কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তদন্ত সাপেক্ষে শনাক্ত রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে ভোটার তালিকায় কক্সবাজারে ৩৮৯ জন রোহিঙ্গার অন্তর্ভুক্তির কথা উল্লেখ ছিল।
পাশাপাশি তাদের ভোটার করতে সহায়তাকারী হিসেবে সাংসদ আব্দুর রহমান বদিসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও দালালদের নামও উল্লেখ ছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক আলী হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি নির্বাচন কমিশনে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। উপজেলা পর্যায়ের বিশেষ কমিটির তথ্যগুলো নিয়ে প্রতিবেদন ও সুপারিশ কমিশনে দেওয়া হয়েছে।”
রোহিঙ্গা শনাক্তের প্রতিবেদন পাঠালেও সাংসদ বদিসহ জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতার বিষয়ে তদন্তের জন্য কোনো তালিকা পাননি বলে জানান তিনি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের পরামর্শ অনুযায়ী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, যারা রোহিঙ্গা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে তাদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। এদের সংখ্যা ৯৮ জন।
তিনি বলেন, “এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আমাদের দেওয়া হয়নি। যেহেতু জনপ্রতিনিধির সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে- এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন হয়তো সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।”
যাদের তালিকায় পাওয়া যায়নি বা মৃত্যুবরণ করেছে তাদের বিষয়ে কোনো ‘অ্যাকশন’ নেওয়ার সুযোগ নেই বলেও জানান এই নির্বাচন কর্মকর্তা।
অভিযুক্তদের ৯৮ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশি ১৮৪
সম্প্রতি কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন ৩৮৮ জনের শনাক্ত প্রতিবেদন পাঠান নির্বাচন কমিশনে।
এতে বলা হয়, অভিযুক্তদের মধ্যে ৯৮ জন রোহিঙ্গা রয়েছে। বাংলাদেশি নাগিরিক হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে ১৮৪ জনকে।
পূর্বপুরুষ রোহিঙ্গা হিসেবে শনাক্ত হয়েছে ৩২ জন। এরমধ্যে মিয়ানমার থেকে আসা ১১ জন, পিতা রোহিঙ্গা ১২ জন, মা রোহিঙ্গা ৪ জন, পিতা-মাতা রোহিঙ্গা একজন, পিতামহ রোহিঙ্গা একজন, দাদি রোহিঙ্গা তিন জন।
এদের নাগরিকত্বের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছে নির্বাচন কমিশন।
বাকি ৭৪ জনের বিষয়ে কমিশনের কিছুই করার নেই বলে মত দেওয়া হয়েছে।
সরকারের গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাওয়ার পর মাঠপর্যায়ে তদন্ত শেষে কমিশনে প্রতিবেদন পাঠাতে প্রায় ছয় মাস সময় লাগল।
২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকা অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে।
গত নভেম্বরে এরই পরিপ্রক্ষিতে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় তদন্ত করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠাতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়।
৭ এপ্রিল কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ইসিতে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাঠান কমিশনে।
এরপর ৪ মে ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মাহফুজা আক্তার সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন।