পঞ্চম বার লড়াইয়ে চট্টগ্রামের তিন কাউন্সিলরপ্রার্থী

টানা পঞ্চমবারের মতো কাউন্সিলর হতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের লড়াইয়ে নেমেছেন তিন প্রার্থী।

উত্তম সেন গুপ্ত চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2015, 12:35 PM
Updated : 23 April 2015, 12:35 PM

নাগরিক জনপ্রতিনিধি হিসাবে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, নিজেদের ‘পরিচ্ছন্ন’ ইমেজ আর পারিবারিক ঐতিহ্যে ভর করে এবারও তারা মানুষের রায় পাবেন বলে আশা করছেন।  

সিটি নির্বাচনের তিন পুরনো যোদ্ধার মধ্যে দুজন আওয়ামী লীগসমর্থিত- ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু, ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ডের জহিরুল আলম দোভাষ ওরফে ডলফিন। অন্যজন ২২ নম্বর এনায়েত বাজার ওয়ার্ডের বিএনপিসমর্থিত প্রার্থী আব্দুল মালেক।

এবারের নির্বাচনে মিন্টু ও জহিরুল ‘ঘুড়ি’ এবং মালেক ‘মিষ্টি কুমড়া’ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।

১৮৬৩ সালে গঠিত চট্টগ্রাম পৌরসভা ১৯৮২ সালে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে এবং ১৯৯০ সালে সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তর হয়। চার বছর পর ১৯৯৪ সালে হয় প্রথম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন।

এরপর ২০০০, ২০০৫ ও ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত হয় আরও তিনটি সিটি নির্বাচন। আগামী ২৮ এপ্রিল হতে যাচ্ছে পঞ্চম নির্বাচন।

১৯৭৭ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে চট্টগ্রাম পৌর কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন গোলাম সাইয়েদ মিন্টু। সেই থেকে টানা ২০১৫ পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সব মানুষ চায় ভালো সম্পর্ক। সবাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তাদের পাশে পেতে চায়। এই কাজটাই করছি আমি।”

এলাকার সব কাজে তাকে পাওয়া যায় বলেই মানুষ তাকে বারবার নির্বাচিত করে বলে দাবি তার।

চট্টগ্রামে জামায়াত-বিএনপি অধ্যুষিত হিসেবে পরিচিত চকবাজার ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে তিনি বলেন, “সবসময় দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করেছি। এবারও আমি দলীয় মানসিকতার বাইরে সব মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছি। তাদের কাছ থেকে ভোট চাইছি।”

সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু

প্রতিবারের মতো এবারের নির্বাচনেও ব্যানার পোস্টারের চেয়ে লিফলেটের ওপর বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন।

জলাবদ্ধতা এবং পরিচ্ছন্নতা চকবাজার এলাকার প্রধান সমস্যা হলেও তা নিরসনের কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি এলাকাবাসীকে।

মিন্টু বলেন, “এককভাবে কোনো ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয়, এটি চট্টগ্রামের সামগ্রিক সমস্যা। এর জন্য জনগণের সচেতনতার পাশাপাশি বন্দর, ওয়াসা, পিডিবিকে এগিয়ে আসতে হবে।”

নগরের জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মিন্টুর মনে ক্ষোভও আছে কিছু। কাউন্সিলরদের কথা মেয়ররা শোনেন না বলেও অনুযোগ তার।

“যে পদ্ধতিতে এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো দরকার সেভাবে হচ্ছে না। নগরীর পরিচ্ছন্নতা অভিযানে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করার পরও তা সঠিক ভাবে হচ্ছে না।”

জহিরুল আলম দোভাষ

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দোভাষ পরিবারের সন্তান এম জহিরুল আলম দোভাষের বাবা জানে আলম দোভাষ ছিলেন পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রাম পৌরসভার চেয়ারম্যান। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সাংসদও হন তিনি।

মিন্টুর মতো জহিরুলও ভোটারদের নতুন কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি, তারপরও আত্মবিশ্বাসী জয়ের ব্যাপারে।  

ফিরিঙ্গী বাজার এলাকা সব সময় পরিচ্ছন্ন থাকে এবং তার ওয়ার্ডে কখনও জলাবদ্ধতা হয় না বলে দাবি জহিরুলের।

পঞ্চমবার কাউন্সিলর প্রার্থী হয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে স্বাভাবিকভাবে কাজ করে গেছি। কখনও মিথ্যা আশ্বাস দিইনি এলাকাবাসীকে।”

২২ নম্বর এনায়েত বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলরপ্রার্থী আব্দুল মালেকের একটি অন্যতম পরিচয় হচ্ছে তিনি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলী খেলার প্রধান বিচারক।

এম এ মালেক

১৯৮৮ সাল থেকে টানা ২৮ বছর ধরে এই দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।

নিজেকে ‘জনগণের কাউন্সিলর’ হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করা মালেক জানালেন, কাউন্সিলর হিসাবে দায়িত্ব পালনের সময় এলাকার উন্নয়নে কখনো সিটি করপোরেশনের বরাদ্দের অপেক্ষায় থাকেননি।   

“এলাকাবাসী আমাকে ভালোবেসে ভোট দেন। দলীয় কার্যক্রমের চেয়ে জনগণের জন্য কাজ করাকে বেশি প্রাধান্য দেই।”

মানুষের ভালোবাসাই তাকে আবারো তাকে সেবা করার সুযোগ করে দেবে, বিশ্বাস তার।