টেলিভিশনে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের আচরণের ভিডিও ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, যাতে ওই শিক্ষককে সহ আলোচকের সঙ্গে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে প্রায় হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
Published : 05 May 2015, 04:01 PM
একুশে টেলিভিশনের টক শো একুশের রাতে দুই আলোচকের হাতাহাতি থামাতে ব্যর্থতার জন্য বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশনটির ওই অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের সমালোচনাও হচ্ছে ফেইসবুকসহ ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে।
সোমবার রাতে প্রচারিত ওই আলোচনা অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামানের সঙ্গে আলোচক ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুর রশীদ ও প্রথম আলোর সাংবাদিক টিপু সুলতান। সঞ্চালক ছিলেন মঞ্জুরুল আলম পান্না।
ওই আলোচনা অনুষ্ঠানের ৫৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে এবং তা নিয়ে নানা মন্তব্যও আসছে।
৫৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে দেখা যায়, আব্দুর রশিদ স্ট্র্যাটিজিক ইন্টিলিজেন্স নিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে তার দিকে আঙুল তুলে আগ্রাসী ভঙ্গিতে প্রশ্ন করতে শুরু করেন মো. শহীদুজ্জামান। একই ভঙ্গিতে বারবার তিনি ‘ইউ আর টকিং এবাউট মি?’ বলতে থাকেন।
এসময় আবদুর রশিদ তাকে কয়েকবার বলেন, ‘ডোন্ট শো ইওর ফিংগার’। তাতে শাহীদুজ্জামান সাড়া না দিলে তিনি নিজের হাত দিয়ে শাহীদুজ্জামানের হাতটি নামিয়ে দেন। তখন শাহীদুজ্জামানও পাল্টা থাবড়া মারেন।
এর মধ্যে উপস্থাপককে দেখা যায় অনেকটা অসহায়ের মতো অনুষ্ঠান সঞ্চালনার চেষ্টা ছেড়ে দিয়ে সরাসরি সম্প্রচারের মধ্যেই প্রোডাকশনের লোকজনকে খুঁজতে।
সুলতান মির্জা নামে একজন এই ভিডিওটি শেয়ার করে ফেইসবুকে মন্তব্য করেছেন, “ক্ষমা করবেন আবদুর রশিদ স্যার, রশিদ স্যার আপনি জানেন পাগল রে পাগল বললে পাগল কিন্তু মাইন্ড খায়, আর মুর্খ রে মুর্খ বললেও একই অবস্থা হয়, মুর্খ মাইন্ড খায়, শহিদুজ্জামান মুর্খ আর পাগল ২ টাই।”
অধ্যাপক শাহীদুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, “(এই ধরনের ব্যক্তিকে) টিভি টক শোয়ে কী কারণে কোন যুক্তিতে ডেকে এনে সুযোগ দেওয়া হয়।”
অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের ভূমিকার সমালোচনা করে গাজী টিভির সম্পাদক (রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, নিউজ) অঞ্জন রায় নিজের ফেইসবুক পাতায় লিখেছেন, “চারটে চেয়ার, তিনটে ক্যামেরা, একটা স্টুডিও, ছয় হাজার টাকা আর এক ঘণ্টা অন এয়ার টাইম মানেই টকশো না। ঠিক তেমনই মিনিমাম ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়া উপস্থাপক হওয়া যায় না।
“সরি রশীদ স্যার, একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসাবে আমি লজ্জিত। আমি কয়েকদফা ফুটেজটি দেখেছি। কালকের অনুষ্ঠানে আরো অনেক আগে ব্রেক নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা উপস্থাপকের সম্ভব ছিল।”
এই ঘটনা নিয়ে আবদুর রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে ভারতের আল-কায়েদার দায়ভার স্বীকার করে নেওয়া ছিল তাদের আলোচনার বিষয়।
“এসময় আমি স্ট্র্যাটেজিক ইন্টেলিজেন্স বিষয়ে বলছিলাম। উনি (শাহীদুজ্জামান) বলছিলেন যে স্ট্র্যাটেজিক ইন্টেলিজেন্স বলে কিছুই নেই। এই বিষয়ে তর্কের মধ্যে উনি তার টেম্পারমেন্ট ধরে রাখতে পারেননি, তাই কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।”
“তবে সেখানে ব্যাপারটি মারামারির ছিল না, তর্কের ছিল। হাতাহাতি না হয়ে তর্ক হওয়া উচিত ছিল,” বলেন তিনি।
শাহীদুজ্জামানের হাতে আঘাত করার বিষয়ে সাবেক সেনা কর্মকর্তা রশীদ বলেন, “এধরনের হিটেড সিচুয়েশন যখন তৈরি হয় তখন অনেক সময় কে কী আচরণ করছি, তা খেয়াল থাকে না।”
তবে টক শো’তে এধরনের আচরণ করা ঠিক না বলে স্বীকার করেন তিনি।
“টক শো’তে আমাদের দেখে তরুণরা অনেক কিছু শেখে। তাই টক শো’গুলোতে আমাদের এ ধরনের আচরণ করাটা ঠিক হয়নি।”
এ বিষয়ে অধ্যাপক শাহীদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি যখন কথা বলছিলাম, তখন উনি (রশীদ) বারবার আমার কথার মাঝে কথা বলছিলেন। আমি আগে জানতাম না যে উনি আসবেন। আগে জানলে আমি কখনোই যেতাম না ওই টক শো’তে। এমন অভিজ্ঞতা আমার আগেও হয়েছে, আমি কথা বলতে গেলেই উনি আমাকে বাধা দেন।”
সোশ্যাল মিডিয়াতে সমালোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, “উনার সমালোচনাই বেশি হচ্ছে। যারা বলছে আমার কন্ডাক্ট ভুল ছিল, তারা যদি বলতেন আমার কী ভুল হয়েছে, সেটা যদি জানতে পারতাম তাহলে ভালো হত। আর আমাকে আমার পড়াশোনা, গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়, এসব সোশ্যাল মিডিয়াতে কী বলা হচ্ছে, তার জন্য যথেষ্ট সময় আমার আসলে নেই।”