অভিযোগবিদ্ধ ভোটে জয় সরকার সমর্থকদের

ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ তুলে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের ভোট বর্জনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তিন সিটি করপোরেশনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরাই মেয়র নির্বাচিত হয়েছে।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 April 2015, 00:44 AM
Updated : 29 April 2015, 07:38 AM

মঙ্গলবার দিনভর ভোটগ্রহণের পর ঢাকা উত্তরে আনিসুল হক, দক্ষিণে সাঈদ খোকন এবং চট্টগ্রামে আ জ ম নাছির উদ্দিনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

এই তিনজনই প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হলেন।

মঙ্গলবার ভোটের মাঝখানে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে প্রায় সব কেন্দ্র দখল ও কারচুপির অভিযোগ এনে ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান ও বর্জনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। একই অভিযোগ তোলে বাম দলগুলোও।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, “এটা কোনো নির্বাচন হয় নাই। এটাকে নির্বাচন বলা যায় না। ভোটবিহীন এই নির্বাচনকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। ... এই নির্বাচন আমরা বর্জন করি। এতে গণতন্ত্রের প্রহসন করা হয়েছে।”

এসময় ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস এবং উত্তরের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল পাশে ছিলেন মওদুদের। চট্টগ্রামে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এম মনজুর আলম এর ঘণ্টাখানেক আগেই ভোট বর্জনের কথা জানান।

তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলেছে, জনমত বিপক্ষে জেনে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই বিএনপি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভোট বর্জন করেছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “নাটকীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে। তারা কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেখাতে পারেনি। কোনো একটি অনিয়মের তথ্য দিতে পারেনি বিএনপি।”

প্রধান দুই দলের এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থানে ভোট শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তিনটি কেন্দ্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ায় ভোট বাতিল হয়েছে।

ফলাফল মেনে নিয়ে প্রার্থী ও সমর্থকদের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সবার প্রতি অনুরোধ জানান সিইসি।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলে তিন সিটি করপোরেশনে।

অন্তত ২০টি কেন্দ্রে গোলযোগের খবর পাওয়া গেলেও ঢাকা দক্ষিণের তিনটি কেন্দ্রেই কেবল ভোট স্থগিত হয়েছে।

এ তিন সিটিতে ভোটের মধ্য দিয়ে দেশের সব সিটি করপোরেশনে বর্তমানে নির্বাচিত মেয়র হল।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন।

মোট ৭১৯টি কেন্দ্রের সবগুলোর ঘোষিত বেসরকারি ফলাফলে হাতি প্রতীক নিয়ে নাছির পেয়েছেন ৪,৭৫,৩৬১ ভোট।

তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলম কমলা লেবু প্রতীকে পেয়েছেন ৩,০৪,৮৩৭ ভোট।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক।

১০৯৩ কেন্দ্রের ঘোষিত ফলে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে আনিসুল পেয়েছেন ৪ লাখ ৬০ হাজার ১১৭ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত তাবিথ আউয়াল বাস প্রতীকে পেয়েছেন ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮০ ভোট।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১০৯৩টি। অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও কোনো কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়নি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকন।

৮৮৯টির মধ্যে ৮৮৬ কেন্দ্রের ঘোষিত ফলে ইলিশ প্রতীকের সাঈদ খোকন পেয়েছেন ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২৯৬ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মির্জা আব্বাস মগ প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৯১ ভোট।

