকায় একমাত্র মেয়ে রুনি ও ছোট বোন আসমা বেগমের বাসার কাছাকাছি ছোট একটি বাসায় স্বামীর সঙ্গে কয়েক মাস আগেও থাকতেন ইয়াকুবের স্ত্রী সালমা বেগম (৩৫)।
কিন্তু স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পর বাসা ভাড়া কে দেবে? সংসার চালানোর খরচই বা আসবে কোথা থেকে? এসব সাত-পাঁচ চিন্তায় দুই হাজার টাকা ভাড়ার ঘরটি ছেড়ে দেন সালমা।
এরপর মেয়ে রুনীর সংসারে আশ্রয় নেন তিনি। সেখান থেকেই ঢাকা মেডিকেলে স্বামীর দেখাশোনা করতেন।
স্বামীর মৃত্যুর পর এখন ঠিকানা নিয়ে অনিশ্চয়তায় সালমা। ঈদ করেছেন ছোট বোন সালমার বাড়িতে।
“আগের ঈদে বাসায় পোলাও-মাংস রান্না করছিলাম। উনি (ইয়াকুব) নতুন পোশাক নিয়া আসছিলেন। এই ঈদে উনি তো আর নাই। কোন কিছু রান্না করি নাই। উনার জন্য দোয়া করতাছি।”
অশ্রুনয়নে একথা বলার পর কান্নার দমকে আর কিছু বলতে পারেননি সালমা।