বয়স ৭৫ হলেও দুপুর ১২টার তীব্র রোদ তাকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি । মোহাম্মদপুর থেকে নাতনি রানির সঙ্গে নিজের ভোটটি দিতে চলে আসেন তিনি।
কিন্তু লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে এক সময় কাহিল হয়ে যান এই বৃদ্ধা। অনুযোগের সুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, “পেছন থেকে এসে লাইনে ঢুকে যায়। আমি দাঁড়াইতেই পারি না। পা ব্যথা হয়ে যায়।”
দাদির দুরবস্থা দেখে রানি বলেন, “বয়স্কদের জন্য আলাদা লাইনের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হত। বয়স্ক ও অসুস্থদের জন্য উপযোগী কোনো ব্যবস্থাই রাখা হয়নি।”
একই কেন্দ্রে ভোট দিতে এসে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর একসময় লাইনেই বসে পড়তে দেখা যায় বয়োঃবৃদ্ধ জোবাইদা খাতুন ও হালিমা বেগমকে। হালিমা বলেন, “ভোট দিতে আসলাম, কষ্টও করলাম। কেন এত দেরি হইতেছে জানি না। এতক্ষণ রোদে দাঁড়াইতে কষ্ট হয়।”
কল্যাণপুর গার্লস স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রে ষাটোর্ধ্ব মো. কাঞ্চনকে বয়সের ভার নিয়েই ভোট কক্ষ খুঁজে বের করে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে দেখা যায়।
নিজের ভোটটি দিয়ে তিনি বলেন, “কষ্ট তো তো হইছেই। সিঁড়ি ভাঙতে পারি না। তবু উপরে উঠছি। আমার হালাল ভোট আমি ভালো মানুষ দেখে দিতে চাই।”
প্রবীণ ভোটারদের সমস্যার একই চিত্র দেখা যায় তেজগাঁও শিল্প এলাকায় কমিউনিটি সেন্টার উচ্চ বিদ্যালয়েও। শতবর্ষী শরিফুন্নেসা মেয়ে মালেকা বেগমকে ধরে ধরে সিঁড়ি বেয়ে ওঠেন ভোট কক্ষে। ভোট দিয়ে নামার সময় শরিফুন্নেসা বারবার মেয়েকে জিজ্ঞাসা করছিলেন, “আর কতটুকু বাকি?”
শুধু প্রবীণরাই নয়, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও অসুস্থদের ভোট দিতে এসেও পড়তে হয়েছে বিড়ম্বনায়। তাদের জন্য নেই কোনো আলাদা লাইনের ব্যবস্থা। দোতলা, তিন তলায় ভোট কক্ষ রাখা হলেও সহায়ক চলাচল যন্ত্র বা হুইল চেয়ার ব্যবহারকারীদের যাওয়ার কোনো ব্যবস্থাই কেন্দ্রগুলোতে ছিল না।
সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সালমা মাহবুব হুইল চেয়ারে এসে দেখেন, তার ভোট কক্ষ দোতলায়। নিচ তলায় কোনে ব্যবস্থা না থাকলেও পোলিং এজেন্ট এবং প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে বেশ তর্ক করেই একসময় কর্মকর্তার সহায়তায় নিচে ব্যালট পেপারে সিল মারেন তিনি। তবে এসময় কোনো আড়ালের ব্যবস্থা ছিল না।
সালমা বলেন, “যারা স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন না, নির্বাচনের দিন গাড়ি বন্ধ রাখা হলে তারা ভোট দিতে আসবেন কী করে?”
মোহাম্মদপুরের একটি ভোট কেন্দ্রে মো. রাজিউদ্দিনকে হুইল চেয়ার দিয়ে কেন্দ্রের মূল দরজা থেকে ভোট কেন্দ্র পর্যন্ত ঠেলে নিয়ে আসেন তার ভাইয়ের ছেলে সরোয়ার। কিন্তু ভোট দিতে তিন তলা পর্যন্ত তাকে নিয়ে যাওয়া নিয়েও সমস্যা হয়।
“হুইল চেয়ার তোলার জন্য কোনো ব্যবস্থা থাকত, তাহলে এই বিপদে পড়তে হত না,” বলেন সরোয়ার।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন বা সরকারের উচিত আগামী দিনগুলোতে এই সমস্যাগুলো বিবেচনায় আনা।
রাজিউদ্দিন আক্ষেপের সুরে বলেন, “আমাদের ভোটের কি কোনো দাম নাই? আমরা কি ভোট দিব না?”