ভূমিকম্পে ১৮ জেলায় ক্ষতি

বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকায় শনিবার ভূকম্পন অনুভূত হলেও ১৮ জেলায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2015, 04:31 PM
Updated : 26 April 2015, 06:14 PM

এর মধ্যে চার জেলায় চারজন মারা গেছেন। গার্মেন্টসহ ১৭টি বহুতল ভবন হেলে পড়েছে, নয়তো ফাটল দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হুড়োহুড়িসহ বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন অন্তত দুইশ মানুষ।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ‘দুর্যোগ সাড়াদান কেন্দ্র’ রোববার সচিবালয়ে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক এই তথ্য তুলে ধরে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও সচিব মো. শাহ কামাল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

শনিবার দুপুরে নেপালের শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পে ভারত ও বাংলাদেশের বিস্তির্ণ এলাকা কেঁপে ওঠে। উৎপত্তিস্থলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। 

ভূমিকম্পে কেবল নেপালেই দুই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে বহু ঘরবাড়ি।

রোববারও নেপালে কযেক দফা পরাঘাত অনুভূত হয়েছে, যার মধ্যে ৬.৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আনুভূত হয়েছে বাংলাদেশেও।  

ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মায়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমাদের চোখ-কান খোলা রাখতে হবে।”

ত্রাণ সচিব জানান, শনিবারের ভূমিকম্পে পুরান ঢাকায় একটি ছয়তলা স্টাফ কোয়ার্টার দেবে গেছে। নারায়ণগঞ্জে একটি পোশাক কারখানা এবং মিরপুরে একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবগুলো ভবনই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ফাটল ধরা ও হেলেপড়া ভবনগুলো পরিদর্শন করে প্রকৌশলীরা পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন বলে শাহ কামাল জানান।

নেপালে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১৫৯ কোটি টাকার সহায়তা পাঠানো হচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, “আগামী মাসের মধ্যে ৬৯ কোটি টাকার ইক্যুইপমেন্ট পৌঁছে যাবে। এর মধ্যে মেডিকেল টিমসহ অন্যান্য সামগ্রী রয়েছে।”

দুর্যোগ সাড়াদান কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার লালবাগে ২১/২৫ এরশাদ কলোনীর পাঁচতলা ভবনের কিছু অংশ দেবে যাওয়ার ওই ভবনের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

নবাবপুর পুলিশ বক্সের কাছে ছয়তলা একটি ভবন হেলে পড়েছে এবং গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে পাঁচতলা ‘আলাউদ্দিন ভবনে’ ফাটল ধরেছে।

বারিধারায় হেলে পড়েছে ‘হোটেল সারিনা’। মিরপুর-১ এ ‘ডায়মন্ড গার্মেন্ট’ সামান্য হেলে পড়েছে।

ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে ঢাকা মেডিকেলের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা গেছেন জাহেদা বেগম (২২) নামের এক তরুণী। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে হুড়োহুড়িতে নামতে গিয়ে দেয়ালে মাথা ঠুকে গিয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

পাবনা সদরের এক স্কুল শিক্ষক ভূমিকম্পের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দুপচাপিয়ায় দেয়ালচাপা পড়ে নিহত হয়েছেন ৫৫ বছর বয়সী এক নারী।

সাভারের আল মুসলিম গার্মেন্টে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে ৬০-৭০ জন, মিশন গ্রুপের একটি গার্মেন্টে ১০-১২ জন এবং কুমিল্লার ইপিজেড এলাকায় ‘কার্ডেনা’ গার্মেন্টে ৪০-৫০ জন আহত হয়েছেন।

ঢাকার বাইরে কেরানীগঞ্জে হাজি ইয়াকুব আলীর সাততলা ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটিতে হেলে পেড়েছে ‘আরবিআর-বি ফ্যাশন’ ভবন। নারায়ণগঞ্জ থানার পাশে ১০ তলা ‘রিভারভিউ’ ভবনও হেলে গেছে।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুরে ‘বিদিশা গার্মেন্ট’ ভবন হেলে পড়েছে। ফেনী সদরে ১০ তলা ‘শাহ আলম টাওয়ারে’ ফাটল দেখা দেওয়ায় ‘সিলগালা’ করা হয়েছে। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি স্কুল।

মন্ত্রণালয়ের ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন বলছে, বাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্চারামপুর উপজেলার বিন্দুবন হাইস্কুলে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়েও কয়েকজন আহত হয়েছেন।

সিলেটের নবীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উত্তর-দক্ষিণ পাশে একটি ভবন ফেটে গেছে। গাইবান্ধা সদর উপজেলার একটি স্কুলের ছাদের প্লাস্টার খুলে পড়েছে।

এছাড়া রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার একটি পরিত্যক্ত প্রাইমারি স্কুল হেলে পড়েছে। রাজশাহী শহরের মহিলা কলেজ ভবন-২ হেলে পড়া ছাড়াও মণ্ডুমালা প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।

দিনাজপুরে কয়েকটি ভবনেও ফাটল দেখা দিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, নওগাঁ জেলা সদরে দুটি ভবন হেলে পড়েছে। সদর ও রাণীনগর উপজেলার একটি করে স্কুল ভবন হেলে পড়েছে।