নিয়মে চাপা পড়ছে ভোটে অনিয়মের সব অভিযোগ

ভোট শেষের ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলের গেজেটে প্রকাশ করলেও অনিয়ম নিয়ে প্রার্থীদের অভিযোগ থামছে না।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2015, 04:20 PM
Updated : 4 May 2015, 04:20 PM

গত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পরাজিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল এবং মির্জা আব্বাস কেন্দ্রভিত্তিক অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে গেজেট প্রকাশ বন্ধ করে পুনঃভোটের দাবি জানিয়েছেন।

সেই সঙ্গে অন্তত তিন ডজন কাউন্সিলর প্রার্থী ভোটে অনিয়ম, ফল পাল্টানো, গেজেট প্রকাশ স্থগিত, পুনঃভোটের দাবি জানিয়েছেন।

অভিযোগকারী এসব প্রার্থীদের দাবি, দ্রুত গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন অনিয়মের অভিযোগ এড়ানোর চেষ্টা করছে।

তবে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দ্রুত নয়, আমরা যথাসময়েই ফলাফলের গেজেট করেছি। ২৯ এপ্রিল ফলাফল হাতে এসেছে, নিয়ম মেনেই ৩০ এপ্রিল গেজেট করা হয়েছে।”

ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব সামসুল আলম বলেন, গেজেট করে ফেলায় হয়ত কমিশন সব পর্যালোচনা করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে যেতে অভিযোগকারীদের পরামর্শ দেবে।

“এখন আর এখানে কোনো কাজ নেই। কাজের কাজ হবে নথিতে থাকা।”

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণের মাঝপথে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা।

ফল ঘোষণার পর কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেকে অনিয়মের অভিযোগ করেন নির্বাচন কমিশনে, যার মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাও রয়েছেন।  

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে এসব আবেদনে গণমাধ্যমের বিভিন্ন সংবাদ ও আলোকচিত্র যুক্ত করেছেন অভিযোগকারীরা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয় শাখাকে ভোটের পরদিন প্রকাশিত গণমাধ্যমের সংবাদ, অভিযোগকারীদের আবেদন সংগ্রহের মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন বলে কমিশনের কর্মকর্তারা জানান।

মঙ্গলবার ভোটগ্রহণের পরদিন ভোরে ফল প্রকাশ হয় তিন সিটি নির্বাচনের। এরপর বৃহস্পতিবার রাতেই নবনির্বাচিতদের গেজেট প্রকাশ করে ইসি সচিবালয়।

ভোটের দিন ও পরে নির্বাচনের নানা অনিয়মের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দিচ্ছে না কমিশন; যদিও ভোটের দিন সিইসি বলেছিলেন, ভোট শেষে ভোট পড়ার হার নিয়ে কথা বলবেন তিনি।

এরই মধ্যে এক সপ্তাহ ধরে লিখিত অভিযোগ আসছে ইসিতে। ৪০টির বেশি অভিযোগ কমিশন সচিবালয়ে জমা পড়েছে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ জানান, “তিন সিটির এত বড় কর্মযজ্ঞে কিছু অনিয়ম হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এ জন্য তিনটি কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। আরও কিছু কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ এলেও ভোট স্থগিত রেখে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভোট শুরু করা হয়।”

“তবে সার্বিকভাবে ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে, এ নিয়ে আমাদের সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির কিছু নেই। আমরা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করেছি,” বলেন তিনি।

অভিযোগ এড়াতে গেজেট প্রতাশে তড়িঘড়ির অভিযোগের বিষয়ে শাহনেওয়াজ বলেন, “কমিশনের এখন কী করার রয়েছে, তা না জেনে শুধু সমালোচনা করা হচ্ছে। যারা সমালোচনা করছে তারা আইন না পড়েই করছে। নির্বাচনী বিরোধ নিয়ে এখন শুধু নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করা যাবে। সেখানেই এসব বিষয়ে নিষ্পত্তি হবে।”

ভোটের আগে অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি ছিল সিইসির। কোনো নির্বাচনী কর্মকর্তা অনিয়মে জড়িত থাকলে সেক্ষেত্রেও কোনো ছাড় না দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি।

তবে নির্বাচন কর্মকর্তাদের জাল ভোট দেওয়ার ছবি যেমন রয়েছে, তেমনি ভোটের দিন ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষকও নিষ্ক্রিয় ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

তিন নির্বাচনী এলাকায় ইসির ৪৫ কর্মকর্তা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। তবে তাদের কোনো প্রতিবেদন ছয় দিনেও পাননি বলে জানান নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ।

তিন সিটি নির্বাচনের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন অনুযায়ী নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে ইসি।

ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব (আইন) লায়লা শারমিন জানান, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের জন্য যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ (১ম আদালত ঢাকা) এর সমন্বয়ে এবং চট্টগ্রামে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজের সমন্বয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের সমন্বয়ে নির্বাচনী আপিল ট্রাইব্যুনাল দায়িত্ব পালন করবে।

গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচনী বিরোধ নিয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে যেতে পারবেন সংক্ষুব্ধরা।

এবার সিটি নির্বাচনে আটজন কাউন্সিলর মনোনয়নপত্র বাতিলের পর আদালতের আদেশে ভোটে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

এ নিয়ে আদালতের আদেশের রুলের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ।