সবাই যেন বিধিমালা মেনে ভূমিকম্প সহনশীল ভবন তৈরি করে তা নিশ্চিত করতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সকালে ‘টেকসই উন্নয়নে টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভোকেশনাল এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেইনিং-টিভিইটি’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
নেপালে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রকৌশলীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যেহেতু এটা ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা, তাই আগামীতে আমাদের দেশে যে ভবন নির্মাণ হবে, সেগুলো যেন ভূমিকম্প সহনশীল স্থাপনা গড়ে ওঠে।
“সবাই যেন বিল্ডিং কোড মেনে চলে, ভূমিকম্প সহনশীল হয়- সে বিষয়ে নজর রাখবেন।”
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কলম্বো প্ল্যান স্টাফ কলেজ এবং ইন্সটিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা যারা মাঠে কাজ করেন, আপনাদের দায়িত্ব নির্মাণ কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করা। সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ যেন হয়- তা নিশ্চিত করবেন।”
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নেপালের ভূমিকম্পের ঝাঁকিও আমরা পেয়েছি। তাতে অনেকগুলি ভবন .. ফাটল দেখা দিয়েছে।”
সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের শতকরা ৯৫ ভাগই ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই কাজের গুণগত মান যাতে রক্ষা হয়, কাজগুলো যেন সুন্দরভাবে হয়। এই রাষ্ট্রের সম্পদ জনগণের সম্পদ।
“এই রাষ্ট্রের সম্পদ যাতে যথাযথ ব্যবহার হয়- তা আপনাদের চিন্তা, চেতনা, মেধা, দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠা ও সততা দিয়ে বাস্তবায়ন করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।”
উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করতে প্রকৌশলীদের কাছ থেকে আরো কর্মতৎপরতা প্রত্যাশার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ত্রাণ নেপালে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশের বিমানবন্দর ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে রিলিফ আসবে.. আমি ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছি, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট এয়ারপোর্ট রয়েছে, পাশাপাশি সৈয়দপুর এয়ারপোর্টকে তৈরি রাখতে বলেছি। লালমনিরহাটে এয়ারস্ট্রিপ প্রস্তুত রাখতে বলেছি।
“যে রিলিফ আসবে, তা ট্রাকে করে বাঙলাবান্ধা দিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ইন্ডিয়ার সাথে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। যত রিলিফের মাল যাবে বাঙলাবান্ধা পোর্ট দিয়ে যাবে। বাধা দেবে না। আমরাও সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি।”
তিনি বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দারিদ্র্য হ্রাস এবং মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করাই তার সরকারের লক্ষ্য।
সম্পদের টেকসই ও সর্বোচ্চ ব্যবহার যাতে নিশ্চিত হয় সে ব্যাপারে নজর দেওয়ার উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন শেখ হাসিনা।
“সম্পদের সুষ্ঠু ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে,” বলেন তিনি।
অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট বা স্থাপনা নির্মাণের ফলে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ হেক্টর চাষযোগ্য জমি কমে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখনই আমাদের এ বিষয়ে জরুরি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।”
পরিকল্পিত নগরীর পাশাপাশি গ্রামগুলোকেও পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব দেন তিনি।
“কৃষি জমি রক্ষার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে।”
দক্ষ মানবসম্পদ ‘সবচেয়ে বড় সম্পদ’ মন্তব্য করে এক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শুধু সরকারি উদ্যোগে এ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।”
জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের নানামুখী পরিকল্পনা তুলে ধরেন তিনি।
কারিগরি শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ যখনই সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে, তখনই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে।”
সরকার প্রতি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে বৃত্তিমূলক শিক্ষা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সহায়তায় জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়নের কথাও বলেন তিনি।
কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী এই সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
আইডিইবির সভাপতি এ কে এম এ হামিদের সভাপতিত্বে এবং কলম্বো প্ল্যান স্টাফ কলেজের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নাইম ইয়াকুবের সহসভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।