চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন: সোয়া লাখ নতুন ভোটারই ‘ফ্যাক্টর’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে এবার ভোটার বেড়েছে প্রায় সোয়া এক লাখ, যাদের অধিকাংশই তরুণ।

মিন্টু চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2015, 04:21 PM
Updated : 27 April 2015, 08:06 AM

মঙ্গলবারের নির্বাচনে এই সোয়া লাখ ভোটারই জয়-পরাজয়ে ‘ফ্যাক্টর’ হবেন বলে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

গেল বারে অর্থাৎ ২০১০ সালের ১৭ জুনের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মনজুর আলম আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ৯৫ হাজার ৫২৮ ভোটের ব্যবধানে হারান।

সে হিসেবে এবারও ঘুরেফিরে সোয়া এক লাখ ‘তরুণ’ ভোটারই মেয়র নির্বাচনের জয়-পরাজয়ে বড় ভূমিকা রাখবেন বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।  

আর নতুন ভোটারদের আকৃষ্ট করতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা নানা উদ্যোগও নিয়েছেন। 

গত বারের নির্বাচনের পর ২০১২ ও ২০১৪ সালে দুদফা ভোটার তালিকা হালনাগাদ হয়। এরপর চট্টগ্রাম নগরে এবারে ভোটার হয়েছে ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৯ জন।

২০১০ সালে নগরের ভোটার ছিল ১৬ লাখ ৮৮ হাজার ৬৭৬ জন। হালনাগাদে ভোটার বেড়েছে মোট এক লাখ ২৪ হাজার ৭৭৩ জন।

২০০৫ সালের সিটি নির্বাচনে বন্দরনগরীর ভোটার সংখ্যা ছিল প্রায় ১১ লাখ ৩৮ হাজার। 

চট্টগ্রামের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শফিকুর রহমান বলেন, দুই মেয়াদে হালনাগাদ হওয়ার পর যারা ভোটার হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই নতুন ভোটার এবং তাদের বয়স ১৯ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।

এর বাইরে স্থানান্তর ও মৃত্যুজনিত কারণে কিছু ভোটার যুক্ত ও বিযুক্ত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, যারা গত পাঁচ বছরে নতুন ভোটার হয়েছেন তাদের অধিকাংশই শিক্ষিত এবং সমাজ-রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন।

“তরুণরা সৎ, যোগ্য, আধুনিকমনস্ক এবং প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা প্রার্থীকেই প্রাধান্য দেবেন। নগর ভবন পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যক্তির যোগ্যতাও বিবেচনা করবেন তরুণরা।”

শুধু মেয়রপ্রার্থী নন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর ক্ষেত্রেও তারা একই বিবেচনা করবে বলেও মনে করেন তিনি।

দেলোয়ার মজুমদারের মতে, এসব ভোটাররাই মেয়র পদে জয়-পরাজয়ে ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন।

এবারে সিটি নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আজিজ আহমেদ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যেই ব্যক্তি ভালো, চিন্তায় আধুনিক এবং জনগণের সমস্যাকে প্রাধান্য দেবেন তাকেই এবারে ভোট দেব।

নতুন আরেক ভোটার শারমিন আহমেদ বলেন, প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, সততা এবং নগরীর উন্নয়নে তার কমিটমেন্টকে প্রাধান্য দেব।

তরুণ ভোটারদের চিন্তাকে গুরুত্ব দিয়ে চট্টগ্রাম সিটির নির্বাচনে প্রধান দুই মেয়রপ্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন ও মনজুর আলম তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং সেখানে আধুনিক ইন্টারনেট সুবিধাসম্বলিত ওয়াই-ফাই জোন করার কথা বলেছেন।

দুই প্রার্থীর নির্বাচনী ইশতেহারে ‘আধুনিক ও উন্নত’ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজে ওয়ান স্টপ সার্ভিস, ই-গর্ভনেন্স, অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া নগরীর বেশকয়েকজন কাউন্সিলরপ্রার্থীও তাদের ইশতেহারে গুরুত্ব সহকারে আধুনিক এলাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট সুবিধা চালু করেছেন।

অধিকাংশ প্রার্থী তাদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড নিয়ে পৃথক ওয়েবসাইটও খুলেছেন। এছাড়া প্রার্থীরা মোবাইল ফোন থেকে তাদের পক্ষে ভোট চেয়ে এসএমএসও দিচ্ছেন।

সর্বশেষ সিটি নির্বাচন অর্থাৎ ২০১০ সালের ১৭ জুনের নির্বাচনে ১৬ লাখ ৯৪ হাজার ভোটারের মধ্যে আট লাখ ৮৫ হাজার ৬৪ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন।

বিএনপিসমর্থিত প্রার্থী মনজুর আলম চার লাখ ৭৯ হাজার ১৪৫ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী পেয়েছিলেন তিন লাখ ৮৩ হাজার ৬১৭ ভোট।