অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন সংশোধন হচ্ছে

মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনের বিষয়টি আরো স্বচ্ছ ও পরিষ্কার করে একটি আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2015, 10:58 AM
Updated : 29 June 2015, 10:58 AM

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনে বিভিন্ন সংজ্ঞা, জীবিত ও মৃত ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের পদ্ধতি, অঙ্গদাতা ও গ্রহনকারীর যোগ্যতা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনের পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয় বলা হয়েছে।

মেডিকেল টিম ছাড়া ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা দেওয়া যাবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে আইনে।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ২০১৫’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভুইঞা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ১৯৯৯’ এর আওতায় বর্তমানে মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন করা হয়। এ আইন থাকার পরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবৈধভাবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনের ঘটনা ঘটেছে।

“২০১১ সালে হাইকোর্ট নির্দেশনা দেয়, এই আইনটি প্রয়োগ যথাযথভাবে করা হচ্ছে না। সে কারণে এ আইনের আওতায় বিস্তারিত বিধিমালা প্রণয়ন করে আইনটি যথাযথ কার্যকর করা প্রয়োজন।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সে অনুসারে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিধিমালা প্রণয়ন করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। আইন মন্ত্রণালয় জানায় এখানে অনেক মৌলিক বিষয় রয়েছে যেগুলো আইনে থাকা উচিত। এর পর মন্ত্রণালয় নতুন একটি আইন করার উদ্যোগ নেয়।

মন্ত্রিসভা নতুন আইনে নীতিগত অনুমোদনের সঙ্গে কিছু অনুশাসনও দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মন্ত্রিসভা বলেছে, আগের আইনটি খুব বেশি পুরাতন নয়। যে সমস্ত নতুন বিষয় তারা এখানে নিয়ে এসেছেন, তার মধ্যে মৌলিক বিষয়গুলো আইনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সংশোধনের আকারে নিয়ে আসবেন, পদ্ধতিগত বা প্রয়োগিক বিষয়গুলো চলে যাবে বিধিমালায়।”

চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় তারা ‘মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন (সংশোধন) আইন, ২০১৫’ নামে নিয়ে আসবেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

আইন সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এখানে বিভিন্ন সংজ্ঞা দেয়া আছে, জীবিত ও মৃত ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের পদ্ধতি, ব্রেন ডেথ ঘোষণার ব্যাখ্যা, অঙ্গদাতা ও গ্রহনকারীর যোগ্যতা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনের পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে।”

আইনে বিভিন্ন কমিটি যেমন ট্রান্সপ্লান্ট কমিটি, মেডিকেল বোর্ড ও বিভিন্ন ধরনের কমিটির গঠনের কথা বলা আছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “আত্মীয়তা যাচাইয়ের জন্য যাচাই কমিটি থাকবে, এজন্য ইন্টার্নাল ও এক্সটার্নাল মেম্বার থাকবে, যিনি সার্জেন্ট তিনি কমিটিতে থাকবেন না। যাচাই কমিটির সিদ্ধান্ত আরো যাচাইয়ের প্রয়োজন হলে আরো উচ্চ বোর্ড থাকবে।

“প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে একটি মেডিকেল বোর্ড থাকবে এবং তাদের প্রত্যয়ন ছাড়া কোনো সংযোজন হবে না।”

ব্রেন ডেথ-এর ঘোষণার ব্যাখার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “মস্তিস্ক অকার্যকর হয়ে যাওয়ার পর কৃত্রিম উপায়ে বাঁচিয়ে রাখার সময় অর্থাৎ ব্রেন ডেথ এককভাবে কেউ ঘোষণা করতে পারবে না। টিমের মাধ্যমে এ ঘোষণা করতে হবে, এই টিমে যে হাসপাতালের রোগী আছে সে হাসপাতালের চিকিৎসক এবং বাইরের চিকিৎসক রাখতে হবে।

“অঙ্গ সংরক্ষণের পদ্ধতির কথা এখানে বলা আছে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে একজন সমন্বয়কারী থাকবেন যিনি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। এ সমন্বককারীকে আগে থেকেই সংযোজনের বিষয়ে জানিয়ে রাখতে হবে।

“একটি ট্রান্সপ্লান্ট কমিটি থাকবে। অধ্যাপক বা পরিচালকের নিচে কেউ এর সদস্য হবে না।  এই কমিটি থাকবে স্বাধীন; অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবেন তারা কেউ এই কমিটির মেম্বার হবেন না।”

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনে ডেটাবেজ একটি গোপনীয় বিষয় বলে বিবেচিত হবে এবং এখানে তথ্য প্রযুক্তি আইন প্রযোজ্য হবে না বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।   

“মিথ্যা তথ্য দিলে এখানে শাস্তির বিধান রয়েছে এবং ডেটাবেজ সংরক্ষণ করতে হবে বলেও আইনে রয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন চায়, তাহলে অনুমতি নিতে হবে। যদি একটি পার্টিকুলার সংযোজন করতে চায়, তাহলেও অনুমোদন নিতে হবে। এজন্য নির্ধারিত ফর্ম থাকবে, যাতে প্রয়োজনীয় তথ্য থাকবে।”

বর্তমান আইনে মিথ্যা তথ্য দিলে তিন বছর কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা ও লাইসেন্স বাতিলের বিধান রয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

আইনে কোনো শাস্তির মেয়াদে পরিবর্তন হচ্ছে কিনা সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “আইন পরিবর্তন হচ্ছে না কিছু বিষয় সংযোজন হচ্ছে। এ মুহূর্তে বলতে পারছি না, চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় আসলে বলা যাবে।”