ভোটের দিন সাধারণ ছুটি বাদ দেওয়ার চিন্তা ইসির

নির্বাচনের দিন সাধারণ ছুটি ভোটারদের উপস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে যুক্তি দেখিয়ে তা বাদ দেওয়ার চিন্তা চলছে নির্বাচন কমিশনে।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2015, 04:12 PM
Updated : 16 June 2015, 07:36 AM

তবে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই সাধারণ ছুটি বাদ দেওয়ার উদ্যোগকে ‘আজগুবি’ বলছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা।

ভোট দেওয়ার সুবিধায় বাংলাদেশে সব নির্বাচনে সাধারণ ছুটি থাকে। সংসদ নির্বাচনের সময় সারাদেশেই ছুটি থাকে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময়ও সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় থাকে ছুটি।

নির্বাচনী আইনে কোনো নির্দেশনা না থাকলেও সাধারণত নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে সাড়া দিয়েই ভোটের দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করে।

কিন্তু বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে নির্বাচনের দিন ছুটি দেওয়া হয় না এবং বাংলাদেশে ছুটি থাকায় ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম থাকে যুক্তি দেখিয়ে এই ছুটি না রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন একাধিক নির্বাচন কমিশনার।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের নির্বাচন পরিদর্শন শেষে ভোটের দিন ‘সাধারণ ছুটি’ না রাখার বিষয়ে নোট দিয়েছেন কমিশনার আবু হাফিজ।

যুক্তরাজ্য ও শ্রীলঙ্কার নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে কমিশনার জাবেদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটের দিন ছুটি রাখার প্রয়োজন রয়েছে কি না, তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। এ নিয়ে আমরা বসব।”

সম্প্রতি তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও মাগুরা সংসদীয় উপ-নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এতে ভোটার উপস্থিতি তো ৩৪-৪৪ শতাংশ। ছুটি না থাকলে এ উপস্থিতি হয়ত আরও বাড়ত। এখন তো ছুটি থাকলে অনেকে ঘরে বসে থাকে কিংবা বেড়াতে চলে যায়।”

জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারকও দুই নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাধারণত রোববার বা বৃহস্পতিবারকে জাতীয় নির্বাচনের ভোটের দিন ঠিক করা হয়। এতে সরকারি দুদিনের ছুটির সঙ্গে মিলে তিন দিনের ছুটির সুযোগ তৈরি হয়।

“সারা দেশে তো নিয়মিতই ভোট হচ্ছে, হবে- তাই বলে প্রতিদিন ছুটি রাখতে হবে? এতে রাষ্ট্রেরই ক্ষতি হয়। এতদিন রীতি কিংবা প্রথা মনে করে ভোটের দিন ছুটি রাখা হয়েছে। এখন তা না রাখলে তো কোনো অসুবিধা নেই।”

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ভোটের আগে-পরে ৪৮ ঘণ্টা যান চলাচল ও অননুমোদিত ব্যক্তিদের চলাচল এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যাতে অনেকটা ‘ছুটির’ আমেজ তৈরি হয়। নতুন করে ছুটি ঘোষণার দরকার পড়ে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটের ছুটি রাখা হবে কি না, তা শিগগির কমিশনের সভার আলোচ্যসূচিতে রাখা হবে। এতে উপস্থাপনের জন্য কার্যপত্র তৈরির কাজ চলছে।”

ভোটের দিন ছুটি না রাখার পরিকল্পনাকে ‘আজগুবি’ বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক সিইসি এ টি এম শামসুল হুদা।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটের ছুটি বাদ দেওয়া- এটা আজগুবি চিন্তা। ছুটি বাদ দিলে সাধারণ মানুষই এর বিরোধিতা করতে পারে। পরে মানুষের চাপেই তা বহাল রাখতে হতে পারে।”

আবহমানকাল থেকে সব সময় ভোটের দিন ছুটি রাখা হচ্ছে উল্লেখ করে শামসুল হুদা বলেন, “ছুটি না থাকলে ভোটাররা ভোট দিতে যাবে কী করে?”