চট্টগ্রামে ব্যাংকের মধ্যে প্রহরী খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪

চট্টগ্রামে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখার ভেতরে এক প্রহরীকে গলা কেটে হত্যায় জড়িত অভিযোগে চার যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2015, 08:04 AM
Updated : 16 May 2015, 12:22 PM

ঘটনার এক সপ্তাহ পর শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে চারজনকে সাংবাদিকদের সামনে আনে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)।

এদের একজন যুবলীগে জড়িত থাকার দাবি করলেও পুলিশ রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়ে কিছু বলেনি।

সিএমপি কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল জানান, ঘটনার পর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত টানা অভিযান চালিয়ে বন্দরনগরী এবং কিশোরগঞ্জের মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. সাগর (২৫),  মো. মাহবুবুল (২৬), গিয়াস উদ্দিন (৩০) ও মাজহারুল ইসলাম আরিফ (২৪)।

পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্রেপ্তাররা খুনের ঘটনা স্বীকার করেছেন এবং তাদের কাছে খুনে ব্যবহৃত ছুরি, রক্তমাখা পোশাক ও নিহত প্রহরীর মোবাইল ফোনও পাওয়া গেছে।

গত ৭ মে গভীর রাতে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মুরাদপুর শাখায় ডাকাতির চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মী মো. ইব্রাহিমকে গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

মুরাদপুর মোড়ে হোসেন টাওয়ার নামের ছয় তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় আল আরাফাহ ব্যাংকের কার্যালয়। পরদিন ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরপরই অভিযানে নামে পুলিশ।

এই ঘটনায় ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আলী নেওয়াজ পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছেন। মামলাটি তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ।

পুলিশ কর্মর্কতা আবদুল জলিল জানান, গোয়েন্দা পুলিশ প্রথমে নগরীর শাহ আমানত মার্কেট এলাকা থেকে গিয়াসকে গ্রেপ্তার করে।

“তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বাকলিয়া থানার বগারবিল থেকে আরিফকে এবং কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থেকে মাহবুব ও মিঠামইন থেকে সাগরকে ধরা হয়।”

এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মোট ছয়জন যুক্ত ছিল জানিয়ে জলিল মণ্ডল বলেন, অন্য দুই যুবক রায়হান ও মাসুদতে ধরতে অভিযান চলছে।

সিএমপি কমিশনার বলেন, “প্রহরীদের হত্যা করা তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ডাকাতি। প্রহরী ঘটনাটি টের পেয়ে যাওয়ায় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।”

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা আগে ছোটখাটো চুরি করলেও তারা পেশা পরিবর্তন করে ডাকাতির পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ব্যাংকের কোন জায়গায় টাকা রাখা হয়, সে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা ছিল না।

“তারা মনে করেছিল, ব্যাংকের ড্রয়ারে টাকা থাকে। ভেবেছিল, ড্রয়ার খুলে টাকা নিয়ে যেতে পারবে তারা।”

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পলাতক রায়হান ব্যাংক ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী। গত এক মাস আগে তারা এই ঘটনার পরিকল্পনা করে।

রায়হান ও সাগর পূর্ব পরিচিত বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

“রায়হান পরিকল্পনা করে সাগরকে তার মুরাদপুরের বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। তখন তারা বিষয়টি গিয়াসকে জানায় এবং তাতে সে সায় দেয়,” বলেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা তানভীর।

তিনি বলেন, “রায়হান বিষয়টি গিয়াসকে জানানোর পর সে তাদের ব্যাংক ডাকাতির সরঞ্জাম কেনার টাকা দেয়। সে টাকা দিয়ে রায়হান, মাসুদ ও সাগর মিলে ছুরি, স্ক্রু ড্রাইভার, তোড়াবাড়ি (রড বাঁকা করার যন্ত্র) কিনে।

