আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ

জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ সরকার, যে সংগঠনটির সঙ্গে আল কায়েদার যোগাযোগ রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা।

লিটন হায়দারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2015, 01:42 PM
Updated : 4 Sept 2016, 03:38 PM

সোমবার আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন হয়েছে। প্রায় এক বছর আগে এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব পাঠিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত শনিবারই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়, সে অনুযায়ী সংগঠনটি নিষিদ্ধ হয়েছে।”

এনিয়ে বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা ও উগ্র ইসলামি সংগঠন হিসাবে ছয়টি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হল। অন্য পাঁচটি হল জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ(হুজি), শাহাদাৎ-ই আল-হিকমা ও হিযবুত তাহরীর।

২০০৫ সালে জেএমবিসহ চারটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে সরকার। বোমা হামলা চালিয়ে বিচারক হত্যাকাণ্ডের দায়ে জেএমবির শীর্ষনেতা শায়খ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইকে ফাঁসিতেও ঝোলানো হয়।

সর্বশেষ ২০০৯ সালে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করা হয়। আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় এই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করা হয় উগ্রপন্থা প্রচারের জন্য।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গি দমন অভিযানের মধ্যে জেএমবিসহ অন্য সংগঠনগুলো নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ার মধ্যে তিন বছর আগে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের তৎপরতার খবর গোয়েন্দা তথ্যে উঠে আসে।

এই দলটির আমির মুফতি জসীমউদ্দিন রাহমানী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত হয়ে বর্তমানে বিচারের মুখোমুখি।

রাজীবের পর অন্য ব্লগারদের হত্যাকাণ্ডের পেছনেও আনসারুল্লাহর সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ। সম্প্রতি ঢাকায় অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার দুজনও মুফতি জসীমের সাহচর্য পাওয়ার কথা বলেছিলেন। 

গত বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিউল ইসলাম লিলন হত্যাকাণ্ডের পর আনসারুল্লার মতো নামে খোলা একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে দায় স্বীকার করে বিবৃতি আসে।

আনসার আল ইসলাম নামে একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ওই বিবৃতি এসেছিল। এরপর এই মাসে সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যাকাণ্ডের পরও এমনই একটি অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করে এর সঙ্গে আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার সংশ্লিষ্টতার দাবি করা হয়।

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “দীর্ঘ সময় তাদের কর্মকাণ্ড তদারকি করার পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, মোহাম্মদপুরের একটি মসজিদে বসে মুফতি জসীম সাংগঠনিক তৎপরতা চালাতেন। জুম্মার নামাযের খুতবাই ছিল তার প্রচারের মূল লক্ষ্য। সিডি বা ছোট বইয়ের মাধ্যমে তিনি এগুলো প্রচার করতেন। 

২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মিরপুরে ব্লগার রাজীব খুন হওয়ার পর যারা গ্রেপ্তার হন, তারা রাহমানীকে তাদের মতাদর্শিক গুরু বলে দাবি করেন এবং তার বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে হত্যামিশনে নামার কথা পুলিশকে জানান।

এরপরই পুলিশ মুফতি জসীমের খোঁজ নিতে থাকে। এরমধ্যে ২০১৩ সালের ১২ অগাস্ট বরগুনায় ২৯ জনের সঙ্গে ধরা পড়েন তিনি।

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীমউদ্দিন রাহমানী

জঙ্গি হামলা এবং নাশকতার পরিকল্পনা করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে স্থানীয় পুলিশ ওই আস্তানায় অভিযান চালিয়েছিল। কিন্তু তখন পর্যন্ত পুলিশ নিশ্চিত ছিল না, মুফতি জসীমকেই তারা গ্রেপ্তার করেছেন

মুফতি জসীমের পরিচয় নিশ্চিত হলে তখন হৈ চৈ শুরু হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ একাধিকবার তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদও করে।

লেখক অভিজিৎ রায়কে খুন এবং আসিফ মহীউদ্দীনকে হত্যাচেষ্টার সঙ্গেও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা জড়িত বলে পুলিশের সন্দেহ।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামটি ইরাকি আল কায়েদার আনসার উল ইসলামের অনুকরণে নেওয়া। তবে বাংলাদেশি এই গোষ্ঠী আধ্যাত্মিক নেতা মানেন ইয়েমেনভিত্তিক আল কায়েদার নেতা আনওয়ার আওলাকিকে।

আল কায়েদা ইন অ্যারাবিয়ান পেনিনসুলা (আরব উপদ্বীপ) নামে সক্রিয় এই গোষ্ঠীর প্রধান আওলাকি ২০১১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ড্রোন হামলায় ইয়েমেনে নিহত হন।

বাংলাদেশে ২০০৮ সালে আনসারুল্লার তৎপরতা শুরু হয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে। বনানীর একটি মসজিদকে ঘিরে তাদের কার্যক্রম শুরু হলেও হিযবুত তাহরীরের ব্যাপক তৎপরতার কারণে নতুন এই সংগঠনটি আলাদাভাবে কারও নজরে পড়েনি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সূত্র জানায়, আরও কয়েকটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে হিজবুত তাওহীদ, কালেমা-ই জামাত, হিযবুল মাহাদী, জামায়েতুল মুসলেমিন, ইসলামী দাওয়াতী কাফেলা।

কর্মকর্তারা জানান, ১২ থেকে ১৪টি সংগঠন গোয়েন্দাদের নজরদারিতে রয়েছে। এদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সরকার জঙ্গি তৎপরতা বন্ধের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেবে না। দেশকে জঙ্গি এবং সন্ত্রাসীমুক্ত রাখতে যা করা প্রয়োজন, তাই করবে।”