সুখবর জানিয়ে হাসিনাকে মোদীর ফোন

ছিটমহল বিনিময়ে সংবিধান সংশোধনের বিলটি লোকসভায় পাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টেলিফোন করে তা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে জানালেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 May 2015, 01:46 PM
Updated : 7 May 2015, 05:52 PM

চার দশক ধরে ঝুলে থাকা এই সমস্যার সমাধানের দিন গুনে আসছিল বাংলাদেশিরা, যা আটকে ছিল ভারতের পক্ষ থেকে উদ্যোগ না নেওয়ায়।

বাংলাদেশের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময়ে ভারতের সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব রাজ্যসভায় সর্বসম্মতভাবে পাসের একদিনের মধ্যে লোকসভারও অনুমোদন পায়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লোকসভায় বিলটি পাসের সঙ্গে সঙ্গে শেখ হাসিনার কাছে নয়া দিল্লি থেকে নরেন্দ্র মোদীর টেলিফোন আসে বলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী জানিয়েছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভারতের প্রধানমন্ত্রী টেলিফোন করে বিল পাসের খবরটি আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছেন।

“নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ১৯৭৪ সালের ১৮ মে বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন, আজ আপনার সরকারের সময় সেই মে মাসেই সেই বিলটি পাস হল।”  

টেলিফোন পাওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে এক বার্তায় শেখ হাসিনা বলেছেন, “ভারত বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু, ভারত বাংলাদেশের দুঃসময়ে সব সময় পাশে ছিল, এখনও আছে।”

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে টেলিফোনের খবর জানিয়ে টুইটও করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

নরেন্দ্র মোদী লিখেছেন, “বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হল। ঐতিহাসিক এই মুহূর্তে তার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানালাম।”

গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশের সফরের খবর আলোচনায় থাকলেও কূটনৈতিক সূত্রের খবর, ঝুলে থাকা সমস্যার সমাধানে করেই প্রতিবেশী দেশে যেতে চান তিনি।

টুইটারে মোদী আরও লেখেন, “আজ লোকসভায় সংবিধান সংশোধনী বিল পাসের পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি ঐতিহাসিক মাইলফলকে পৌঁছেছে।

“এই সংশোধনী পাসের ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে স্থল সীমানার স্থায়ী সমাধান হবে এবং বহু দিনের ঝুলে থাকা সীমানা নিয়ে অমীংসাসিত বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি হবে।”

স্থল সীমান্ত বিরোধের পাশাপাশি তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিও বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কে কাঁটা হয়ে আটকে আছে। ওই সমস্যার সমাধানের আশাও দিয়ে আসছেন মোদী।

ছিটমহলে বন্দি জীবন

অবিভক্ত ভারতের অংশ থেকে পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্থল সীমান্ত সমস্যার অবসানে ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হয়।

এর আওতায় ছিটমহল বিনিময়ে বাংলাদেশের দিক থেকে সব প্রক্রিয়া সারা হলেও তা আটকে ছিল ভারতের দিকে। কারণ ভূমি ছাড়তে হলে ভারতের সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন।

২০১১ সালে ভারতে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় স্থল সীমান্ত সমস্যার সমাধানে দুই দেশের মধ্যে একটি প্রটোকল সই হয়।

এরপর কংগ্রেস সরকার সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিলেও তার মধ্যেই নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল হয়ে যায়। ক্ষমতায় আসে বিজেপি, প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদী।

তবে কংগ্রেস সরকারের সেই উদ্যোগকে সফল করতে আরও সচেষ্ট ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ছিটমহল বিনিময়ে আপত্তি জানানো আঞ্চলিক দলগুলোকে মানান তিনি। এর ফলে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে সর্বসম্মতভাবেই বিলটি পাস হয়।

নরেন্দ্র মোদী সংবিধান সংশোধনের এই বিল পাসে সমর্থন দেওয়ার জন্য কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকেও ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানান বলে ভারতের সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে।

 

বিল পাসে সমর্থনের জন্য সব বিরোধীদের অভিনন্দন জানিয়ে টুইটারে মোদী লিখেছেন, “সহযোগিতার জন্য সব রাজনৈতিক দলকে আমার কৃতজ্ঞতা। একইসঙ্গে আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যকেও ধন্যবাদ।

“এর মধ্য দিয়ে আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক নির্মাণে জাতির সামষ্টিক ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটল।”

মোদী বলেন, এটা স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ সীমানা, সীমান্তের উন্নততর ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়ে অবদান রাখবে এবং একইসঙ্গে নিরাপত্তাও নিশ্চিত করবে।”

ভারতের ১১৯তম সংবিধান সংশোধনের বিলটি লোকসভায় উপস্থাপনের সময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের দিকটি তুলে ধরেন।

“রাজ্যসভায় এই বিল নিয়ে কেউ আপত্তি জানায়নি। রাজ্যসভা বাংলাদেশকে এই বার্তাই দিতে চেয়েছে যে রাজনৈতিক বিষয়ে ভারতের সব রাজনৈতিক দলের অভিন্ন মত। আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, লোকসভায় যেন সেই শুভবার্তাই দেয়।”

সংবিধান সংশোধনের বিলটি পাস হওয়ার পর এখন ভারতের মন্ত্রিসভায় তা অনুমোদন হবে, তারপরই শুরু হবে কার্যকরের প্রক্রিয়া, যার অপেক্ষায় আছে ছিটমহলগুলোর ৫১ হাজার মানুষ।