ঊষ্ণ অভ্যর্থনা নিয়ে ঢাকায় মোদী

লাল গালিচা  সংবর্ধনা ও গান স্যালুট নিয়ে বহু প্রতীক্ষিত সফরে ঢাকায় পা রেখেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

সুমন মাহবুব বিমান বন্দর থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2015, 04:10 AM
Updated : 6 June 2015, 04:10 AM

তার এই সফরে ছিটমহল বিনিময়ে ঐতিহাসিক সীমান্ত চুক্তি অনুসমর্থনের দলিল হস্তান্তরের পাশাপাশি দুই দেশের বাণিজ্য জোরদারসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে।

শনিবার সকাল সোয়া ১০টার খানিক আগে নরেন্দ্র মোদীকে বহনকারী ভারতের বিমান বাহিনীর বিশেষ উড়োজাহাজটি হজরত শাহজালাল বিমান বন্দরে নামে। ‘রাজদূত’ নামের এই উড়োজাহাজটির সামনে দুই পাশে উড়ছিল বাংলাদেশ ও ভারতের পতাকা।

ভিভিআইপি টারমাকে ভেড়ার ১০ মিনিট পর উড়োজাহাজ থেকে নেমে আসেন সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি ও ছাই রঙের নেহেরু কোট পরা মোদী।

উড়োজাহাজ থেকে বেরিয়েই ডান দিকে তাকিয়ে হাত নাড়েন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, সেদিকে ছিল সাংবাদিকদের অবস্থান। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে হাত জোড় করে সবাইকে নমস্কার জানান তিনি।  

এ সময় লাল গালিচায় অপেক্ষা করছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোদী নেমে এলে তাকে অভ্যর্থনা জানান তিনি। ঠিক তার আগেই ১৯ বার তোপধ্বনি হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে।

লাল শাড়ি পরা একটি শিশু এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন শুভেচ্ছার ফুল। শিশুটিকে আদর করে তার সঙ্গে কথাও বলেন মোদী। তিনি নাম জানতে চাইলে শিশুটি জানায়, তার নাম কাজী কার্পিতা হোসেন। পড়ে প্রথম শ্রেণিতে। 

লাল গালিচা সংবর্ধনার পর মোদীকে দেওয়া হয় গার্ড অফ অনার। দুই প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর সালাম নেন, এসময় বাজানো হয় দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত। 

গার্ড পরিদর্শনের পর শেখ হাসিনা তার মন্ত্রিসভার সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মোদীকে পরিচয় করিয়ে দেন। পরে মোদী তার সফরসঙ্গীদের সঙ্গে শেখ হাসিনাকে পরিচয় করিয়ে দেন।

বিমান বন্দরে এ সময় উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী ও মসিউর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ।

তিন বাহিনীর প্রধানসহ সামরিক ও বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও ছিলেন বিমান বন্দরে। উপস্থিত ছিলেন হাই কমিশনার পঙ্কজ সরণসহ ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারাও।

চার বছর আগে মনমোহন সিংয়ের সফরের সময় ‘ডুবোচরে’ আটকে যাওয়া তিস্তা চুক্তির জট না খুললেও ‘গণ্ডির বাইরে গিয়ে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খোলার’ আশা জাগিয়ে ঢাকায় পা রাখার আগে মোদী এক টুইটে নিজের এই সফরের সাফল্য প্রত্যাশা করেন।  

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের ভাষায়, ‘ব্যতিক্রমী প্রতিবেশী’ বাংলাদেশে নরেন্দ্র মোদীর এই সফর ‘ঐতিহাসিক’।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ‘একটি ঐতিহাসিক উচ্চতায়’ পৌঁছেছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, একসঙ্গে কাজ করলে আরও অনেক অর্জনই সম্ভব।

শাহজালাল বিমান বন্দরে ২০ মিনিটের আনুষ্ঠানিকতার পর মোটর শোভাযাত্রাসহ সাভারে রওনা হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ফুল দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি। 

স্মৃতিসৌধ থেকে ঢাকায় ফিরে ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে গিয়ে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা জানান মোদী। তারপর তিনি যান সোনারগাঁও হোটেলে, এই সফরে সেখানেই থাকবেন তিনি।

সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে যাবেন নরেন্দ্র মোদী। সেখানে শীর্ষ বৈঠকে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে।

ছিটমহল বিনিময়ে স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুসমর্থনের দলিলও হস্তান্তর হবে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে। এই সফরে তিস্তা চুক্তি যে হচ্ছে না, তা আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।    

শীর্ষ বৈঠকে উপস্থিত থাকতে একদিন আগেই ঢাকায় পৌঁছেছেন ভারতের বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

শীর্ষ বৈঠকের পর রাতে সোনারগাঁও হোটেলে ফিরে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

সফরের দ্বিতীয় দিন রোববারও ব্যস্ত সময় কাটাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

সকালে ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন পরিদর্শন শেষে বারিধারায় ভারতীয় হাই কমিশনের নতুন চ্যান্সেরি ভবনে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি।

দুপুরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন মোদী। সেখানে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেওয়ার আগে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে অটল বিহারি বাজপাইর পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্মাননা গ্রহণ করবেন বিজেপির এই নেতা।

এরপর হোটেলে ফিরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং ব্যবসায়ী নেতাদের সাক্ষাৎ দেবেন মোদী।

রাতে ঢাকা ছাড়ার আগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ভারতীয় হাই কমিশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন মোদী।

চা বিক্রেতা থেকে রাজনীতিতে এসে বহু বিতর্কের মধ্যেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসা মোদীর এই বক্তৃতা নিয়ে এরই মধ্যে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।