মনজুরের ভোট বর্জন, রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৮০ শতাংশ কেন্দ্র দখল করে ক্ষমতাসীনদের ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপিসমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনজুর আলম।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2015, 05:56 AM
Updated : 28 April 2015, 01:15 PM

সেইসঙ্গে রাজনীতি থেকেও নিজেকে ‘গুটিয়ে’ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার সকাল ৮টায় চট্টগ্রামের ৭১৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরুর তিন ঘণ্টার মাথায় বেলা সোয়া ১১টায় দেওয়ানহাটে নিজের নির্বাচনী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন চট্টগ্রাম সামাজিক উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থী মনজুর।

তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কারচুপির অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, “৮০ শতাংশ ভোটকেন্দ্র দখল হয়ে গেছে। আমাদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হচ্ছে। আইনশঙ্খলা বাহিনী নীরব ভূমিকা পালন করেছে। ”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের ‘দলীয় সন্ত্রাসী’, নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘একযোগে’ কাজ করেছে।

“এভাবে জনগণের পক্ষে ভোট দেওয়া সম্ভব নয়। এ ধরনের কাজ গত তিন ধরে চলছে।”

মনজুর বলেন, “যেহেতু নির্বাচন হয়েই যাচ্ছে, তাই আমি নির্বাচন বর্জন করলাম এবং নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলাম।”

গত পাঁচ বছর চট্টগ্রামের মেয়রের দায়িত্ব পালনের পর এবারও বিএনপির সমর্থনে প্রার্থী হয়েছিলেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এই উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “এটাই আমার শেষ নির্বাচন, রাজনীতি থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নিলাম।”

এর আগে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে নগরীর উত্তর কাট্টলী হাজী দাউদ আহমদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেন মনজুর আলম।

ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় কেন্দ্র দখল হয়েছে। অনেক জায়গায় এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। নানাভাবে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে আমার এজেন্টরা।”

রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এসব বিষয়ে অভিযোগ করার কথাও বলেন তিনি।

এ নির্বাচনে মেয়র পদে ১২ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে মনজুর আলমের প্রতীক কমলালেবু। আর আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও আ জ ম নাছির উদ্দিন হাতি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন।

আওয়ামী লীগের হয়ে টানা তিনবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১০ সালে বিএনপি’র সমর্থন নিয়ে নিজের ‘রাজনৈতিক গুরু’ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন মনজুর।

তার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল নোমান ও উন্নয়ন আন্দোলনের সদস্য সচিব এফ ইউ এম নুরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

বর্জন আরও দুই প্রার্থীর

ইসলামী ফ্রন্টের মনোনীত মেয়র প্রার্থী এম এ মতিন ও ইসলামী আন্দোলন সমর্থিত ওয়ায়েজ হোসেন ভূঁইয়াও কেন্দ্র দখল ও কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

এম এ মতিনের অভিযোগ, সকালে এনায়েত বাজার মহিলা কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য তাকে কেন্দ্র থেকে ‘বের করে’ দিয়েছন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভোট দিতে গেলে বিপুল নামে এক পুলিশ সদস্য আমাকে বের করে দেয়।”

মতিনের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট স ম আবদুস সামাদ অভিযোগ করেন, বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্টদেরও বের করে দেওয়া হয়েছে। চকবাজার এলাকায় হামলায় তাদের দুইজন এজেন্ট আহত হয়েছেন।

এ ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিনের সমর্থকদের দায়ী করেন তিনি।

ইসলামী আন্দোলন সমর্থিত ওয়ায়েজ হোসেন ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্বাচন কমিশন তাদের কথা রাখেনি। তারা দেখতেও আসেনি।”

সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় তার দুই এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে ওয়ায়েজ ভূঁইয়া বলেন, “যেভাবে কেন্দ্র দখল করা হচ্ছে, তাতে নির্বাচন বর্জন ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।”

ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন চরকা এবং ইসলামী আন্দোলনের ওয়ায়েজ হোসেন ভূঁইয়া টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।