গোলযোগের কারণে তিনটিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত হলেও ওই সব কেন্দ্রের ভোটের যোগফল দুই প্রার্থীর ব্যবধানের চেয়ে কম হওয়ায় রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাঈদ খোকনকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে মাহী বি চৌধুরী (ঈগল) ১৩৪০৭, জোনায়েদ সাকি (টেলিস্কোপ) ৭৩৭০, কাফি রতন (হাতি ) ২৪৭৫, বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল (চরকা) ২৯৫০, নাদের চৌধুরী (ময়ূর) ১৪১২, এ ওয়াই এম কামরুল ইসলাম (ক্রিকেট ব্যাট) ১২১৬, কাজী মো. শহীদুল্লাহ (ইলিশ) ২৯৬৮, শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ (কমলা লেবু) ১৮০৫০, শামছুল আলম চৌধুরী (চিতাবাঘ) ৯৮২, মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ (ফ্লাক্স) ১০৯৫, চৌধুরী ইরাদ আহম্মদ সিদ্দিকী (লাউ) ৯১৫, মো. আনিসুজ্জামান খোকন (ডিশ এন্টেনা) ৯০০, মো. জামান ভূঞা (টেবিল) ১১৪০ ও শেখ শহিদুজ্জামান (দিয়াশলাই) ৯২৩ ভোট পেয়েছেন।

ঢাকা দক্ষিণের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে আব্দুর রহমান ফ্লাস্ক প্রতীকে ১৪,৭৮৪ ভোট, সোফা প্রতীকে জাতীয় পার্টির সাইফুদ্দিন মিলন ৪৫১৯ ভোট, চরকা প্রতীকে আবু নাছের মোহাম্মদ মাসুদ হোসাইন ২,১৯৭ ভোট, টেবিল ঘড়ি প্রতীকে রেজাউল করিম চৌধুরী ২,১৭৩ ভোট, জাহাজ প্রতীকে শাহীন খান ২,০৭৪ ভোট, আংটি প্রতীকে গোলাম মওলা রনি ১,৮৮৭ ভোট, বাস প্রতীকে শহীদুল ইসলাম ১,২৩৯ ভোট ও টেবিল প্রতীকে সিপিবি-বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ ১,০২৯ ভোট পেয়েছেন।

ল্যাপটপ প্রতীকে জাহিদুর রহমান ৯৮৮ ভোট, কমলা লেবু প্রতীকে বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপন ৯২৮ ভোট, ক্রিকেট ব্যাট প্রতীকে এ এস এম আকরাম ৬৮২ ভোট, হাতি প্রতীকে দিলীপ ভদ্র ৬৬৯ ভোট, কেক প্রতীকে আব্দুল খালেক ৫৫০ ভোট, ময়ূর প্রতীকে শফিউল্লাহ চৌধুরী ৫১২ ভোট, চিতা বাঘ প্রতীকে মশিউর রহমান ৫০৮, লাউ প্রতীকে মো. আকতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ ৩৬২ ভোট, ঈগল প্রতীকে আয়ুব হোসেন ৩৫৪ ভোট এবং শার্ট প্রতীকে বাহরানে সুলতান বাহার ৩১৩ ভোট পেয়েছেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে অন্য প্রার্থীদের মধ্যে ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন চরকা প্রতীকে ১১,৬৫৫ ভোট, ওয়ায়েজ হোসেন ভুঁইয়া টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ৯,৬৬৮ ভোট, জাতীয় পার্টি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ ডিশ অ্যান্টেনা প্রতীকে ৬,১৩১ ভোট, ইসলামিক ফ্রন্টের হোসাইন মোহাম্মদ মুজিবুল হক শুক্কুর ময়ূর প্রতীকে  ৪,২১৫ ভোট, সাইফুদ্দিন আহমেদ রবি ফ্লাক্স প্রতীকে  ২,৬৬১ ভোট,  গাজী মো. আলাউদ্দিন টেলিস্কোপ প্রতীকে ২,১৪৯ ভোট, বিএনএফের ‍আরিফ মঈনুদ্দিন বাস প্রতীকে  ১,৭৭৪ ভোট,  আবুল কালাম আজাদ দিয়াশলাই প্রতীকে ১,৩৮৫ ভোট,  সৈয়দ সাজ্জাদ জোহা ক্রিকেট ব্যাট প্রতীকে ৮৪৫ ভোট এবং  শফিউল আলম ইলিশ মাছ প্রতীকে ৬৮০ ভোট পেয়েছেন।