কর্ণফুলী গিলে খাচ্ছে আড়াই হাজার অবৈধ স্থাপনা

চট্টগ্রামের ‘প্রাণ’ কর্ণফুলী নদীকে গিলে খাচ্ছে সরকারি-বেসরকারি আড়াই হাজার ‘অবৈধ’ স্থাপনা।

মিন্টু চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 June 2015, 06:08 AM
Updated : 5 June 2015, 06:50 AM

উচ্চ আদালতের নির্দেশে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এ নদীর প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করতে গিয়ে এসব অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করেছে।

নদীর দুই তীর ধরে গড়ে ওঠা এসব স্থাপনা নদী দখলের পাশাপাশি দূষণও ঘটাচ্ছে।

জাতীয় অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ খরস্রোতা কর্ণফুলীর মোহনাতেই চট্টগ্রাম বন্দর। এ নদী রক্ষার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদসহ দূষণ বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরাও।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদীর মোহনা থেকে নগরীর মোহরা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকার নদীর দুই তীরে সীমানা নির্ধারণের কাজ হয়েছে।  আর এ কাজ করতে গিয়ে নগরীর মধ্যে নদীর দুই তীরে প্রায় আড়াই হাজার অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে।

“১০ কিলোমিটার এলাকায় নদী দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে যার সবগুলোই অবৈধ। চিহ্নিত স্থাপনাগুলোর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে ব্যক্তিগত ঘরবাড়িও আছে।”

২০১০ সালের ১৮ জুলাই  ‘হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশ’এর পক্ষে জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলী নদী দখল, মাটি ভরাট ও নদীতে সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেয়।

সেইসঙ্গে আদালত স্থানীয় প্রশাসনকে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে নদীর প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে বলে।

আদালতের নির্দেশের পর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন গত বছর ৯ নভেম্বর কর্ণফুলীর দুই তীরে সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করে। সম্প্রতি নগরীর নেভাল অ্যাকাডেমি সংলগ্ন নদীর মোহনা থেকে মোহরা এলাকা পর্যন্ত অংশে জরিপের কাজ শেষ করে প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক জানান, ‘আরএস’ এবং ‘বিএস’ দুই পদ্ধতির জরিপ অনুসরণ করেই সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে।  এ মাসের শেষ দিকে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

তিনি জানান, নগরীর লালদিয়ার চর, শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন চাক্তাই, সদরঘাট এলাকার অংশে অবৈধ স্থাপনা বেশি। আর এর পেছনে রয়েছে ‘স্থানীয় প্রভাবশালীরা’।

সরেজমিনে নদীর ওইসব অংশে ঘুরেও অবৈধভাবে দখল ও দূষণের চিত্র দেখা যায়।

তীর ভরাট করে টিনশেড ঘর, পাকা দালান এবং কারখানাও গড়ে তোলা হয়েছে। এমনকি বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্থাপনাও গড়ে তোলা হয়েছে নদী দখল করে।   

এর আগে ২০১০ সালে পরিবেশ অধিদপ্তরের এক জরিপে নদী তীরে গড়ে ওঠা ১৪১টি ছোট বড় কারখানাকে কর্ণফুলী দূষণের জন্য দায়ী করা হয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, নগরবাসীর ব্যবহৃত বর্জ্য খালের মাধ্যমে সরাসরি নদীতে গিয়ে পানি দূষণ করছে; এতে নদীর জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে।

পরিবেশ আন্দোলন সংগঠন পিপলস ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহান বলেন, দেশের স্বার্থে, চট্টগ্রামের স্বার্থে কর্ণফুলীর দূষণ-দখল বন্ধে প্রশাসনকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।

“যেসব অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে তা উচ্ছেদে দ্রুত অভিযান চালিয়ে নদীর প্রশস্ততা বাড়াতে হবে। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি নদীর নাব্যতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।”

জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, “কর্ণফুলী চট্টগ্রামের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আদালতের নির্দেশনার প্রেক্ষিতেই আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। উচ্ছেদ করতে বললে দ্রুত অভিযান চালিয়ে নদীর তীরে থাকা সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।”