ফের আরপিও সংশোধনের উদ্যোগ ইসির

সংসদ নির্বাচন পরিচালনার মূল আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের জন্য নির্বাচন কর্মকর্তাদের মতামত চেয়েছে নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2015, 02:18 PM
Updated : 10 June 2015, 04:11 PM

এ মাসের মধ্যেই ইসির পাঁচ শতাধিক নিজস্ব কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে তাদের প্রস্তাব দিতে হবে। ইতোমধ্যে মত চেয়ে চিঠি জারি করা হয়েছে।

এর মধ্যে দিয়ে প্রথমবারের মতো দেশের নির্বাচনী আইনে সংশোধনের বিষয়ে মাঠ কর্মকর্তাদের মতামত নিতে যাচ্ছে নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি।

এর আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের মতামত না নিয়ে বর্তমান ইসি একদফা আরপিও সংশোধন আনে।

ইসি সচিবালয় ও মাঠ কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সংসদ নির্বাচন পরিচালনার মূল আইন রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অর্ডার, ১৯৭২ (আরপিও) বিভিন্ন সময়ে সংযোজন ও বিয়োজনের পর বর্তমানে ৯৫টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। আইনটি যুগোপযোগী করার জন্য বাস্তবতার নিরিখে কোনো অনুচ্ছেদ সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন করা প্রয়োজন কিনা-যাচাই করে মতামত দেওয়ার জন্য আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে অনুরোধ করা হলো।

“মতামত দেওয়ার সুবিধার্থে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা তার অধীনস্থ জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে এবং জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তার অধীনস্থ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে প্রস্তাব পাঠাবেন। এছাড়া ইসি সচিবালয় ও নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে মতামত দেবে।”

এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্বাচনী আইনটি ‍যুগোপযোগী করতেই নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের প্রস্তাব চাইছি আমরা। তাদের প্রস্তাবনাগুলো পেলে পর্যালোচনা করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

তবে রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ও বেসরকারি সংস্থার মতামত নেওয়ার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।

“আইন সংস্কার নিয়ে সংলাপ করা হবে কিনা তা সিইসির নেতৃত্বে পুরো কমিশন ভেবে দেখবে। তবে আমি মনে করি, নিবন্ধিত দলগুলোর মতামত নেওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে সংলাপ করা হবে নাকি প্রস্তাবগুলো পাঠিয়ে এ  বিষয়ে তাদের মতামত নেওয়া হবে- তা পরবর্তীতে দেখা যেতে পারে।”

এবার আরপিও সংশোধনের বিষয়ে আগামী ২৫ জুনের মধ্যে ইসির উপ সচিব আবদুল অদুদের কাছে ইন্টারনাল সাইট ও ডাকযোগে মতামত পাঠাতে বলা হয়েছে।

কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের ইসির মেয়াদ শেষ হবে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে। 

২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নিয়ে দুই বছর আগে হালনাগাদ ভোটা তালিকা ও সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে নিবন্ধিত দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ও বেসরকারি সংস্থার মতামত নেয় ইসি।

২০০৭ সালে এটিএম শামসুল হুদার ইসি সংলাপ করে আইন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। নবম সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত তারা কয়েকবার সংলাপও করে।

তবে দশম সংসদের সময়ে কাজী রকিবের কমিশন আর সংলাপ করতে পারেনি।

বর্তমানে ইসির নিবন্ধিত ৪০টি দল রয়েছে।

১৯৭২ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ প্রণয়নের পর এ পর্যন্ত ১১ বার সংশোধনী এসেছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন অনুচ্ছেদে অন্তত ২০৯টি বিষয়ে সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে।

সর্বশেষ ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (অধ্যাদেশ) (সংশোধন) আইন ২০১৩ বিল পাস হয়। এতে ব্যয়সীমা ২৫ লাখ করা ও মানবতাবিরোধী দণ্ডিতদের ভোটে অযোগ্য ঘোষণা করাসহ কিছু সংশোধন এসেছিল।

আরপিও সংশোধনের প্রস্তাবের বিষয়ে ইসি কর্মকর্তারা জানান, দশম সংসদ নির্বাচন, সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচনসহ পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা নিয়ে কর্মকর্তাদের অনেক প্রস্তাব থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ভোটের অভিজ্ঞতা এ প্রস্তাবে উঠে আসতে পারে।