নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুনের দুই মামলায় বাদীর নারাজি নাকচ করে কাউন্সিলর নূর হোসেন এবং র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছে আদালত।
Published : 08 Jul 2015, 11:04 AM
সেইসঙ্গে পলাতক ১৩ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ও তাদের মালামাল জব্দের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাদীর নারাজি আবেদনের শুনানি শেষে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইদুজ্জামান শরিফ বুধবার এই আদেশ দেন।
অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কেএম ফজলুর রহমান জানান, “বিচারক পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি এবং তাদের মালামাল জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া তদন্ত কর্মকর্তার আবেদন অনুযায়ী এজাহারের পাঁচ আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।”
গতবছর ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের ফতুল্লার লামাপাড়া থেকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় নিহত নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল মামলা দুটি দায়ের করেন।
হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর পর গত ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের আদালতে এই অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মামনুর রশিদ মণ্ডল।
তিনি এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করায় নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি গত ১১ মে নারাজি আবেদন করেন।
এই ৩২ জনের মধ্যে ২২ জনের নাম পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে রয়েছে। অভিযোগপত্রের বাইরে গ্রেপ্তার থাকা বাকি ১০ জনকে অব্যাহতির নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
মামলার ৩৫ আসামির মধ্যে ২২ জন কারাগারে, বাকি ১৩ জন পলাতক।
নারাজি আবেদন নাকচ হওয়ায় মামলার বাদী বিউটি ও তার আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা বলছেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত বলেন, “আমরা এই নারাজি আবেদন না মঞ্জুরে সংক্ষুব্ধ হয়েছি। আমরা এই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।”
নজরুলের স্ত্রী বিউটি বলেন, “এজাহারভুক্ত একজন আসামিকে গ্রেপ্তার ছাড়াই কীভাবে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অস্বাভাবিক জীবন যাপন করতে হচ্ছে। পাঁচটি পরিবারের মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চাই।”
অন্যদিকে আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়ির চালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় দায়ের মামলার বাদী চন্দনের জামাতা বিজয় কুমার পাল অভিযোগপত্রের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আটকের পর সেখানেই কারাগারে আটক রয়েছেন। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের একটি মামলায় সাজা হওয়ায় কাউন্সিলর পদ খুইয়েছেন তিনি।
জেলার পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, “পলাতক আসামিদের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রেপ্তারে উদ্যোগ নেওয়া হবে। ভারতের কারাগারে আটক নূর হোসেনকে ফেরত আনার সব রকম চেষ্টা চলছে।”
গতবছর লাশ উদ্ধারের পরপরই নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, র্যাবকে ৬ কোটি টাকা দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
নজরুলের শ্বশুর এই অভিযোগ তুললে দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় বয়ে যায়। নারায়ণগঞ্জে দায়িত্বরত র্যাব কর্মকর্তারা অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে বাহিনীর তদন্তেই অভিযোগের সত্যতা আসতে থাকে।
ওই তদন্তে উঠে এসেছে, এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জের ধরে নুর হোসেন র্যাবকে দিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক আরেক কাউন্সিলর নজরুলকে খুন করান।
হাই কোর্টের নির্দেশে পুরো ঘটনার তদন্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান আলী মোল্লাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। ওই কমিটি গত মার্চে উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
আসামি যারা
অভিযোগপত্রের প্রধান আসানি নূর হোসেন ও তার সহযোগী বন্দর উপজেলার কুড়িপাড়া এলাকার সেলিম ভারতের কারাগারে আটক।
নূর হোসেনের সহযোগী সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার সানা উল্লাহ, ম্যানেজার শাহ্জাহান ও জামাল উদ্দিন পলাতক রয়েছেন।
র্যাব-১১ এর সার্জেন্ট এনামুল কবীর, এএসআই কামাল হোসেন, কর্পোরাল মোখলেছুর রহমান, সৈনিক আব্দুল আলিম, মহিউদ্দিন মুন্সী, আল আমিন শরীফ, তাজুল ইসলাম ও কনস্টেবল হাবিবুর রহমান পলাতক।
কারাগারে আটক রয়েছেন র্যাব-১১ এর সাবেক ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানা, এস আই পূর্ণেন্দু বালা, এএসআই বজলুর রহমান ও আবুল কালাম আজাদ, হাবিলদার এমদাদুল হক ও নাসির উদ্দিন, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন ও বাবুল হাসান, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, বেলাল হোসেন, ল্যান্স কর্পোরাল রুহুল আমিন, সিপাহী আবু তৈয়ব, নুরুজ্জামান ও আসাদুজ্জামান নূর।
এছাড়া নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোর্তুজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী ও আবুল বাশার।
অব্যাহতি পাওয়া পাঁচজন
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়া, হাসমত আলী হাসু, আমিনুল ইসলাম রাজু, আনোয়ার হোসেন আশিক ও ইকবাল হোসেনের নাম অভিযোগপত্রে থাকলেও অভিযোগপত্রে নাম না আসায় তাদের অব্যাহতি দিয়েছে আদালত।