হেফাজতকাণ্ডের মামলাগুলোর একটিও যায়নি বিচারে

দুই বছরেও হেফাজতকাণ্ডের মামলাগুলোর কোনোটির তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ। মামলার কথা ভুলে গেছেন একটি থানার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাও।

গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2015, 11:19 AM
Updated : 5 May 2015, 11:20 AM

২০১৩ সালের ৫ মের ওই ঘটনায় ঢাকার বিভিন্ন থানায় অন্তত ৩৬টি মামলা হয়েছিল, যার অধিকাংশেরই বাদী পুলিশ।

দুই বছর পর মামলাগুলোর খবর নিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটি মামলারও তদন্ত শেষ হয়নি। ফলে শুরু হয়নি বিচার।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুরসহ বিভিন্ন অভিযোগে কোতোয়ালি, শেরে বাংলা নগর, পল্টন, রমনা, শাহবাগ, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল ও মিরপুর থানায় মোট ৩৬টি মামলা হয়।

কিছু মামলা তদন্তের শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান তিনি। কয়েকটিতে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য প্রমাণ ও ভিডিও ফুটেজের সীমাবদ্ধতার কারণে তদন্তে সময় লাগছে বলে তিনি জানান।

পল্টন থানার ওসি মোরশেদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তার থানায় মোট ২৩টি মামলা রয়েছে।

“মামলাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। ঘটনার দিনের ভিডিও ফুটেজ ও বিভিন্ন লোকজনের থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ করা হচ্ছে। খুব দ্রুত সেগুলোর প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।”

যাত্রাবাড়ী থানার তিনটি মামলার তদন্ত চলছে বলে থানার ওসি অবনী শংকর কর জানিয়েছেন।

তবে মিরপুর থানার ওসি মো. সালাউদ্দিনের মনেই নেই, তার থানায় কোনো মামলা রয়েছে কি না।

“আমার থানায় কোনো মামলা আছে কি না, তা মনে নেই,” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন তিনি।

গণজাগরণবিরোধী হেফাজতে ইসলামের শাপলা চত্বরের সেই সমাবেশ ঘিরে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের তাণ্ডবে ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার মতিঝিল-পল্টন এলাকায় রণক্ষেত্রে রূপ নিয়েছিল। তাণ্ডব চলেছিল আরও কয়েকটি এলাকায়ও।

৫ মে দুপুরে রণক্ষেত্র পল্টন

পুলিশের সঙ্গে হেফাজতকর্মীদের সারা দিনের সংঘাতে তিন জন পথচারী, একজন পুলিশ সদস্যসহ মোট ১১ জন নিহত হয় বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়।

হেফাজত ও তাদের কর্মসূচি সমর্থনকারী  বিএনপি-জামায়াতের নেতারা সেদিন সহস্রাধিক মানুষ নিহত হওয়ার দাবি করলেও তার সপক্ষে কোনো প্রমাণ মেলেনি। এমনকি হেফাজত নিহতদের যে তালিকা করেছিল, সেই তালিকায় থাকা অনেককে পরে জীবিত পাওয়া গেছে। 

৫ মে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত মতিঝিল থেকে পল্টন পর্যন্ত এলাকায় বহু দোকান, গাড়ি পুড়িয়ে দেয় হেফাজতকর্মীরা। কেটে ফেলে সড়ক দ্বীপের গাছগুলো, উপড়ে ফেলে সড়ক বিভাজক। 

এতে তিন কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল বলে সরকারের হিসাব।

তাণ্ডবের পরদিন সড়কের চিত্র

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ আন্দোলনের বিরোধিতায় ১৩ দফা নিয়ে তখন মাঠে নেমেছিল শাহ আহমদ শফী নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলাম।

১৩ দফা দাবিতে ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে তারা সমাবেশ ডেকে দেশের নানা প্রান্ত থেকে এসে জড়ো হয়। দিনভর তাণ্ডবের পর তারা মতিঝিলে টানা অবস্থানের ঘোষণা দেয়।

এই অবস্থায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকায় সবগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এরপরেই মধ্যরাতে পুলিশ র‌্যাব এবং বিজিবি যৌথ অভিযান চালিয়ে হেফাজতকর্মীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। 

সেদিন হেফাজতকর্মীদের সেই অবস্থানের পেছনে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র ছিল বলে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জানিয়েছিলেন।