“ঘটনার তিনদিন আগে সোমবার (৪ মে) রায়হান ব্যাংকে গিয়ে রেকি করে এবং বুধবার রাতে ঢোকার চেষ্টা করে। কিন্তু সেদিন ব্যাংকের সামেন সিডিএ ফ্লাইওভারের ঢালাইয়ের কাজ চলায় অনেক লোকজন ছিল। তাই তারা সেদিন ব্যাংকে ঢোকেনি।”

গোয়েন্দা কর্মকর্তা তানভীর জানান, ঘটনার দিন মাহবুবুল, সাগর, মাসুদ ব্যাংকে ঢুকলেও রায়হান ব্যাংকের সামনে রাস্তার বিপরীতে এবং গিয়াস মোটর সাইকেল নিয়ে নিচে দাঁড়ানো ছিল।

“তারা ব্যাংকে ঢুকে প্রথমে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা প্রহরী ইব্রাহিমকে চেপে ধরে। এসময় মাহবুবুল মুখ চেপে ধরলে ইব্রাহিম তার হাতে কামড় দেয়।”

মাহবুবুলের হাতে কামড় দেওয়ার পর মাসুদ প্রহরী ইব্রাহিমের গলায় ও সাগর পেটে ছুরিকাঘাত করে বলে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে।

“পরে মাহবুবুল ইব্রাহিমের পা চেপে ধরে এবং সাগর তাকে গলা কেটে হত্যা করে,” বলেন পুলিশ কর্মকর্তা তানভীর।   

তিনি বলেন, ব্যাংকের কয়েকটি ড্রয়ার ভেঙে সেখানে কোনো টাকা না পেয়ে ভল্ট খোলার চেষ্টা করে। না পেরে ব্যাংক থেকে বের হয়ে রায়হান ও মাসুদের সঙ্গে দেখা করে হত্যাকাণ্ডের কথা জানায়।

ঘটনার পর গিয়াস ও রায়হান ছাড়া অন্যরা বাকলিয়া বগার বিল এলাকায় আরিফের বাসায় গিয়েছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

“সেখানে যাওয়ার পথে ছুরিটি মুরাদপুর এলাকায় মাজারের পরিত্যক্ত স্থানে ফেলে দেয়। আরিফের বাসায় যাওয়ার পর যে যার যার মতো চলে যায়,” বলেন তানভীর।

তিনি বলেন, ঘটনার পরিকল্পনা থেকে ঘটনা পর্যন্ত সবকিছু আরিফ জানলেও তাকে ঘটনার সময় নিয়ে যাওয়া হয়নি।

“হত্যাকাণ্ডের পর খুনিরা নিহত ইব্রাহিমের মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। এটি প্রথমে মাসুদের কাছে থাকলেও পরে তা সাগর নিয়ে নেয়। পরদিন ভোরে আরিফের সিম মোবাইল সেটটিতে ভরে গিয়াসের সাথে সাগর যোগাযোগ করে।”

তানভীর জানান, আরিফ ও সাগর ভবঘুরে, তবে মাঝে মাঝে তারা গার্মেন্টেসে কাজ করে। মাহবুবুল আগে নগরীর দেওয়ান বাজার এলাকায় সবজি বিক্রি করলেও এখন গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে থাকেন ও মাসুদ রাজমিস্ত্রির কাজ করেন।

গিয়াস বেকার হলেও নিজেকে ব্যবসায়ী বলে দাবি করেন এবং রায়হান নগরীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও এক আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কাজ করেন বলে জানান তিনি।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, গিয়াস নিজেকে যুবলীগ নেতা হিসেবে এলাকায় পরিচয় দেন। নগরীতে সরকার দলীয় এক কাউন্সিলরের অনুসারী হিসেবে বাকলিয়া ও দেওয়ান বাজার এলাকায় পরিচিত গিয়াস।

যিনি গত ২৮ এপ্রিল সিটি নির্বাচনে ওই কাউন্সিলরের পক্ষে কাজ করেছেন।

তবে গিয়াসের রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা তানভীর বলেন, “সে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত, তা আমাদের দেখার বিষয় না। তার মূল পরিচয় সে অপরাধী।”