সাগরে ৬৫ দিন বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ

বঙ্গোপসাগরে আগামী ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন সব ধরনের বাণিজ্যিক ট্রলার দিয়ে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করেছ সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2015, 10:48 AM
Updated : 5 May 2015, 03:25 PM

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. ছায়েদুল হক মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।

তিনি বলেন, “বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চলে সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও সর্বোচ্চ সংরক্ষণের স্বার্থে এই প্রথম এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।” 

তিনি বলেন, এবার কেবল বাণিজ্যিক ট্রলার দিয়ে সাগরে মাছ ও চিংড়ি আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আগামীতে উপকূলীয় এলাকার ‘মেকানাইজড ও নন-মেজানাইজড বোটগুলোকেও’ এর আওতায় আনা হবে।

মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিস্পত্তি হওয়ায় বর্তমানে এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার টেরিটোরিয়াল সমুদ্র ও ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চলে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এর মধ্যে তটরেখা থেকে ৪০মিটার গভীরতা পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে ৩২ হাজার ৪৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ৬৮ হাজার যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক ছোট ট্রলার এবং জেলে নৌকা মাছ ধরে। এই এলাকায় সরকারের লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোনো বাণিজ্যিক ট্রলার মাছ ধরতে পারে না।

লাইসেন্সধারী ট্রলারগুলোর জন্য দুটি স্তরে সামুদ্রিক এলাকা ভাগ করে দেওয়া রয়েছে।

সাগরে মৎস্য আহরণের দ্বিতীয় স্তরটি হলো ৪০ মিটারের পর থেকে ২০০মিটার গভীরতা পর্যন্ত এলাকা। আর ২০০মিটার গভীরতার এলাকা থেকে একান্ত অর্থনৈতিক এলাকার সীমানা পর্যন্ত হলো তৃতীয় স্তর।

এই দুটি স্তরে সরকার অনুমোদিত ২৪১টি বাণিজ্যিক ট্রলার মাছ ধরতে পারে বলে জানান মন্ত্রী।

উন্নত প্রযুক্তি ও ট্রলার ব্যবহার করে সমুদ্রে অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য আহরণ বাড়তে থাকায় বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে আসছেন।  

২০০৭-০৮ অর্থবছরে যেখানে বঙ্গোপসাগর থেকে ৪ লাখ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন মাছ ধরা হয়েছিল, সেখানে ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা বেড়ে ৫ লাখ ৮৯ হাজার মেট্রিক টন হয়।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. ছায়েদুল হক সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রতি বছর জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সাগরে মাছ পাওয়ার পরিমাণ ক্রমাগত হারে কমছে বলে গত ৫ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তারা দেখতে পেয়েছেন।

“৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে যদি ১০ থেকে ২০ ভাগ মাছও সংরক্ষণ করা যায়, তাতেও আমাদের সমুদ্র এলাকায় বিপুল পরিমাণ মাছ বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা আশা করছি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে আমরা প্রজ্ঞাপন জারি করব।”

সমুদ্র উপকূলবর্তী বহু দেশেই মাছের প্রজনন মৌসুমে ২ থেকে ৩ মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকে বলে জানান মন্ত্রী।

“মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্টেক হোল্ডার, যেমন- মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশন, মেরিন হোয়াইট ট্রলার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, মেরিন ফিশারিজ এক্স ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশন, গবেষক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন ফিশারিজের অধ্যাপক, মেরিন ফিশারিজ একাডেমি, মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ হওয়ায় ট্রলার মালিক বা শ্রমিকদের কোনো সহায়তা দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “জুন-অগাস্ট মাসে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অধিকাংশ ট্রলারই বন্দরে থাকে। তাই এ সিদ্ধান্তে কোনো সমস্যা হবে না।”