সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী আর নেই

জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী মারা গেছেন।

খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2015, 12:59 PM
Updated : 7 June 2015, 08:42 PM

রোববার বেলা পৌনে ৩টায় খুলনা নগরীর ফারাজীপাড়ার বাড়িতে তার মৃত্যু হয় বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে।

৮৭ বছর বয়সী রাজ্জাক আলী ক্যান্সারে ভুগছিলেন বলে তার শ্যালিকা শামীমা সুলতানা শীলু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

রাজ্জাক আলীর জানাজা ও দাফনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি বলে জানান তিনি।

১৯৯১ সালে গঠিত পঞ্চম সংসদে প্রথমে ডেপুটি স্পিকার ও পরে স্পিকার নির্বাচিত হন শেখ রাজ্জাক আলী।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর তার সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির বিল পাস হয়েছিল।  

জাসদ হয়ে বিএনপিতে যোগদানকারী রাজ্জাক আলী ধানের শীষ প্রতীকে একাধিকবার খুলনা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

২০০৬ সালে বিএনপি ছেড়ে অলি আহমদের সঙ্গে এলডিপি নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। তবে কিছু দিন পরই রাজনীতি থেকে অবসরে যান এই আইনজীবী।

শেখ রাজ্জাক আলীর জন্ম ১৯২৮ সালের ২৮ অগাস্ট খুলনার পাইকগাছা উপজেলার হিতামপুর গ্রামে।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ও বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর এলএলবি ডিগ্রি নেন।

আইন পেশায় যোগ দিয়ে ১৯৫৮ সালে তিনি খুলনা জেলা জজ কোর্টে ওকালতি শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি হাই কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন।

পরের বছর তিনি খুলনা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি খুলনা ল কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন সহ-অধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেন। এরপর তিনি ২৫ বছর ওই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি খুলনায় সিটি ল কলেজ, সুন্দরবন আদর্শ মহাবিদ্যালয়, সবুরন্নেসা মহিলা কলেজ খুলনা, বয়রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, টুটপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাইকগাছা ডিগ্রি কলেজ, শহীদ জিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রেডক্রসে যোগ দিয়ে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিয়েছিলেন।

ন্যাপের মাধ্যমে রাজনীতির শুরু হলেও স্বাধীনতার পর জাসদে যোগ দেন রাজ্জাক আলী। ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৬ আসনে জাসদের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হন তিনি।

১৯৭৮ সালে বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বে গঠিত জাগদলে যুক্ত হন রাজ্জাক আলী। পরের বছর বিএনপি গঠন হলে তাতে বিলুপ্ত হয় জাগদল, তিনিও যোগ দেন বিএনপিতে।

১৯৭৯ সালের নির্বাচনে খুলনা-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রাজ্জাক আলী। ওই আসনে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৯১ সালে তিনি খালেদা জিয়ার সরকারে আইন প্রতিমন্ত্রী হন। ওই বছরই তিনি ডেপুটি স্পিকার ও পরে স্পিকার নির্বাচিত হন। সার্ক স্পিকারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও ছিলেন তিনি। ২০০২ সালে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনারের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।

শেখ রাজ্জাক আলী ১৯৫৩ সালে বিয়ে করেন সমাজসেবী-লেখিক অধ্যাপক বেগম মাজেদা আলীকে। তাদের পাঁচ মেয়ের মধ্যে বড় রানা রাজ্জাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক। দ্বিতীয় মেয়ে সাহানা রাজ্জাক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে খুলনায় কর্মরত। তৃতীয় মেয়ে জার্মানিতে কর্মরত এ্যানা রাজ্জাক আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ। চতুর্থ মেয়ে লীনা রাজ্জাক চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট এবং ছোট মেয়ে ড. জনা রাজ্জাক যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক।