বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, কারখানার ‘দুর্বল’ কর্মপরিবেশ ও শ্রম অধিকার লঙ্ঘন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ওপর ‘নিয়ন্ত্রণ আরোপ’কে বাংলাদেশের মানবাধিকারের অন্যতম সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
Published : 26 Jun 2015, 06:08 PM
২০১৪ সালে বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার এ বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
এতে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর ‘নির্যাতন’, সরকারি খাতে ‘বিস্তৃত দুর্নীতি’, ‘নির্বিচারে’ আটক, ‘দুর্বল’ বিচার ব্যবস্থা এবং বিচার চলাকালে দীর্ঘ সময় আটক রাখার মতো বিষয়কেও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির জন্য ‘গুরুতর সমস্যা’ বলা হয়েছে এতে।
প্রতিটি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির নিয়ে এই বার্ষিক প্রতিবেদনকে ভিত্তি ধরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সংশ্লিষ্ট দেশের ক্ষেত্রে তাদের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ করে থাকে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের জন্য নিরাপত্তা ও বৈদেশিক সহায়তাও নির্ভর করে এই প্রতিবেদনের উপর।
প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে বলা হয়েছে, ‘দুর্বল’ বিচার ব্যবস্থার কারণে সরকারি কর্মকর্তারাও মানবাধিকার লঙ্ঘনে উৎসাহী হচ্ছেন।
“আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হত্যায় জড়িত থাকার মতো অভিযোগের তদন্তে সীমিত তৎপরতা দেখা গেছে।”
এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরি বলেন, প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার অক্ষুণ্ন রাখতে সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে তাদের পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। জনগণের মৌলিক অধিকার সমুন্নত রাখতে তার সরকার চাপ দিয়ে যাবে।
প্রতিবেদনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ‘শান্তিপূর্ণ’ ছিল বলে মন্তব্য করা হয়। বিএনপির অনুপস্থিতিতে ওই নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিল।
বাংলাদেশ বিষয়ে ৪২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনের সারাংশে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সহিংসতার কথা তুলে ধরে বলা হয়, সব দল অংশ না নেওয়ায় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এই নির্বাচনকে ‘বিতর্কিত ও আন্তর্জাতিক মানের হয়নি’ বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।
বাংলাদেশকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দেশ হিসেবে বর্ণনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটিতে রয়েছে প্রাণবন্ত সুশীল সমাজ এবং বহুমাত্রিক সংসদীয় গণতন্ত্র।
রাজনৈতিক সহিংসতা ও দলীয় অন্তঃকোন্দলকে বাংলাদেশের জন্য ‘গুরুতর সমস্যা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
“কিছু বেসরকারি সংগঠনের কার্যক্রমে আইনি ও অনানুষ্ঠানিক বাধা এসেছে। নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বাল্যবিবাহ একটি বিদ্যমান সমস্যা। প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন অনানুষ্ঠানিক খাতে আর্থিক দৈন্যতা বা পাচারের মাধ্যমে অনেক শিশু কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।”
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিশুরা বৈষম্যমূলক আচরণের মুখোমুখি হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, “সামাজিকভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সহিংসতার শিকার হচ্ছে। যদিও অনেক রাজনীতিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের মতে এসব ঘটনা ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য নয় বরং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”