তসলিমা সহযোগিতা চাইলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নির্বাসিত এই লেখিকার পাশে দাঁড়াবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মিজানুর রহমান বলেন, “শুধু তসলিমা নাসরিন নয়, দাউদ হায়দার প্রসঙ্গটিও এসে যায় সাথে সাথে। স্বাধীনতার পর পরই দাউদ হায়দারকে মাতৃভূমি ত্যাগ করতে হয়েছে একটি কবিতার জন্যে। এরপর বহু বছর কেটে গেল, বলা গেল সারাটি জীবন উনি প্রবাসে কাটিয়ে দিলেন।
“যারা মুক্তবুদ্ধির চর্চা করেন, হয়তো কোনো এক সময় তাদের কোনো বক্তব্য, কোন কোন মহলকে আহত করতে পারে, মনঃপুত নাও হতে পারে এবং এমনটি সবসময়ই হতে পারে- এজন্যে তারা বাধ্য হবেন সারাটি জীবন প্রবাসে কাটিয়ে দিতে, এটি কিন্তু কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটি যেমন দাউদ হায়দারের বেলায় প্রযোজ্য, তসলিমা নাসরিনের ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য।
“উনার মতামত প্রকাশের ভঙ্গি হয়তো কাউকে আহত করেছে, তার বক্তব্যে অনেকের দ্বিমতও থাকতে পারে। এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। প্রকাশ ভঙ্গির সাথে দ্বিমত থাকার কারণে এবং কোন কোন উগ্র-ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে তসলিমা নাসরিনকে দেশে থাকতে দেওয়া হবে না এবং রাষ্ট্র চুপচাপ সেটি সহ্য করবে-এমনটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”
চিকিৎসক তসলিমা গত শতকের ’৯০ এর দশকে লেখালেখি শুরুর পর আলোচনায় উঠে আসেন। বাংলাদেশে হিন্দু নিপীড়ন নিয়ে উপন্যাস ‘লজ্জা’ প্রকাশের পর মৌলবাদীদের হুমকি ও ব্যাপক হৈ চৈয়ের মধ্যে ১৯৯৪ সালে দেশত্যাগে বাধ্য হন তিনি। এরপর বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেন এই লেখিকা।
ক্রমাগত জঙ্গি হুমকির মুখে একটি বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় সম্প্রতি ভারত ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছেন তসলিমা।
নির্বাসিত এই লেখিকা দেশের ফেরার জন্য সহযোগিতা চাইলে মানবাধিকার কমিশন সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে জানিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, “তসলিমা নাসরিন অথবা দাউদ হায়দাররা যদি মনে করেন যে তারা রাষ্ট্রের কাছে প্রত্যাশিত সহায়তা পাচ্ছেন না, তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, তারা দেশে ফিরতে ইচ্ছুক কিন্তু ফেরার ব্যাপারে সরকারের যে ধরনের পদক্ষেপ অবলম্বন করা প্রয়োজন তা দেখতে পাচ্ছেন না, তাহলে তারা যেন আমাদের ( মানবাধিকার কমিশন) অবহিত করেন যাতে আমরা তাদের মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়াই।
“বাংলাদেশের কোন নাগরিক যদি মনে করেন যে তার বৈধ অধিকার ভোগ করা থেকে অহেতুক বা অবৈধভাবে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং তিনি বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন-এ ধরনের তথ্য লিখিত আকারে মানবাধিকার কমিশনকে জানানো হলে তার পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা দ্বিধা করব না।”
মিজানুর রহমানের মেয়ে অর্পিতা হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে স্নাতকোত্তর করেছেন।সে উপলক্ষে বস্টনের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে স্ত্রীকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন তিনি।
শুক্রবার দেশের উদ্দেশ্যে তার নিউ ইয়র্ক ছাড়ার কথা।