মঙ্গলবার সকালে ভোট শুরুর পর ঢাকা উত্তরের তিনটি, দক্ষিণের দুটি এবং চট্টগ্রামের অন্তত একটি কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের কোনো এজেন্ট পাওয়া যায়নি।
ঢাকা দক্ষিণে ৩৫টি কেন্দ্রে মির্জা আব্বাসের পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস অভিযোগ করেছেন। কেন্দ্রগুলোর একটি তালিকাও সংবাদ মাধ্যমে পাঠিয়েছেন তিনি।
কয়েকটি মামলা মাথায় নিয়ে ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে লড়াইয়ে থাকা মির্জা আব্বাসকে প্রকাশ্যে ভোট চাইতে দেখা যায়নি, পুরোটা সময়জুড়ে স্বামীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন আফরোজা আব্বাস।
তিনি বলেছেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা মির্জা আব্বাসের এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দিচ্ছেন।
এজেন্টদের মারধর এবং কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ঢাকা উত্তরে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিল আউয়াল।
কেন্দ্রের বাইরে এক এজেন্টের ছেঁড়া ব্যাজ দেখিয়ে সাংবাদিকদের তাবিথ বলেন, “আমাদের এজেন্টের ব্যাজ ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এটা দেখে বোঝা যাচ্ছে অবশ্যই জোরাজুরি করা হয়েছে।
“আমাদের এজেন্টদের কেন্দ্রের নিচ থেকেই বের করে দেওয়া হয়েছে। ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। নিরাপত্তা একেবারে নেই। এভাবে ভোট দেওয়ার পরিবেশ একেবারে নেই।”
ওই কেন্দ্রের চারটি বুথে তাবিথের মাত্র একজন এজেন্ট দেখা গেছে।
তাবিথের অভিযোগের বিষয়ে প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল আলীম বলেন, “তাদের মাত্র একজন এজেন্ট দেখেছি। ওই প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নেব।”
পুরান ঢাকার সরকারি কবি নজরুল কলেজ কেন্দ্রের মহিলা ভোটকক্ষে মির্জা আব্বাসের এজেন্ট থাকলেও পুরুষদের ভোটকক্ষে কাউকে দেখা যায়নি।
ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারের কক্ষে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে ভিতরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের প্রতীক ‘ইলিশ মাছ’ এ সিল মারা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঢাকা উত্তরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রূপনগর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে সকাল সোয়া ৮টা পর্যন্ত তাবিথ আউয়ালের কোনো এজেন্ট আসেননি বলে প্রিজাইডিং অফিসার জামাল আবু নাসের জানান।
সকাল পৌনে ৯টা পর্যন্ত রূপনগর আবাসিক এলাকার ২২ নম্বর সড়কে আইডিয়াল ক্যাডেট মাদ্রাসা কেন্দ্রেও তাবিথের পোলিং এজেন্টরা আসেননি বলে সেখানকার প্রিজাইডিং অফিসার মাকসুদুল হাসান জানান।
এর পাশেই ‘কামাল মজুমদার স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ কেন্দ্রেও সকালে তাবিথের কোনো এজেন্ট আসেননি বলে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কবীরুজ্জামান জানিয়েছেন।
দুই কেন্দ্রেই যথাসময়ে ভোট শুরু হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ভাগলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ইয়াসিন আলী বলেন, সুষ্ঠুভাবে যথাসময়ে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। তবে মির্জা আব্বাসের কোনো এজেন্ট কেন্দ্রে আসেননি।
এই কেন্দ্রে ১৯২১ জন ভোটার রয়েছে।
আর সালেহা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার আছেন ২০৪৫ জন।
সকালে এই কেন্দ্রে মেয়র পার্থী মির্জা আব্বাসের কোনো এজেন্ট আসেনি বলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মহসিন হোসেন, সৈয়দা রেহানা আক্কার ও কুমার মানিক চাঁদ জানিয়েছেন।
সকাল ৯টার দিকে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাসির উদ্দিন। এ কেন্দ্রের ছয়টি বুথের মধ্যে তিনটিতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনজুর আলমের কোনো এজেন্টকে দেখা যায়নি।
বাকি তিন বুথে এজেন্ট থাকলেও তারা গলায় কোনো কার্ড ঝুলাননি।
এদিকে শাহজাহানপুরের ‘মির্জা আব্বাস মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে’ গণমাধ্যম কর্মীদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ওই কেন্দ্রে অন্তত ১০টি টিভি চ্যানেল ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
একজন সাংবাদিককে দায়িত্বরত এসআই মানিক চন্দ্র সূত্রধর বলেন, “মাত্র ৫ মিনিটের জন্য কেন্দ্রে যেতে পারেন। কোনো ক্যামেরা এলাউ না। কারো সঙ্গে কথাও বলবেন না। শুধু দেখে চলে আসবেন।”
এদিকে সকালে ভোটের শুরুতে সিটি কলেজ কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানকালে বেশ কিছুক্ষণ ভোটারদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক সাজিদুল হক সকাল ৮টা ৫ মিনিটে কেন্দ্রে সিটি কলেজ কেন্দ্রের সামনের রাস্তায় অনেক ভোটারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন।
সাংবাদিক পরিচয়ে ঢুকতে চাইলে তাকে ১০ মিনিট পরে ঢুকতে বলা হয় বলে সাজু জানান।